ব্যাকরণ-
ব্যাকরণ (= বি + আ + √কৃ + অন) শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। সংজ্ঞা : যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও সেসবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজ হয় বাংলা ব্যাকরণ : যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়, তাই বাংলা ব্যাকরণ । বাংলা ব্যাকরণে আলোচ্য বিষয প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক অংশ থাকে। যেমন—
১. ধ্বনি (Sound)
২. শব্দ (Word )
৩. বাক্য (Sentence )
৪. অর্থ (Meaning)
সব ভাষার ব্যাকরণেই প্রধানত নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়
১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব ((Morphology)
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) এবং
৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics)
এ ছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography) ছন্দ ও অলংকার প্রভৃতিও ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় ।
ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ব্যাকরণ বলতে সাধারণত ভাষার কাঠামোর, বিশেষ করে শব্দ ও বাক্যের কাঠামোর, গবেষণাকে বোঝায়। এ অর্থে ব্যাকরণ হল কোন ভাষার রূপমূলতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের আলোচনা। কখনও কখনও আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে ব্যাকরণ পরিভাষাটি দিয়ে কোন ভাষার কাঠামোর সমস্ত নিয়মকানুনের বর্ণনাকে বোঝানো হয়, এবং এই ব্যাপকতর সংজ্ঞার ভেতরে ঐ ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব ও প্রয়োগতত্ত্বের আলোচনাও চলে আসে।
উপরে দেওয়া ব্যাকরণের সংজ্ঞাগুলি মূলত উচ্চতর ভাষাবিজ্ঞানী মহলে প্রচলিত এবং এ ধরনের ব্যাকরণকে বর্ণনামূলক ব্যাকরণও বলা হয়। অন্যদিকে স্কুল কলেজে পাঠ্য ব্যাকরণগুলিতে ভাষার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক বর্ণনা থাকে না, বরং এগুলিতে সাধারণত মান ভাষার কাঠামোর কিছু বিবরণের পাশাপাশি আদর্শ বা মান ভাষাতে লেখার বিভিন্ন উপদেশমূলক নিয়ম বিধিবদ্ধ করে দেওয়া থাকে। এগুলিকে বলা হয় বিধানবাদী ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হলো "বিশ্লেষণ" (বি + আ + ক্রি + অন) বিশেষ এবং সম্যকরূপে বিশ্লেষণ। ভাষার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে নানান সাহিত্যিক নানান মতামত লক্ষ্য করা যায় তবে যে সমস্ত মতামতগুলি গ্রহণযোগ্য তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, যে শাস্ত্রে কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ আকৃতি ও প্রয়োগের নীতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সেই শাস্ত্র কে বলে সেই ভাষার ব্যাকরণ।
প্রথম বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয় ১৭৪৩ সালে পর্তুগিজ ভাষায়। এর লেখক ছিলেন মানোয়েল দা আসুম্পসাঁও। তাঁর বাংলা-পর্তুগিজ অভিধানের ভূমিকা অংশ হিসেবে তিনি এটি রচনা করেন। এরপর ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয় নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড প্রণীত ইংরেজি ভাষায় রচিত পূর্ণাঙ্গ একটি বাংলা ব্যাকরণ।
Source: Wikipedia
ভাষার সংজ্ঞা ঃ
মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য কণ্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে, ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কণ্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহ্বর, কণ্ঠ, নাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বোঝায়। এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান। এই ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আবার ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রের দ্বারা। গলনালি, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদি বাক্ প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বলে বাগ্যন্ত্র। এই বাগযন্ত্রের দ্বারা উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনির সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকে ভাষা বলে।
বাংলা ভাষাঃ
বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা।বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮.০৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।এছাড়াও মধ্য প্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে।সারা বিশ্বে সব মিলিয়ে ২৭.৬ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করে। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও স্তোত্র বাংলাতে রচিত।
ভাষার ইতিহাস-
মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত বাক্ সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা হয়। অর্থাৎ বাগযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা।
দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে মানুষ আপন মনোভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বস্তু ও ভাবের জন্য বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে। সেসব শব্দ মূলত নিৰ্দিষ্ট পরিবেশে মানুষের বস্তু ও ভাবের প্রতীক (Symbol) মাত্র। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার দেখতে পাই। সে ভাষাও আবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়ে এসেছে। ফলে, এ শতকে মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে ভাষা ব্যবহার করে, হাজার বছর আগেকার মানুষের ভাষা ঠিক এমনটি ছিল না ।
বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বাংলা একটি ভাষা। ভাষাভাষী জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ মাতৃভাষা। বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা বাংলাদেশের ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণ এবং ত্রিপুরা, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে বাংলা ভাষাভাষী জনগণ রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা ৷
বাংলা ভাষার ইতিহাস -
বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে শব্দগত ও উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বাংলার নবজাগরণে ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রন্থনে এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তথা বাংলাদেশ গঠনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।[১৮] ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলা ভাষা প্রধান বা মৌলিক রূপ দুইটি । যথা- লৈখিক রূপ এবং মৌখিক । লেখার রীতি ভাষার মৌলিক রীতি। বাংলা চাষার প্রকারভেদ বা রীতিভেদ নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো যায় - লৈখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) সাধু, ২ ) চলিত
মৌখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) চলিত ২) আঞ্চলিক ( উপভাষা )
ক) সাধু রীতি
সংস্কৃত -ব্যতপত্তি সম্পন্ন মানুষের ভাষাকে " সাধু ভাষা " বলএ প্রথম অভিহিত করেন রাজা রামমোহন রায় ।বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে সাধু রীতির প্রচলন ছিল ।
খ) চলিত রীতি
সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কে " চলিত ভাষা " বলা হয় । চলিত ভাষার আদর্শরুপে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রতিম ভাষা । চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রমিত উচ্চারণ । কলকাতা অঞ্চলের মৌখিক ভাষাকে ভিত্তি করে চলিত ভাষা গড়ে উঠেছে । উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে ভাবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যয়ের হাতে চলিত রীতির প্রথম ব্যবহার হয় । তারপর প্যারীচাঁদ মিত্র ও কালী প্রসন্ন সিংহের রচনায় এর ক্রমবিকাশ ঘটে । আলালের ভাষা ছিল মূলত সাধু ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেবল কিছু বর্ণ্না এবং কোনো কোনো সংলাপ চলিত রীতির ; অপরপক্ষে, হুতোম লেখা হয়েছিল পুরোপুরি চলিত রীতিতে । প্রম্থ চৌধুরীর "সবুজপত্র "কে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালের দিকে এ গদ্যরীতির সাহিত্যিক স্বীকৃতি ও পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। প্রম্থ চৌধুরী "বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক " বলা হয় । তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করেন ।
প্রমিত চলিত ভাষারীতি:
দেশের সকল মানুষ যে আদর্শ ভাষারীতিতে কথা বলে, যেই ভাষারীতি সকলে বোঝে, এবং যে ভাষায় সকলে শিল্প-সাহিত্য রচনা ও শিক্ষা ও অন্যান্য কাজকর্ম সম্পাদন করে, সেটিই প্রমিত চলিত ভাষারীতি। এই ভাষায় যেমন সাহিত্য সাধনা বা লেখালেখি করা যায়, তেমনি কথা বলার জন্যও এই ভাষা ব্যবহার করা হয়। সকলে বোঝে বলে বিশেষ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন কোনো অনুষ্ঠানে বা অপরিচিত জায়গায় বা আনুষ্ঠানিক (formal) আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্রে এই ভাষারীতি ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ, এই রীতি লেখ্য ও কথ্য উভয় রীতিতেই ব্যবহৃত হয়।
বাংলা প্রমিত চলিত ভাষারীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাগীরথী- তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষার উপর ভিত্তি করে। তবে, পূর্বে এই ভাষা সাহিত্যের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তখন কেবল সাধু ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করা হতো। এ কারণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকের ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ছোটগল্পকাররা সাধু ভাষায় উপন্যাস, নাটক ও গল্প লিখেছেন। পরবর্তীতে, প্রমথ চৌধুরী চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনার উপর ব্যাপক জোর দেন এবং তাঁর ‘সবুজপত্র’ (১৯১৪) পত্রিকার মাধ্যমে চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
সাধু রীতি:
পূর্বে সাহিত্য রচনা ও লেখালেখির জন্য তৎসম শব্দবহুল, দীর্ঘ সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ সম্পন্ন যে গুরুগম্ভীর ভাষারীতি ব্যবহৃত হতো, তাকেই সাধু ভাষা বলে। এই ভাষা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর, দুরূহ এবং এতে দীর্ঘ পদ ব্যবহৃত হয় বলে এই ভাষা কথা বলার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক না। তাই এই ভাষায় কথাও বলা হয় না। এই ভাষা কেবল লেখ্য রীতিতে ব্যবহারযোগ্য। তাও বহু আগেই লেখ্য রীতি হিসেবে চলিত রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় সাধু রীতি এখন লেখ্য ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় না। কেবল সরকারি দলিল-দস্তাবেজ লেখা ও অন্যান্য কিছু দাপ্তরিক কাজে এখনো এই রীতি ব্যবহৃত হয়।
৩ টি
২টি
৪ টি
৫ টি
দেশ-কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ঘটে । অঞ্চল বিশেষের মানুষের মুখের ভাষাকে উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা বলে ।
- মেগো" শব্দের আঞ্চলিক রূপের শিষ্ট পদ্যরূপ"মোদের " ।
আঞ্চলিক কথ্য রীতি:
বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের মধ্যে যে বাংলা ভাষায় কথা বলে, তাকেই আঞ্চলিক কথ্য রীতি বা আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা বলে। সকল ভাষাতেই আঞ্চলিক ভাষা থাকে। এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষায় অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলো কোনোভাবেই বিকৃত ভাষা নয়, এগুলো শুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় আঞ্চলিক ভাষারীতি।
প্রকৃতঅর্থে, প্রমিত চলিত ভাষারীতিও একটি অঞ্চলের কথ্য রীতির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেবল- ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের কথ্য ভাষাকে তখন প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অন্যগুলোকে প্রমিত ভাষারীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
তবে আঞ্চলিক কথ্য রীতি লেখ্য ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সকল অঞ্চলের মানুষ কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা বুঝবে না। তবে কোনো অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কোনো সাহিত্য রচিত হলে সেখানে আঞ্চলিক ভাষা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। সম্পূর্ণ বা পুরোটুকুই আঞ্চলিক ভাষায় রচিত একটি শিল্পসম্মত উপন্যাস হলো হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি”।
সাধু রীতি |
চলিত রীতি |
পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট | পরিবর্তনশীল । |
গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের পরিচায়ক | সংক্ষিপ্ত , সহজবোধ্য ও কৃত্রিমতা বর্জিত । |
তৎসম শব্দ বহুল । | তদ্ভব শব্দবহুল । |
শুধু লৈখিক রূপ আছে | লৈখিক ও মৌখিক উভয় রূপ আছে। |
নাটকের সংলাপ , বক্তৃতা এবং আলাপ - আলোচনার অনুপযোগী । | নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা এবং আলাপ-আলোচনার উপযোগী । |
সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে । ক্রিয়া, সর্বনাম ওয়নুসর্গের পূর্ণ্রুপ ব্যবহ্নত হয় । | সর্ব ও ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত ও সহজতর রূপ লাভ করে । ক্রিয়া ,সর্বনাম ও অনুসর্গের রূপ সংক্ষিপ্ত । |
ব্যাকরণ-
ব্যাকরণ (= বি + আ + √কৃ + অন) শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। সংজ্ঞা : যে শাস্ত্রে কোনো ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা: ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন প্রকৃতি ও সেসবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়োগের সময় শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ধারণ সহজ হয় বাংলা ব্যাকরণ : যে শাস্ত্রে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠনপ্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষিত হয় এবং এদের সম্পর্ক ও সুষ্ঠু প্রয়োগবিধি আলোচিত হয়, তাই বাংলা ব্যাকরণ । বাংলা ব্যাকরণে আলোচ্য বিষয প্রত্যেক ভাষারই চারটি মৌলিক অংশ থাকে। যেমন—
১. ধ্বনি (Sound)
২. শব্দ (Word )
৩. বাক্য (Sentence )
৪. অর্থ (Meaning)
সব ভাষার ব্যাকরণেই প্রধানত নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়
১. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব ((Morphology)
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম (Syntax) এবং
৪. অর্থতত্ত্ব (Semantics)
এ ছাড়া অভিধানতত্ত্ব (Lexicography) ছন্দ ও অলংকার প্রভৃতিও ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয় ।
ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলায় অভিধান শব্দের অর্থ শব্দার্থ। একে ইংরেজিতে বলে ডিকশনারি (Dictionary), যার অর্থ গৃহীত। মূলত অভিধান বা শব্দকোষ এক ধরনের বই, যাতে একটি নির্দিষ্ট ভাষার শব্দগুলোর অর্থ, উচ্চারণ, ব্যুৎপত্তি, ব্যবহার ইত্যাদি বর্ণিত, ব্যাখ্যায়িত ও শব্দগুলো বর্ণানুক্রমে তালিকাভুক্ত থাকে।
অভিধান বিভিন্ন রকমের হয়। কোনো অভিধানে শব্দের এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ থাকে, কোনো অভিধানে কোন শব্দ কিভাবে ব্যবহার হবে সেটির বর্ণনা থাকে। আবার জীবনীর অভিধানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীর সংকলন থাকে, প্রযুক্তি সম্পর্কিত অভিধানে প্রযুক্তির সুনির্দিষ্ট বিভাগ সম্পর্কিত শব্দগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা থাকে।
১২২৫ সালে লাতিন ভাষায় বিশ্বে প্রথম অভিধান লেখা হয়। এর সংকলক ছিলেন জন গারল্যান্ড। ইংরেজি ভাষায় প্রথম ইংরেজি অভিধান রচিত হয় ১৫৫২ সালে, যার সংকলক ছিলেন রিচার্ড হুলোয়েট। এই অভিধানে শব্দ সংখ্যা ছিল প্রায় ২৬ হাজার। এতে প্রথমে ইংরেজি শব্দের ইংরেজি অর্থ এবং পরে তার লাতিন প্রতিশব্দ ছিল। ১৮১৭ সালে বাংলা ভাষায় বাংলা থেকে বাংলা প্রথম অভিধান সংকলন করেন রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ। তিনি এর নাম দেন বঙ্গ ভাষাভিধান।
বিশ শতকের সূচনা থেকে আধুনিক পদ্ধতির একভাষিক বাংলা-বাংলা অভিধান প্রকাশ পেতে শুরু করে। এক্ষেত্রে ১৯০৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সুবল মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান দীর্ঘকাল ব্যাপী জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সমর্থ হয়।
১৯৫৫ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে অভিধান চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠান একভাষিক, দ্বিভাষিক, বহুভাষিক, বিষয়ভিত্তিক এবং পারিভাষিক নানা ধরনের অভিধান ও শব্দকোষ প্রণয়ন ও প্রকাশ করে আসছে। অভিধান ও শব্দকোষ মিলে ২০০৯ সাল নাগাদ বাংলা একাডেমি প্রায় সত্তরটি অভিধান প্রকাশ করে। তার মধ্যে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ১৯৬৫), সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান (আহমদ শরীফ, ১৯৯২), সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান, দু-খন্ড (আবু ইসহাক, ১৯৯৩ ও ১৯৯৮), বানান অভিধান (জামিল চৌধুরী, ১৯৯৪),মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান (মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, ২০০৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ধ্বনি: ভাষার ক্ষুদ্রতম একক মানুষ যা বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করে থাকে, তারে ধ্বনি বলে।
যেমন- অ, আ, ক, খ, ইত্যাদি।
বর্ণ: ধ্বনির লিখিত রূপ বা সাংকেতিক চিহ্নকে বর্ণ বলে।
যেমন- অ, আ, ক, খ ইত্যাদি।
অক্ষর: প্রশ্বাসের ক্ষুদ্রতম প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনিকে অক্ষর বলে। অর্থাৎ এক ধাক্কার
উচ্চারিত ধ্বনিই অক্ষর।
যেমন- অ, আ, ক, খ, বক, জল, ফল, কাল ইত্যাদি।
শব্দ: অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা বর্ণসমষ্টিকেই শব্দ বলে। অর্থাৎ, একাধিক ধ্বনি বা বর্ণ একরে মিলিত হয়ে কোন নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করলে ঐ ধ্বনি বা বর্ণসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন— বই, খাতা, মানুষ, নদী, পৃথিবী ইত্যাদি ।
পদ: বাক্যে ব্যবহৃত অর্থপূর্ণ এবং বিভক্তিযুক্ত প্রত্যেকটি শব্দকে পদ বলে। অর্থাৎ, শব্দ যখন বিভক্তি সহযোগে বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে পদ বলে।
যেমন— অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে প্রাণ ।
বাগ্যন্ত্র:
মানবদেহের যেসব প্রত্যঙ্গ ধ্বনির উচ্চারণের সঙ্গে যুক্ত সেগুলোকে বাগযন্ত্র বা বাক্প্রত্যক্ষ (speech organ / vocal organ) বলে। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া আর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি এগুলোর সাহায্যে মানুষ কথাবার্তা বলার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করে। বাগ্যন্ত্র বলতে শরীরের উপরিভাগে অবস্থিত মধ্যচ্ছদা থেকে ঠোঁট পর্যন্ত শ্বাসবাহী বিশেষ প্রত্যঙ্গগুলোকে বুঝায়। কিন্তু বাস্তবে এর পরিধি আরো ব্যাপক। কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিক স্নায়ুতন্ত্রও বাগ্ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে।
ভাষার মুল উপাদান হচ্ছে ধ্বনি । মানুষের বাক -প্রত্যঙ্গ অর্থাৎ কণ্ঠনালী, মুখবিরর, জিহ্বা ,আল- জিহ্বা, কোমল তালু, দাঁত মাড়ি, চোয়াল, ঠোঁট, নাক,ফুস্ফুস ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজকে ধ্বনি বলা হয়।
ধ্বনি
রূপ
বর্ণ
কোনটিই নয়
কোনো ভাষার বাক্ প্রবাহকে সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা কতগুলো মৌলিক ধ্বনি (Sound) পাই। বাংলা ভাষাতেও কতগুলো মৌলিক ধ্বনি আছে। বাংলা ভাষার মৌলিক ধ্বনিগুলোকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা হয় : ১. স্বরধ্বনি ও ২. ব্যঞ্জনধ্বনি।
১. স্বরধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি (Vowel sound) । যেমন – অ, আ, ই, উ ইত্যাদি।
২. ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant sound) যেমন- ক, চ, ট, ত, প ইত্যাদি।
বর্ণ : ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বলা হয় বর্ণ (Letter) |
স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় স্বরবর্ণ। যেমন- অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনি দ্যোতক লিখিত সাংকেতিক চিহ্নকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ। যেমন-ক ইত্যাদি। বর্ণমালা : যে কোনো ভাষায় ব্যবহৃত লিখিত বর্ণসমষ্টিকে সেই ভাষার বর্ণমালা (Alphabet) বলা হয়।
বিশেষ জ্ঞাতব্য : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি 'অ' স্বরধ্বনিটি যোগ করে উচ্চারণ করা হয়ে থাকে। যেমন - ক্ + অ = ক, ইত্যাদি। স্বরধ্বনি সংযুক্ত না হলে অর্থাৎ উচ্চারিত ব্যঞ্জনের নিচে ‘হস্' বা 'হল' চিহ্ন (.) দিয়ে লিখিত হয়।
স্বরধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় না, তাদেরকে বলা হয় স্বরধ্বনি (Vowel sound) । স্বরবর্ণ : অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ(১১টি)
হৃস্ব স্বরধ্বনি:
যে স্বরকে উচ্চারণ করতে কম সময় ও কম শ্বাসবায়ু লাগে, তাকে হ্রস্বস্বর বলে।
হৃস্বস্বর কোনগুলি?
অ, ই,উ,ঋ - বাংলা বর্ণমালার এই চারটি স্বর হ্রস্বস্বর।
দীর্ঘ স্বরধ্বনি:
যে স্বরকে উচ্চারণ করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ও বেশি শ্বাসবায়ু লাগে তাকে দীর্ঘস্বর বলে।
দীর্ঘস্বর কোনগুলি?
বাংলা বর্ণমালার আ, ঈ,ঊ, এ, ও – এইগুলি দীর্ঘস্বর।
সুতরাং বোঝা গেল বাংলা বর্ণমালায় যে ১১টি স্বর আছে, তার মধ্যে ৫টি দীর্ঘস্বর, ৪টি হ্রস্বস্বর ও ২টি যৌগিক স্বর। তবে মনে রাখতে হবে, বাংলা ভাষায় দীর্ঘ স্বরের প্রকৃত উচ্চারণ হয় না, সব স্বরই সাধারণ উচ্চারণে হ্রস্বস্বর হিসেবেই উচ্চারিত হয়।
একটিমাত্র মূল স্বরধ্বনিকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। মৌলিক স্বরধ্বনি মোট সাতটি। যেমন : অ, আ, ই, উ, এ, এ্যা, ও। এগুলোকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাগ করা যায় না। বাংলা ভাষায় ‘এ্যা’ ধ্বনিটি থাকলেও তার জন্য কোনো বর্ণ নেই।
যদি পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি দ্রুত উচ্চারণের ফলে একটি যুক্তধ্বনিতে রূপ নেয়, তবে তাকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে। যেমন : অ + ই = ঐ, অ + উ = ঔ। এসব ধ্বনিকে দ্বিস্বর, সন্ধিস্বর বা যৌগিক স্বরও বলা হয়। বাংলা বর্ণমালায় শুধু ঐ এবং ঔ-এ দুটি যৌগিক বর্ণকে মৌলিক বর্ণের মতো স্থান দেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টি। অ + ই = অই (বই)
অ + য় = অয় (হয়, সয়)
আ + ই = আই (খাই, নাই, ভাই)
আ + এ = আয় (গায়, যায়)
এক্ষেত্রে জিহ্বার সামনের দিকটা তালুর দিকে উত্থিত হবে। এই জাতীয় মৌলিক স্বরবর্ণগুলো হলো- ই, এ এবং এ্যা ।
পশ্চাৎভাগস্থ স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়, তাকে পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন- উ, ও, অ৷
কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সব স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি গোলাকার কুঞ্চিত হয়, তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন- অ, উ, ও।
সংবৃত (Close) :
জিহ্বা তালুর কাছাকাছি এনে বায়ু চলাচলের জন্য একটি সঙ্কীর্ণ পথ তৈরি করা হয়। এই অবস্থায় উচ্চারিত ধ্বনিগুলোকে সংবৃত বলা হয়। তালু সংলগ্ন ধ্বনি হিসাবে এদেরকে তালব্য বর্ণ বলা হয়। এক্ষেত্রে ঠোঁট প্রসারিত থাকে। পাশের চিত্রে সংবৃত উচ্চারণে জিহ্বার অবস্থান দেখানো হলো। লক্ষ্য করুন, এখানে ই ধ্বনিটির জন্য জিহ্বার সম্মুখভাগ প্রায় তালু সংলগ্ন হয়েছে এবং উ ধ্বনিটির জন্য জিহ্বার পশ্চাত্ভাগ প্রায় পশ্চাৎ তালুর সংলগ্ন হয়েছে।
বিবৃত (Open) :
এই জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বা ও তালুর ভিতর সব চেয়ে বেশি ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। মুখ প্রসারিত করে এই ফাঁকা জায়গার পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাংলাতে এই জাতীয় স্বরবর্ণটি হলো আ। এক্ষেত্রে জিহ্বা স্বাভাবিকভাবে নিম্ন চোয়াল বরাবর শায়িত থাকবে। দীর্ঘ বা হ্রস্ব আ হিসাবে এর কোন পরিবর্তন ঘটবে না। আরবি ভাষার গলকক্ষ থেকে উচ্চারিত আ ধ্বনিটির ক্ষেত্রেও একই রীতি অনুসৃত হবে। কখনো কখনো জিহ্বার পশ্চাৎ অংশ ভিতরের দিকে সংকুচিত করে আ ধ্বনিটি উচ্চারণ করা হয়। এই ধ্বনিটিও বাংলাতে নেই। পাশের চিত্রে বিবৃত অবস্থায় আ ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অবস্থান দেখানো হল।
কণ্ঠ্যধ্বনি কি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠনালির উপরিভাগ বা জিহ্বামূল, তাদের কণ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন- অ আ।
তালব্যধ্বনি কি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান তালু, তাদের তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- ই, ঈ, তালব্যধ্বনি।
ওষ্ঠ্যধ্বনি:-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন:-
উ, ঊ,
কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ এবং তালু উভয়ই, তাদের কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- এ ঐ কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি।
কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও ওষ্ঠ, তাদের কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি।
মূর্ধন্য ধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান মূর্ধা বা তালুর অর্থভাগ, তাদের মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। যেমন- ঋ
ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, তাদেরকে বলা হয় ব্যঞ্জনধ্বনি (Consonant sound) যেমন- ক, চ, ট, ত, প ইত্যাদি ।
ক থেকে ম পর্যন্ত পাঁচটি বর্গে মোট পঁচিশটি ধ্বনি। এসব ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার সঙ্গে অন্য বাগযন্ত্রের কোনো কোনো অংশের কিংবা ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে; অর্থাৎ এদের উচ্চারণে বাপ্রত্যঙ্গের কোথাও না কোথাও ফুসফুসতাড়িত বাতাস বাধা পেয়ে বেরিয়ে যায়। বাধা পেয়ে স্পষ্ট হয় বলে এগুলোকে বলে স্পর্শ ধ্বনি।
ক-বর্গীয় ধ্বনি : ক খ গ ঘ ঙ এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ জিহ্বার গোড়ার দিকে নরম তালুর পশ্চাৎ ভাগ স্পর্শ করে। এগুলো জিহ্বামূলীয় বা কণ্ঠ্য স্পর্শধ্বনি।
চ-বর্গীয় ধ্বনি : চ ছ জ ঝ ঞ—এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ চ্যাপটাভাবে তালুর সম্মুখ ভাগের সঙ্গে ঘর্ষণ করে। এদের বলা হয় তালব্য স্পর্শধ্বনি।
ট-বর্গীয় ধ্বনি : ট ঠ ড ঢ ণ - এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ উল্টিয়ে ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশকে স্পর্শ করে। এগুলোর উচ্চারণে জিহ্বা উল্টা হয় বলে এদের নাম দন্তমূলীয় প্রতিবেষ্টিত ধ্বনি। আবার এগুলো ওপরের মাড়ির গোড়ার শক্ত অংশ অর্থাৎ মূর্ধায় স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে এদের বলা হয় মূর্ধন্য ধ্বনি।
ত-বর্গীয় ধ্বনি : ত থ দ ধ ন— এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং অগ্রভাগ ওপরের দাঁতের পাটির গোড়ার দিকে স্পর্শ করে। এদের বলা হয় দন্ত্য ধ্বনি ।
প-বর্গীয় ধ্বনি : প ফ ব ভ ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে ওষ্ঠের সঙ্গে অধরের স্পর্শ ঘটে। এদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে।
অঘোষ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না। তখন ধ্বনিটির উচ্চারণ গাম্ভীর্যহীন ও মৃদু হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অঘোষ ধ্বনি (Unvoiced)। যেমন— ক, খ ইত্যাদি। ঘোষ ধ্বনি ইত্যাদি।
ঘোষ: ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হলে ঘোষ ধ্বনি (Voiced) হয়। যেমন— গ, ঘ
অল্পপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় অল্পপ্রাণ ধ্বনি (Unaspirated)। যেমন—ক, গ ইত্যাদি ।
মহাপ্রাণ ধ্বনি : কোনো কোনো ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয়। এরূপ ধ্বনিকে বলা হয় মহাপ্রাণ ধ্বনি (Aspirated)। যেমন— খ, ঘ ইত্যাদি।
ঙ ঞ ণ ন ম – এ পাঁচটি বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণে নাক ও মুখ দিয়ে কিংবা কেবল নাক দিয়ে ফুসফুস-তাড়িত বাতাস বের হয় বলে এদের বলা হয় নাসিক্য ধ্বনি এবং প্রতীকী বর্ণগুলোকে বলা হয় নাসিক্য বর্ণ ।
উষ্মধ্বনি : যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে বাতাস মুখবিবরে কোথাও বাধা না পেয়ে কেবল ঘর্ষণপ্রাপ্ত হয় এবং শিশধ্বনির সৃষ্টি করে, সেটি উষ্মধ্বনি। যেমন— আশীষ, শিশি, শিশু ইত্যাদি। শিশ দেয়ার সঙ্গে এর সাদৃশ্য রয়েছে বলে একে শিশধ্বনিও বলা হয়।
শ, ষ, স – তিনটি উষ্ম বর্ণ। শ-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান পশ্চাৎ দন্তমূল। ষ-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির - উচ্চারণ স্থান মূর্ধা এবং স-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান দত্ত।
অন্তঃস্থ ধ্বনি : স্পর্শ বা উষ্ম ধ্বনির অন্তরে অর্থাৎ মাঝে আছে বলে য র ল ব-এ ধ্বনিগুলোকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলা হয় আর বর্ণগুলোকে বলা হয় অন্তঃস্থ বর্ণ।
য : য-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি সাধারণত সম্মুখ তালু স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়। এজন্য এ ধ্বনিটিকে বলা হয় তালব্য ধ্বনি। শব্দের আদিতে ব্যবহৃত হলে বাংলায় এর উচ্চারণ ‘জ'-এর মতো। যেমন - যখন, যাবেন, যুদ্ধ, যম ইত্যাদি। শব্দের মধ্যে বা অন্তে (সংস্কৃত নিয়মানুযায়ী) ব্যবহৃত হলে ‘য়’ উচ্চারিত হয়। যেমন – 1 বি + যোগ = বিয়োগ ।
র : র-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি জিহ্বার অগ্রভাগকে কম্পিত করে এবং তদ্বারা দন্তমূলকে একাধিকবার দ্রুত আঘাত করে উচ্চারিত হয়। জিহ্বাগ্রকে কম্পিত করা হয় বলে এ ধ্বনিকে কম্পনজাত ধ্বনি বলা হয়। উদাহরণ রাহাত, আরাম, বাজার ইত্যাদি।
ল : ল-বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগকে মুখের মাঝামাঝি দত্তমূলে ঠেকিয়ে রেখে জিহ্বার দুই পাশ দিয়ে মুখবিবর থেকে বায়ু বের করে দেয়া হয়। দুই পাশ দিয়ে বায়ু নিঃসৃত হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলা হয়। যেমন – লাল, লতা, কলরব, ফল, ফসল।
ব : বাংলা বর্ণমালায় বর্গীয়-ব এবং অন্তঃস্থ-ব-এর আকৃতিতে কোনো পার্থক্য নেই। আগে বর্গীয় ও অন্তঃস্থ- এ দুই রকমের ব-এর লেখার আকৃতিও পৃথক ছিল, উচ্চারণও আলাদা ছিল। এখন আকৃতি ও উচ্চারণ অভিন বলে অন্তঃস্থ-ব কে বর্ণমালা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত প্রস্তাবে অন্তস্থ ‘য’ ও অন্তঃস্থ ‘ব’- এ দুটো অবস্বর (Semivowel)। প্রথমটি অয় বা ইয় (y) এবং দ্বিতীয়টি অব বা অও (w)-র মতো। যেমন নেওয়া, হওয়া ইত্যাদি ।
তালব্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান তালু, তাদের তালব্যধ্বনি বলে। চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, য়, শ ভালব্যধ্বনি।
তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি –
ড় এবং ঢ় কে তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। কারণ ধ্বনি দুটি উচ্চারণকালে জিডের অগ্রভাগ উলটে দিয়ে দন্তমূলে আঘাত করে। তাই এদের বলা হয় তাড়নজাত বঞ্জন ধ্বনি।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি –
ল' কে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে।
কম্পনজাত ধ্বনি –
র, ন, ল, কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে।
নাসিক্য ধ্বনি –
ন, ম ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায় নাসিকার ভিতর দিয়ে নির্গত হয় বলে এদের নাসিকা ধ্বনি বা অনুনাসিক ধ্বনি বলে
বর্ণ হচ্ছে ধ্বনি নির্দেশক প্রতীক, অর্থাৎ ধ্বনি নির্দেশক চিহৃকে বলা হয় বর্ণ । একটি ধ্বনিতে একটি প্রতীক বা বর্ণ থাকে । "ধ্বনি দিয়ে আঁট বাধা শব্দেরই ভাষার ইট । এখানে ঈট হচ্ছে বর্ণ ।
বাংলা বর্ণমালা
বাংলা বর্ণমালায় মোট পঞ্চাশ (৫০)টি বর্ণ রয়েছে। তার মধ্যে স্বরবর্ণ এগার (১১)টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ঊনচল্লিশটি (৩৯)টি।
১. স্বরবর্ণ : অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ(১১টি)
২. ব্যঞ্জনবর্ণ : ক খ গ ঘ ঙ (৫টি)
চ ছ জ ঝ ঞ (৫টি)
ট ঠ ঢ ঢ ণ (৫টি)
ত থ দ ধ ন (৫টি)
প ফ ব ভ ম (৫টি)
য র ল (৩টি)
শ ষ স হ (৪টি)
ড় ঢ় য় ৎ (৪টি)
মোট ৫০টি
বিশেষ জ্ঞাতব্য : ঐ, ঔ - এ দুটি দ্বিস্বর বা যৌগিক স্বরধ্বনির চিহ্ন। যেমন – . অ + ই = ঐ, অ + উ =ঔ
কতিপয় সংযুক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ
দুই বর্ণের যুক্ত :
ক্ক =ক্+ক। যেমন— পাক্কা, ছক্কা, চক্কর।
ক্ত = ক্+ত। যেমন- রক্ত, শক্ত, ভক্ত।
ক্ষ= ক্+ষ। (উচ্চারণ ক্ +খ-এর মতো) যেমন— শিক্ষা, বক্ষ, রক্ষা।
ক্স= ক্+স। বাক্স ।
ক= ঙ+ক। যেমন- অঙ্ক, কঙ্কাল, লঙ্কা।
থ= ঙ+খ। যেমন— শৃঙ্খলা, শঙ্খ ।
ঙ্গ= ঙ+গ। যেমন- অঙ্গ, মঙ্গল, সঙ্গীত।
ঙ্ঘ = ঙ+ঘ। যেমন— সঙ্ঘ, লঙ্ঘন।
চ্চ= চ্ +চ। যেমন- উচ্চ, উচ্চারণ, উচ্চকিত।
চ্ছ= চ্+ছ। যেমন— উচ্ছল, উচ্ছৃঙ্খল, উচ্ছেদ ।
জ্জ= জ্+জ। যেমন— উজ্জীবন, উজ্জীবিত ।
জ্ঝ= জ্+ঝ। যেমন- কুঞ্ঝটিকা।
জ্ঞ= জ্ +ঞ। যেমন- উচ্চারণ ‘গ্য’— এর মতো) যেমন- জ্ঞান, সংজ্ঞা, বিজ্ঞান ৷
ঞ্চ ঞ্চ = ঞ+চ । যেমন- অঞ্চল, সঞ্চয়, পঞ্চম।
ঞ্ছ= ঞ +ছ। যেমন-বাঞ্ছিত, বাঞ্ছনীয়, বাঞ্ছা ।
ঞ্জ= ঞ্+জ। যেমন- গঞ্জ, রঞ্জন,
ঞ্ঝ= ঞ+ঝ। যেমন- ঝঞ্ঝা, ঝঞ্ঝাট।
[ বি. দ্র. উপর্যুক্ত চারটি সংযুক্ত বর্ণের উচ্চারণ ‘ন’ হলে ও লেখার সময় কখনো ন্চ (অন্চল), ন্ ছ (বান্ছা), ন্জ (গন্জ), নঝ (ঝন্ঝা) রূপে লেখা ঠিক নয়।
ট্ট= ট্ +ট। যেমন- অট্টালিকা, চট্টোপাধ্যায়, চট্টগ্রাম ৷ ড= ড্ +ড। যেমন- গড্ডালিকা, উড্ডীন, উড্ডয়ন।
ণ্ট= ণ্+ট। যেমন— ঘণ্টা, বণ্টন।
ত্ত= ত্ +ত। যেমন— উত্তম, বিত্ত, চিত্ত।
থ= ত্+থ। যেমন—উত্থান, উত্থিত, অভ্যুত্থান।
দ্দ= দ্ +দ। যেমন—উদ্দাম, উদ্দীপক, উদ্দেশ্য।
দ্ধ= দ্ +ধ। যেমন— উদ্ধত, উদ্ধৃত, পদ্ধতি
দ্ভ= দ্ +ভ। যেমন— উদ্ভব, উদ্ভট, উদ্ভিদ ।
ন্ত= ন্+ত। যেমন- অন্ত, দন্ত, কান্ত
ন্দ= ন্+দ। যেমন- আনন্দ, সন্দেশ, বন্দী ।
ন্ধ= ন্+ধ। যেমন- বন্ধন, রন্ধন, সন্ধান ।
ন্ন= ন্ +ন। যেমন— অন্ন, ছিন্ন, ভিন্ন।
ন্ম= ন্ +ম। যেমন- জন্ম, আজন্ম।
প্ত= প্ +ত। যেমন- রপ্ত, ব্যাপ্ত, লিপ্ত।
স্প= প্ +প। যেমন- পাপ্পা, পাম্পু, ধাপ্পা।
প্স= প্ +স। যেমন- লিপ্সা, অভীপ্সা।
জব্দ, ব্দ= ব্ +দ। যেমন — অব্দ, শব্দ।
স্ক= ল্ +ক। যেমন- উল্কা, বঙ্কল।
ল্প= ল্ +গ। যেমন- ফাল্গুন।
ল্ট= ল্ +ট। যেমন- উল্টা।
ষ্ক= ষ্ +ক। যেমন— শুষ্ক, পরিষ্কার, বহিষ্কার।
স্ক= স্ +ক। যেমন- স্কুল, স্কন্ধ ।
স্থ= স্ +খ। যেমন- স্খলন ।
স্ট= স+ট। যেমন- আগস্ট, স্টেশন।
স্ত= স্ +ত। যেমন- অস্ত, সস্তা, স্তব্ধ ৷
স্প= স্ +প। যেমন-স্পষ্ট, স্পন্দন, স্পর্ধা।
ফ= স্ +ফ। যেমন- স্ফটিক, প্রস্ফুটিত ।
হ্ম= হ্ +ম। যেমন- ব্ৰহ্ম, ব্রাহ্মণ।
এছাড়া বাংলা ভাষায় দুইয়ের অধিক বর্ণ সংযোগেও কিছু সংযুক্ত বর্ণ গঠিত হয়। সূক্ষ্ম শব্দে ক্ষ্ম বর্ণ= ক্
+ষ+ম- ফলা ; স্বাতন্ত্র্য শব্দের ন্ত্র্য=ন+ত+র-ফলা () +য-ফলা (্য) ইত্যাদি।
একটি শব্দ উচ্চারণের ফলে যে পরিবর্তন আসে তাকে ধ্বনি পরিবর্তন বলে।
অপিনিহিতি শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল – ( অপি-নি-√ধা-তি) অর্থাৎ শব্দের আগে বসা বা আগে স্থাপন । শব্দ মধ্যস্থ কোনো ব্যঞ্জন ধ্বনির পর যদি ই-কার বা উ-কার থাকে তবে সেই 'ই' বা 'উ' যদি ব্যঞ্জন ধ্বনির আগে উচ্চারিত হয়ে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটায় সেটাই হল অপিনিহিতি।
যেমন: আজি>আইজ; সাধু>সাউধ; বাক্য>বাইক্য
অভিশ্রুতি (Umlaut) : বিপর্যস্ত স্বরধ্বনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে অভিশ্রুতি। যেমন - করিয়া থেকে অপিনিহিতির ফলে ‘কইরিয়া’ কিংবা বিপর্যয়ের ফলে ‘কইরা’ থেকে অভিশ্রুতিজাত ‘করে’। এরূপ – শুনিয়া > শুনে, বলিয়া > বলে, হাটুয়া > হাউটা > হেটো, মাছুয়া > মেছো ইত্যাদি
স্বরসঙ্গতি (Vowel harmony) : একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন – দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো ইত্যাদি ।
স্বরসঙ্গতি (Vowel harmony) : একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন – দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো ইত্যাদি ।
স্বরসঙ্গতি (Vowel harmony) : একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন – দেশি > দিশি, বিলাতি > বিলিতি, মুলা > মুলো ইত্যাদি ।
যত প্রকারের ধ্বনি পরিবর্তন বাংলা ভাষায় দেখা যায়, তার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা হলো স্বরের আগম বা স্বরাগম। স্বরাগম বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে এবং স্বরাগম তিন প্রকার হতে পারে। ১: আদি স্বরাগম, ২: মধ্য স্বরাগম ও ৩: অন্ত্য স্বরাগম।
স্বরাগমের সংজ্ঞা
শব্দের আদিতে, মধ্যে বা অন্তে একটি অতিরিক্ত
স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে স্বরাগম বা স্বরের
আগম বলা হয় ।
আদি স্বরাগম (Prothesis) : উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি স্বরাগম (Prothesis)। যেমন – স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন। এরূপ - আস্তাবল, আস্পর্ধা ।
মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি (Anaptyxis) : সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জন- ধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি। যেমন-
অন্ত্যস্বরাগম (Apothesis) : কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। যেমন – দিশ্ > দিশা, পোখত্ > পোক্ত, বেঞ্চ, বেঞ্চি, সত্য > সত্যি ইত্যাদি ৷
সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ। যেমন – বসতি > বতি, জানালা > জান্লা ইত্যাদি।
সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ। যেমন – বসতি > বতি, জানালা > জান্লা ইত্যাদি।
সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ। যেমন – বসতি > বতি, জানালা > জান্লা ইত্যাদি।
সম্প্রকর্ষ বা স্বরলোপ : দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ। যেমন – বসতি > বতি, জানালা > জান্লা ইত্যাদি।
নাসিক্যীভবন:
কোন নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি ক্ষীণ হতে হতে ক্রমশঃ লোপ পায় এবং তার রেশ স্বরূপ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিতে একটা অনুনাসিক অনুরণন যোগ হয় তবে সেই প্রক্রিয়াকে নাসিক্যীভবন বলে। যেমন –বন্ধ>বাঁধ,হংস>হাঁস,দ্ন্ত>দাঁত ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনাগম :- শব্দ মধ্যে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলে ব্যঞ্জনাগম । ব্যঞ্জনাগম ও তিন প্রকার — (1) আদি, (2) মধ্য ও (3) অন্ত ব্যঞ্জনাগম ।
(1) আদি ব্যঞ্জনাগম :- উজু > রুজু , ওঝা > রোজা , এখানে শব্দের আদিতে 'র' এর আগমন ঘটেছে ।
(2) মধ্য ব্যঞ্জনাগম :- অম্ল > অম্বল, বানর > বান্দর, পোড়ামুখী > পোড়ারমুখী প্রভৃতি । এখানে ব, দ, র ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি শব্দের মধ্যে এসেছে ।
(3) অন্ত ব্যঞ্জনাগম :- সীমা > সীমানা , ধনু > ধনুক, নানা > নানান - শব্দের শেষে 'না', 'ক', 'ন' বর্ণের আগমন ঘটে শব্দগুলিকে সরলীকরণ করা হয়েছে ।
ব্যঞ্জনলোপ– উচ্চারণকালে শব্দের শুরুতে, মাঝে বা শেষে কোনো ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে ধ্বনি পরিবর্তনের এই নিয়মকে বলা হয় ব্যঞ্জনলোপ। আদি-ব্যঞ্জনলোপ- শব্দের আদিতে থাকা ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি-ব্যঞ্জনলোপ বলা হয়। যেমন- স্ফটিক> ফটিক, স্ফূর্তি> ফুর্তি, স্থান> থান , শ্রাবণ> শাবন (শাওন) ইত্যাদি।
আদি ব্যঞ্জনলোপ:
শব্দের আদিতে অবস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে আদি ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-স্থান>থান, শ্মশান>মশান, ট্রেন>টেন ইত্যাদি।
মধ্য ব্যঞ্জনলোপ:
শব্দের মাঝখানে অবস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে মধ্য ব্যঞ্জনলোপ বলা হয়।যেমন-শৃগাল>শিআল>শিয়াল, রাধিকা>রাহিআ>রাহি>যাই।
অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ:
শব্দের অন্তে অবস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্ত্যব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-বধূ>বহু>বউ,সখী>সই,আম্র>আম ইত্যাদি।
হ-কার লোপ :
আধুনিক চলিত ভাষায় অনেক সময় দুই স্বরের মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয়। যেমন—পুরোহিত > পুরুত, গাহিল > গাইল, চাহে > চায়, সাধু > সাহু > সাউ, আরবি আল্লাহ্ > বাংলা আল্লা,ফারসি শাহ্> বাংলা শা ইত্যাদি।
র-কার লোপ :
আধুনিক চলিত বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন – তর্ক > তক্ক, করতে > কত্তে, মারল > মাল্ল, করলাম > কল্লাম ।
সমাক্ষরলোপ:
কোন শব্দের মধ্যে পাশাপাশি অথবা কাছাকাছি দুই বা ততোধিক সমধ্বনি থাকলে কখনো কখনো এদের এক বা একাধিক ধ্বনি লোপ পেতে দেখা যায় একে বলা হয় সমাক্ষরলোপ।যেমন-বড়দাদা>বড়দা,মেজদিদি>মেজদি ইত্যাদি।
সমীভবন (Assimilation) : শব্দমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তর সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন। যেমন – জন্ম > জন্ম, কাঁদনা > কান্না ইত্যাদি। ক. প্রগত (Progressive) সমীভবন : পূর্ব ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ পরবর্তী ধ্বনি পূর্ববর্তী ধ্বনির মতো হয়, একে বলে প্রগত সমীভবন। যেমন – চক্র > চক্ক, পৰ্ব্ব > পক্ক, পদ্ম > পদ্দ, লগ্ন > লগ্গ ইত্যাদি । খ. পরাগত (Regressive) সমীভবন : পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির পরিবর্তন হয়, একে বলে পরাগত সমীভবন। যেমন – তৎ + জন্য > তজ্জন্য, তৎ + হিত > তদ্ধিত, উৎ + মুখ > উন্মুখ ইত্যাদি ।
বিষমীভবন (Dissimilation) : দুটো সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলে। যেমন – শরীর > শরীল, লাল > নাল ইত্যাদি।
ধ্বনি বিপর্যয় : শব্দের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন – ইংরেজি বাক্স > বাংলা বাস্ক, জাপানি রিক্সা > বাংলা রিস্কা ইত্যাদি। অনুরূপ – পিশাচ > পিচাশ, লাফ, ফাল।
বর্ণের উচ্চারণ : বাংলা ভাষায় ৩৭টি মূল ধ্বনিকে প্রকাশ করার জন্য রয়েছে ৫০টি মূল বর্ণ। এর মধ্যে অধিকাংশ বর্ণের উচ্চারণ মূল ধ্বনির অনুরূপ। কয়েকটি বর্ণের একাধিক উচ্চারণ রয়েছে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে একাধিক বর্ণের উচ্চারণ অভিন্ন। ধ্বনিগুলাে দিয়ে শব্দ তৈরি হওয়ার সময়ে পাশের ধ্বনির প্রভাবে বর্ণের উচ্চারণ অনেক সময়ে বদলে যায়। এখানে বাংলা বর্ণের উচ্চারণ সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে।
অ
অ বর্ণের উচ্চারণ দুই রকম: [অ] এবং [ও]। সাধারণ উচ্চারণ [অ], কিন্তু পাশের ধ্বনির প্রভাবে [অ] কখনাে কখনাে [ও]-এর মতাে উচ্চারিত হয়। অ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ: অনেক অনে, কথা কথা], অনাথ [অনাহ্]। অ বর্ণের [ও] উচ্চারণ: অতি [ওতি), অণু ওনু], পক্ষ [পােকখাে], অদ্য [ওদো ], মন মােন্]।
আ
আ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ [আ]: আকাশ (আকাশী, রাত রাতৃ, আলাে আলাে]। [আ] জ্ঞ-এর সঙ্গে থাকলে (অ্যা]-এর মতাে উচ্চারিত হয়। যেমন – জ্ঞান [গ্যাঁন], জ্ঞাত [গ্যাঁতাে], জ্ঞাপন [গ্যাঁপোন]
ই, ঈ
[ই] ধ্বনির হ্রস্বতা ও দীর্ঘতা বােঝাতে দুটি বর্ণ রয়েছে: ই এবং ঈ। কিন্তু বাংলা ভাষায় উভয় বর্ণের উচ্চারণ একই রকম: দিন [দিন], দীন (দিনো], বিনা [বিনা], বীণা (বিনা), হীন [হিনাে]।
উ, ঊ
[উ] ধ্বনির হ্রস্বতা ও দীর্ঘতা বােঝাতে দুটি বর্ণ রয়েছে: উ এবং উ। কিন্তু বাংলা ভাষায় উভয় বর্ণের উচ্চারণ একই রকম: উচিত [উচিত্] উষা [উশা], উনিশ [উনিশ], ঊনবিংশ [উনােবিংঙশাে]।
ঋ
ঋ বর্ণের উচ্চারণ রি-এর মতাে: ঋতু [রিতু], ঋণ [রিন্], কৃষক [ক্রিশক], দৃশ্য [দ্ৰিশশাে]।
এ
এ বর্ণের উচ্চারণ দুই রকম: [এ] এবং [অ্যা]। সাধারণ উচ্চারণ [এ], কিন্তু পাশের ধ্বনির প্রভাবে এ কখনাে কখনাে [অ্যা] উচ্চারিত হয়। এ বর্ণের স্বাভাবিক উচ্চারণ: একটি [একটি], দেশ [দেশ], এলাে [এলাে]। এ বর্ণের [অ্যা] উচ্চারণ: একটা [অ্যাক্টা ], বেলা [ব্যালা], খেলা [খ্যালা]।
ঐ
ঐ বর্ণের উচ্চারণ ওই: ঐকিক [ওইকি, তৈল তােইলাে]।
ও
ও বর্ণের উচ্চারণ [ও]: ওল [ওল], বােধ [বােধ]।
ঔ
ঔ বর্ণের উচ্চারণ [ওউ): ঔষধ [ওউশধ], মৌমাছি [মােমাছি]।
ব্যঞ্জনবর্ণগুলাে সাধারণত নিজ নিজ ধ্বনি অনুযায়ী উচ্চারিত হয়। যেমন – কলা, খর, বল, নাচ শব্দের ক, খ, ব, ন ইত্যাদি বর্ণের উচ্চারণ যথাক্রমে [ক], [খ], [ব], [ন] ইত্যাদি। তবে কয়েকটি ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণ নিজ নিজ ধ্বনি থেকে আলাদা। এ ধরনের কয়েকটি বর্ণের উচ্চারণ নিয়ে আলােচনা করা হলাে।
ঞ
ঞ বর্ণের নিজস্ব কোনাে ধ্বনি নেই। স্বতন্ত্র ব্যবহারে আঁ-এর মতাে আর সংযুক্ত ব্যঞ্জনে [ন]-এর মতাে উচ্চারিত হয়: মিঞা [মিয়া], চঞ্চল [চনচল], গঞ্জ [গনজো]।
ণ
ণ বর্ণের উচ্চারণ : কণা [কনা], বাণী [বানি], হরিণ [হােরিন]
ব
ব বর্ণের সাধারণ উচ্চারণ [ব]। তবে ফলা হিসেবে এই বর্ণের উচ্চারণে স্বাতন্ত্র্য আছে। শব্দের আদিতে ব-ফলার উচ্চারণ হয় না। যেমন – ত্বক [ত], শ্বশুর [শাে] , স্বাধীন [শাধিন]। শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে সেই ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়: অশ্ব (অশশাে], বিশ্বাস [বিশশাশ], পক্ব [পককো]।
ম
ম বর্ণের সাধারণ উচ্চারণ [ম]। শব্দের প্রথম বর্ণে ম-ফলা থাকলে সেই বর্ণ উচ্চারণের সময়ে ম-এর উচ্চারণ আঁ-এর মতাে হয়, যেমন – শ্মশান [শঁশান], স্মরণ [শঁরােন্]। শব্দের মধ্যে ম-ফলা থাকলে সেই বর্ণ উচ্চারণে দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য অনুনাসিক হয়, যেমন – আত্মীয় [আততিও], পদ্ম (পদদোঁ] । কিছু ক্ষেত্রে ম-ফলায় – এর উচ্চারণ বজায় থাকে, যেমন – যুগ্ম [জুগমাে], জন্ম [জনমো], গুল্ম [গুলমাে]।
য
য বর্ণের উচ্চারণ [জ্]: যদি [জোদি], যিনি [জিনি], সূর্য [শুরূজো]। তবে য-ফলা থাকলে স্বরের উচ্চারণে এ পরিবর্তন হয়, যেমন – যেমন – ব্যতীত বেতিতাে], ব্যথা ব্যাথা]। শব্দের মাঝখানে বা শেষে য-ফলা বর্ণের ও সঙ্গে যুক্ত থাকলে ঐ বর্ণের উচ্চারণ দ্বিত্ব হয়, যেমন – উদ্যম [উদ্দ, গদ্য গােদো]। কিন্তু শব্দের মধ্যে বা শেষে যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গে থাকা -এর কোনাে উচ্চারণ হয় না, যেমন – সন্ধ্যা [শােধা], স্বাস্থ্য শািসূথাে], অর্ঘ্য [অরুঘাে] ।
র
র বর্ণের উচ্চারণ [র]। তবে র-ফলা হিসেবে এর উচ্চারণে বৈচিত্র্য আছে। শব্দের মধ্যে বা শেষে কোনাে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র-ফলা থাকলে দ্বিত্বসহ র-ফলা উচ্চারিত হয়, যেমন – মাত্র মিত্রো ], বিদ্রোহ [বিদ্রোহাে], যাত্রী জোত্রি]। কিন্তু শব্দের মধ্যে বা শেষে যুক্তব্যঞ্জনের সঙ্গে র-ফলা যুক্ত হলে দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় না, যেমন – কেন্দ্র [কেনৃদ্রো], শাস্ত্র শািসত্রো], বস্ত্র বিসূত্রো]।
শ, ষ, স
শ কখনাে [শ]-এর মতাে উচ্চারিত হয়, কখনাে [স]-এর মতাে উচ্চারিত হয়। স কখনাে [শ]-এর মতাে উচ্চারিত হয়, আবার কখনাে [স]-এর মতাে উচ্চারিত হয়। ষ বর্ণের উচ্চারণ সব সময়ে [শ]।
ণত্ব বিধান
বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধন্য-ণ ধ্বনির ব্যবহার নেই। সেজন্য বাংলা (দেশি), তদ্ভব ও বিদেশি শব্দের বানানে মূর্ধন্য বর্ণ (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাংলা ভাষায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধন্য-ণ এবং দন্ত্য- ন-এর ব্যবহার আছে। তা বাংলায় অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়। তৎসম শব্দের বানানে ণ-এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।
ণ ব্যবহারের নিয়ম
১. ট-বর্গীয় ধ্বনির আগে তৎসম শব্দে সব সময় মূর্ধন্য 'ণ' যুক্ত হয়। যেমন – ঘণ্টা, লণ্ঠন, কাণ্ড ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ – এর পরে মূর্ধন্য 'ণ' হয়। যেমন – ঋণ, তৃণ, বর্ণ, বর্ণনা, কারণ, মরণ, ব্যাকরণ, ভীষণ, ভাষণ, উষ্ণ ইত্যাদি। ঋ, র, ষ-এর পরে স্বরধ্বনি, য য় ব হ ং এবং ক-বর্গীয় ও প-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে তার পরবর্তী ন মূর্ধন্য ‘ণ’ হয়। যেমন – কৃপণ (ঋ-কারের পরে প্, তার পরে ণ), হরিণ (র-এর পরে ই, তার পরে ণ,) অর্পণ (র্ + প্ + অ+ণ), লক্ষণ (ক্ + ষ্ + অ + ণ)। এরূপ – রুক্মিণী, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি ৷
কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই ণ হয়
চাণক্য মাণিক্য গণ
বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা ।
কল্যাণ শোণিত মণি
স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা ।
আপণ লাবণ্য বাণী
নিপুণ ভণিতা পাণি
গৌণ কোণ ভাণ পণ শাণ ৷
চিক্কণ নিক্কণ তূণ
কফণি (কনুই) বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ ৷
সমাসবদ্ধ শব্দে সাধারণত ণ-ত্ব বিধান খাটে না। এরূপ ক্ষেত্রে ন হয়। যেমন – ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম, দুর্নিবার, পরনিন্দা, অগ্রনায়ক। ত-বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে যুক্ত ন কখনো ণ হয় না, ন হয়। যেমন – অন্ত,গ্রন্থ, ক্রন্দন।
ষ-ত্ব বিধান
বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধন্য-ষ ধ্বনির ব্যবহার নেই। তাই দেশি, তদ্ভব ও বিদেশি শব্দের বানানে মূর্ধন্য-ষ লেখার প্রয়োজন হয় না। কেবল কিছু তৎসম শব্দে ষ-এর প্রয়োগ রয়েছে। যে-সব তৎসম শব্দে ‘ষ’ রয়েছে তা বাংলায় অবিকৃত আছে। তৎসম শব্দের বানানে মূর্ধন্য ‘ষ’–এর ব্যবহারের নিয়মকে ষত্ব বিধান বলে।
ষ ব্যবহারের নিয়ম
১. অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি এবং ক ও র-এর পরে প্রত্যয়ের স ষ হয়। যেমন— ভবিষ্যৎ (ত্ + অ + ব্ + ই + ) এখানে ব-এর পরে ই-এর ব্যবধান), মুমূর্ষু, চক্ষুষ্মান, চিকীর্ষা ইত্যাদি।
২. ই-কারান্ত এবং উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতগুলো ধাতুতে ‘ষ’ হয়। যেমন – অভিসেক > অভিষেক, সুসুপ্ত > সুষুপ্ত, অনুসঙ্গ > অনুষঙ্গ, প্রতিসেধক > প্রতিষেধক, প্রতিস্থান অনুষ্ঠান, বিসম > বিষম, সুসমা > সুষমা ইত্যাদি। প্রতিষ্ঠান, অনুস্থান >
৩.‘ঋ’ এবং ঋ কারের পর ‘ষ’ হয়। যেমন- ঋষি, কৃষক, উৎকৃষ্ট, দৃষ্টি, সৃষ্টি ইত্যাদি।
৪. তৎসম শব্দে ‘র’-এর পর ‘ষ’ হয়। যেমন- বর্ষা, ঘর্ষণ, বৰ্ষণ
৫. র- ধ্বনির পরে যদি অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরধ্বনি থাকে তবে তার পরে 'ষ' হয়। যথা : পরিষ্কার। কিন্তু অ, আ স্বরধ্বনি থাকলে স হয়। যথা পুরস্কার।
৬. ট-বর্গীয় ধ্বনির সঙ্গে 'ষ' যুক্ত হয়। যথা : কষ্ট, স্পষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, ওষ্ঠ ইত্যাদি।
কতগুলো শব্দে স্বভাবতই ‘ষ’ হয়। যেমন-ষড়ঋতু, রোষ, কোষ, আষাঢ়, ভাষণ, ভাষা, ঊষা, পৌষ, কলুষ, পাষাণ, মানুষ, ঔষধ, ষড়যন্ত্র, ভূষণ, দ্বেষ ইত্যাদি ।
জ্ঞাতব্য
ক. আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা থেকে আগত শব্দে ষ হয় না। এ সম্বন্ধে সতর্ক হতে হবে। যেমন— জিনিস, পোশাক, মাস্টার, পোস্ট ইত্যাদি।
খ. সংস্কৃত ‘সাৎ’ প্রত্যয়যুক্ত পদেও ষ হয় না। যেমন- অগ্নিসাৎ, ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ ইত্যাদি।
সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি। যেমন – আশা + অতীত = আশাতীত। হিম + আলয় = হিমালয়। প্রথমটিতে আ + অ আ (1) এবং দ্বিতীয়টিতে অ + আ = আ (I) হয়েছে। আবার, তৎ + মধ্যে =তন্মধ্যে, = এখানে ত + ম = ন্ম হয়েছে।
সন্ধির উদ্দেশ্য
(ক) সন্ধির উদ্দেশ্য স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা এবং (খ) ধ্বনিগত মাধুর্য সম্পাদন। যেমন— ‘আশা' ও ‘অতীত’ উচ্চারণে যে আয়াস প্রয়োজন, ‘আশাতীত’ তার চেয়ে অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয়। সেরূপ ‘হিম আলয় বলতে যেরূপ শোনা যায়, ‘হিমালয়’ তার চেয়ে সহজে উচ্চারিত এবং শ্রুতিমধুর। তাই যে ক্ষেত্রে আয়াসের লাঘব হয় কিন্তু ধ্বনি-মাধুর্য রক্ষিত হয় না, সে ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই। যেমন— কচু + আদা + আলু =কচ্চাদালু হয় না। অথবা কচু + আলু + আদা কচ্চাম্বাদা হয় না । =
আমরা প্রথমে খাঁটি বাংলা শব্দের সন্ধি ও পরে তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের সন্ধি সম্বন্ধে আলোচনা করব। উল্লেখ্য, তৎসম সন্ধি মূলত বর্ণ সংযোগের নিয়ম ।
বাংলা সন্ধি দুই রকমের : স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি।
১. স্বরসন্ধি
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।
১. সন্ধিতে দুটি সন্নিহিত স্বরের একটির লোপ হয়। যেমন—
২. কোনো কোনো স্থলে পাশাপাশি দুটি স্বরের শেষেরটি লোপ পায়। যেমন – যা + ইচ্ছা + তাই =যাচ্ছেতাই। এখানে (আ+ই) এর মধ্যে ই লোপ পেয়েছে।
২। ব্যঞ্জন সন্ধি
স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি সমীভবন ( Assimilation)-এর নিয়মেই হয়ে থাকে। আর তা-ও মূলত কথ্যরীতিতে সীমাবদ্ধ।
১. প্রথম ধ্বনি অঘোষ এবং পরবর্তী ধ্বনি ঘোষ হলে, দুটি মিলে ঘোষ ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ সন্ধিতে ঘোষ ধ্বনির পূর্ববর্তী অঘোষ ধ্বনিও ঘোষ হয়। যেমন – ছোট + দা =ছোড়দা।
২. হলন্ত র্ (বদ্ধ অক্ষর বিশিষ্ট) ধ্বনির পরে অন্য ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে র্ লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। যেমন— আর, + না = আন্না, চার + টি = চাট্টি, ধর্ + না =ধনা, দুর + ছাই = দুচ্ছাই ইত্যাদি।
৩. চ-বর্গীয় ধ্বনির আগে যদি ত- -বর্গীয় ধ্বনি আসে তাহলে, ত-বর্গীয় ধ্বনি লোপ হয় এবং চ-বর্গীয় ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ ত-বর্গীয় ধ্বনি ও চ-বর্গীয় ধ্বনি পাশাপাশি এলে প্রথমটি লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেমন— নাত + জামাই =নাজ্জামাই (ত্ + জ, জ্জ), বদ্ + জাত =বজ্জাত, হাত + ছানি = হাচ্ছানি ইত্যাদি।
8. 'প'-এর পরে ‘চ' এবং 'স'-এর পরে 'ত' এলে চ ও ত এর স্থলে শ হয়। যেমন পাশ্শ। সাত + শ সাশ, পাঁচ + সিকা = পাশিকা।
৫.হলন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরের লোপ হয় না। যেমন – - বোন + আই =বোনাই, চুন + আরি =চুনারি, তিল + এক = তিলেক, বার + এক =বারেক, তিন + এক =তিনেক।
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন – . কাঁচা + কলা = কাঁচকলা, নাতি + বৌ =নাতবৌ, ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া + গাড়ি = ঘোড়গাড়ি ইত্যাদি ।
স্বরসন্ধি:
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধি হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।
১. সন্ধিতে দুটি সন্নিহিত স্বরের একটির লোপ হয়। যেমন—
(ক) অ + এ = এ (অ লোপ), যেমন – শত + এক = শতেক। এরূপ - কতেক।
(খ) আ + আ = আ (একটি আ লোপ)। যেমন – শাঁখা + আরি = শাঁখারি। এরূপ – রূপা + আলি = রূপালি।
(গ) আ + উ = উ (আ লোপ)। যেমন – মিথ্যা + উক = মিথ্যুক। এরূপ – হিংসুক, নিন্দুক ইত্যাদি।
(ঘ) ই + এ = ই (এ লোপ)। যেমন – কুড়ি + এক = কুড়িক। এরূপ – ধনিক, গুটিক ইত্যাদি। আশি + এর = আশির (এ লোপ)। এরূপ – নদীর (নদী +এর)।
-
২. কোনো কোনো স্থলে পাশাপাশি দুটি স্বরের শেষেরটি লোপ পায়। যেমন – যা + ইচ্ছা + তাই =যাচ্ছেতাই। এখানে (আ+ই) এর মধ্যে ই লোপ পেয়েছে।
ব্যঞ্জন সন্ধি:
স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি সমীভবন ( Assimilation)-এর নিয়মেই হয়ে থাকে। আর তা-ও মূলত কথ্যরীতিতে সীমাবদ্ধ। ১. প্রথম ধ্বনি অঘোষ এবং পরবর্তী ধ্বনি ঘোষ হলে, দুটি মিলে ঘোষ ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ সন্ধিতে ঘোষ ধ্বনির পূর্ববর্তী অঘোষ ধ্বনিও ঘোষ হয়। যেমন – ছোট + দা =ছোড়দা।
২. হলন্ত র্ (বদ্ধ অক্ষর বিশিষ্ট) ধ্বনির পরে অন্য ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে র্ লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। যেমন— আর, + না = আন্না, চার + টি = চাট্টি, ধর্ + না =ধনা, দুর + ছাই = দুচ্ছাই ইত্যাদি।
৩. চ-বর্গীয় ধ্বনির আগে যদি ত- -বর্গীয় ধ্বনি আসে তাহলে, ত-বর্গীয় ধ্বনি লোপ হয় এবং চ-বর্গীয় ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ ত-বর্গীয় ধ্বনি ও চ-বর্গীয় ধ্বনি পাশাপাশি এলে প্রথমটি লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেমন— নাত + জামাই =নাজ্জামাই (ত্ + জ, জ্জ), বদ্ + জাত =বজ্জাত, হাত + ছানি = হাচ্ছানি ইত্যাদি। =
8. 'প'-এর পরে ‘চ' এবং 'স'-এর পরে 'ত' এলে চ ও ত এর স্থলে শ হয়। যেমন পাশ্শ। সাত + শ সাশ, পাঁচ + সিকা = পাশিকা। = - পাঁচ + শ =
৫.হলন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে স্বরের লোপ হয় না। যেমন – - বোন + আই =বোনাই, চুন + আরি =চুনারি, তিল + এক = তিলেক, বার + এক =বারেক, তিন + এক =তিনেক।
৬. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন – . কাঁচা + কলা = কাঁচকলা, নাতি + বৌ =নাতবৌ, ঘোড়া + দৌড় = ঘোড়দৌড়, ঘোড়া + গাড়ি = ঘোড়গাড়ি ইত্যাদি ।
তৎসম শব্দের সন্ধি:
বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এসব শব্দই তৎসম (তৎ তার + সম সমান) । = = তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। এ শ্রেণির শব্দের সন্ধি সংস্কৃত ভাষার নিয়মেই সম্পাদিত হয়ে এসেছে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম সন্ধি তিন প্রকার : (১) স্বরসন্ধি (২) ব্যঞ্জন সন্ধি (৩) বিসর্গ সন্ধি।
তৎসম শব্দের স্বরসন্ধি:
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনের নাম স্বরসন্ধি ।
১. অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়, আ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + অ আ নর+ অধম = নরাধম। এরূপ-হিমাচল, প্রাণাধিক, হস্তান্তর, হিতাহিত ইত্যাদি। =
অ + আ আহিম + আলয় = হিমালয়। এরূপ - দেবালয়, রত্নাকর, = সিংহাসন ইত্যাদি। আ + অ আ যথা + অর্থ = যথার্থ। এরূপ – আশাতীত, কথামৃত, মহার্ঘ ইত্যাদি ।
=আ + আ আ বিদ্যা+ আলয় = বিদ্যালয়। এরূপ- কারাগার, মহাশয়, সদানন্দ ইত্যাদি।
২. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়; এ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + ই = এ শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
আ + ই =এ যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট।
অ + ঈ=এ পরম + ঈশ =পরমেশ।
আ + ঈ =এ মহা + ঈশ =মহেশ ।
এরূপ –পূর্ণেন্দু, শ্রবণেন্দ্রিয়, স্বেচ্ছা, নরেশ, রমেশ, নরেন্দ্র ইত্যাদি।
৩. অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়; ও-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনে যুক্ত হয়। যেমন-
অ + উ সূর্য + উদয় = সূর্যোদয় ।
আ + উ = যথা + উচিত যথোচিত।
অ + ঊ =ও গৃহ + ঊর্ধ্ব = গৃহো ।
আ + ঊ = গঙ্গা + ঊর্মি = গঙ্গোর্মি।
এরূপ – নীলোৎপল, চলোর্মি, মহোৎসব, নবোঢ়া, ফলোদয়, যথোপযুক্ত, হিতোপদেশ, পরোপকার, প্রশ্নোত্তর ইত্যাদি ৷
8. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ‘অর’ হয় এবং তা রেফ (´ ) রূপে পরবর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন—
অ + ঋ =অর্ দেব + ঋষি = দেবর্ষি ।
আ + ঋ = অর্ মহা + ঋষি = মহর্ষি
এরূপ – অধমর্ণ, উত্তমর্ণ, সপ্তর্ষি, রাজর্ষি ইত্যাদি।
৫. অ-কার কিংবা আ-কারের পর “ঋত’-শব্দ থাকলে (অ, আ+ঋ) উভয় মিলে ‘আর’ হয় এবং বানানে পূর্ববর্তী বর্ণে আ ও পরবর্তী বর্ণে রেফ লেখা হয়। যেমন—
অ + ঋ= আর শীত + ঋত = = শীতার্ত।
আ + ঋ = আর তৃষ্ণা + ঋত = তৃষ্ণার্ত।
এরূপ –ভয়ার্ত, ক্ষুধার্ত ইত্যাদি।
৬. অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়; ঐ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
অ + এ = ঐ জন + এক জনৈক।
আ + এ= ঐ সদা + এব = সদৈব।
অ + ঐ=ঐ মত + ঐক্য = মতৈক্য।
আ + ঐ = ঐ মহা + ঐশ্বর্য মহৈশ্বৰ্য ৷
এরূপ— হিতৈষী, সর্বৈব, অতুলৈশ্বর্য ইত্যাদি।
৭. অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা ঔ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়; ঔ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
বন + ওষধি বনৌষধি ৷
অ + ও =মহা + ওষধি মহৌষধি ।
আ + ও = ঔ
অ + ঔ =ঔ পরম + ঔষধ =পরমৌষধ।
আ + ঔ =ঔ মহা + ঔষধ = মহৌষধ ।
৮. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে দীর্ঘ ঈ-কার হয়। দীর্ঘ ঈ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
ই + ই =ঈ অতি + ইত = অতীত
ই + ঈ =ঈ পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা ৷
ঈ + ই= ঈ সতী + ইন্দ্ৰ = সতীন্দ্র ।
ঈ + ঈ =ঈ সতী + ঈশ = সতীশ ৷
এরূপ— গিরীন্দ্র, ক্ষিতীশ, মহীন্দ্র, শ্রীশ, পৃথ্বীশ, অতীব, প্রতীক্ষা, প্রতীত, রবীন্দ্র, দিল্লীশ্বর ইত্যাদি।
৯. ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই ও ঈ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ই বা ঈ স্থানে ‘য’ বা য(j) ফলা হয়। য-ফলা লেখার সময় পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সাথে লেখা হয়। যেমন—
ই + অ = য্ + অ অতি + অন্ত = অত্যন্ত।
ই + আ = ষ্ + আ ইতি + আদি = ইত্যাদি ।
ই + উ = ব্ + উ অতি + উক্তি অত্যুক্তি।
ই + ঊ = য্ + ঊ প্ৰতি + ঊষ = প্রত্যূষ।
ঈ+ আ = য্ + আ মসী + আধার = মস্যাধার।
ই + এ= ব্ + এ প্রতি + এক =প্রত্যেক ।
ঈ + অ = য্ + অ নদী + অম্বু = নদ্যম্বু।
এরূপ-প্রত্যহ, অত্যধিক, গত্যন্তর, প্রত্যাশা, প্রত্যাবর্তন, আদ্যন্ত, যদ্যপি, অভ্যুত্থান, অত্যাশ্চর্য, প্রত্যুপকার ইত্যাদি।
১০. উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়; ঊ-কার পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন ধ্বনির সাথে যুক্ত হয়। যেমন—
উ + উ = ঊ মরু + উদ্যান = মরূদ্যান ।
উ + ঊ= উ = বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব।
উ + উ= উ বধূ + উৎসব = বধূৎসব।
উ+ উ=উ ভূ + ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব।
১১. উ-কার কিংবা উ-কারের পর উ-কার ও ঊ-কার ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে উ বা ঊ স্থানে ব-ফলা হয় এবং লেখার সময় ব-ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের সাথে লেখা হয়। যেমন-
উ + অ = ব + অ সু + অল্প = স্বল্প ।
উ + আ = ব + আ সু + আগত = স্বাগত ।
উ + ই = ব + ই অনু + ইত = অন্বিত ।
উ + ঈ = ব + ঈ তনু + ঈ=তন্বী ৷
উ + এ = ব + এ অনু + এষণ = অন্বেষণ ।
এরূপ- পশ্বধম, পশ্বাচার, অন্বয়, মন্বন্তর ইত্যাদি।
১২. ঋ-কারের পর ঋ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে ‘ঋ’ স্থানে ‘র’ হয় এবং তা র-ফলা রূপে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন - - পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়, পিতৃ + আদেশ = পিত্রাদেশ ।
১৩. এ, ঐ, ও, ঔ-কারের পর এ, ঐ স্থানে যথাক্রমে অয়, আয় এবং ও, ঔ স্থানে যথাক্রমে অব্ ও আব্
হয়। যেমন-
এ + অ = অয়্ + অ নে + অন = নয়ন। শে + অন = শয়ন ।
ঐ + অ = আহ্ + অ নৈ + অক = নায়ক। গৈ + অক গায়ক।
ও + অ = অব্ + অ পো + অন = পবন। লো + অন = লবণ।
ঔ + অ = আব্ + অ পৌ + অক=পাবক ।
ও + আ = অব্ + আ গো + আদি = গবাদি ।
ও + এ = অব্ + এ গো + এষণা = গবেষণা।
ও + ই = অব্ + ই পো + ইত্ৰ = পবিত্ৰ ৷
ঔ + ই = আব্ + ই নৌ + ইক = নাবিক ।
ঔ + উ = আব্ + উ ভৌ + উক = ভাবুক ।
১৪. কতগুলো সন্ধি কোনো নিয়ম অনুসারে হয় না, এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ বলে। যথা – কুল + অটা - = কুলটা (কুলাটা নয়), গো + অক্ষ = গবাক্ষ (গবক্ষ নয়), প্র + ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ় নয়), অন্য + অন্য = অন্যান্য, মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড, শুদ্ধ + ওদন = শুদ্ধোদন।
তৎসম শব্দের ব্যঞ্জনসন্ধি:
স্বরে-ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে ও ব্যঞ্জনে-ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। এদিক থেকে ব্যঞ্জন সন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ১. ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি ২. স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি ৩. ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।
ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
ক, চ, ট, ত্, প্-এর পরে স্বরধ্বনি থাকলে সেগুলো যথাক্রমে গ্, জ্, ড্ (ড়), দ্, ব্ হয়। পরবর্তী স্বরধ্বনিটি পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন—
ক্ + অ = গ দিক্ + অন্ত =দিগন্ত
চ+ অ = জ ণিচ্ + অন্ত = ণিজন্ত ৷
ট্ + আ = ড় ষট্ + আনন=ষড়ানন ।
ত্ + অ = দ তৎ + অবধি = তদবধি।
প্ + অ = ব সুপ্ + অন্ত = সুবন্ত ।
এরূপ- বাগীশ, তদন্ত, বাগাড়ম্বর, কৃদন্ত, সদানন্দ, সদুপায়, সদুপদেশ, জগদিন্দ্ৰ ইত্যাদি।
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
স্বরধ্বনির পর ছ থাকলে উক্ত ব্যঞ্জনধ্বনিটি দ্বিত্ব (চ্ছ) হয়। যথা—
অ + ছ = চ্ছ এক + ছত্র = একচ্ছত্র।
আ + ছ = চ্ছ কথা + ছলে = কথাচ্ছলে ।
ই + ছ = চ্ছ পরি + ছদ= পরিচ্ছদ।
এরূপ – মুখচ্ছবি, বিচ্ছেদ, পরিচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন, অঙ্গচ্ছেদ, আলোকচ্ছটা, প্রতিচ্ছবি, প্রচ্ছদ, আচ্ছাদন,
বৃক্ষচ্ছায়া, স্বচ্ছন্দে, অনুচ্ছেদ ইত্যাদি।
ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
(ক) ১. ত্ ও দ্-এর পর চ্ ও ছ, থাকলে ত্ ও দৃ স্থানে চ্ হয়। যেমন—
ত্ + চ = চ্চ সৎ + চিন্তা =সচ্চিন্তা।
ত্ + ছ = চ্ছ উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ।
দ্ + চ = চ্চ বিপদ + চয় = বিপচ্চয় ৷
দ্ + ছ = চ্ছ বিপদ + ছায়া = বিপচ্ছায়া।
এরূপ – উচ্চারণ, শরচ্চন্দ্র, সচ্চরিত্র, তচ্ছবি ইত্যাদি।
২. ত্ ও দৃ-এরপর জ্ ও ঝ থাকলে ত্ ও দৃ-এর স্থানে জ্ হয়। যেমন—
ত্ + জ = জ্জ সৎ + জন = সজ্জন।
দৃ + জ = ঞ্জ বিপদ + জাল =বিপজ্জাল ।
ত্ + ঝ = জ্ব কুৎ + ঝটিকা = কুঞ্ঝটিকা।
এরূপ – উজ্জ্বল, তজ্জন্য, যাবজ্জীবন, জগজ্জীবন ইত্যাদি।
৩. ত্ ও দ্-এরপর শ্ থাকলে ত্ ও দ্-এর স্থলে চ্ এবং শ্-এর স্থলে ছ উচ্চারিত হয়। যেমন-
ত্ + শ = চ্ + ছ = চ্ছ উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস
এরূপ – চলচ্ছক্তি, উচ্ছৃঙ্খল ইত্যাদি।
৪. ত্ ও দৃ-এর পর ভ্ থাকলে ত্ ও দৃ এর স্থানে ড্ হয়। যেমন-
ত্ + ড = ড উৎ + ডীন = উড্ডীন ।
এরূপ – বৃহঢক্কা।
৫. ত্ ও দ্ এর পর হ থাকলে ত্ ও দৃ এর স্থলে দ এবং হ এর স্থলে ধূ হয়। যেমন-
ত্ + হ = দৃ + ধ = উৎ + হার = উদ্ধার।
দ্ + হ = দ্ + ধ = পদ্ + হতি = পদ্ধতি।
এরূপ – উদ্ধৃত, উদ্ধত, তদ্ধিত ইত্যাদি।
৬. ত্ ও দ, এর পর ল্ থাকলে ত্ ও দ্-এর স্থলে ল উচ্চারিত হয়। যেমন-
ত্ + ল = ল্ল উৎ + লাস = উল্লাস ।
এরূপ – উল্লেখ, উল্লিখিত, উল্লেখ্য, উল্লঙ্ঘন ইত্যাদি ।
(খ) ১. ব্যঞ্জন ধ্বনিসমূহের যে কোনো বর্গের অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির পর যে কোনো বর্গের ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি কিংবা ঘোষ অল্পপ্রাণ তালব্য ধ্বনি, (য > জ), ঘোষ অল্পপ্রাণ ওষ্ঠ ধ্বনি (ব), ঘোষ কম্পনজাত দত্তমূলীয় ধ্বনি (র) কিংবা ঘোষ অল্পপ্রাণ ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জনধ্বনি (ব) থাকলে প্রথম অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি ঘোষ অল্পপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়। যথা :
ক্ + দ = গ + দ বাক্ + দান = বাগদান ।
ট্ + য = ড্ + য ষট্ + যন্ত্র = ষড়যন্ত্ৰ ৷
ত্ + ঘ = দৃ + ঘ উৎ + ঘাটন = উদ্ঘাটন ।
ত্ + য = দৃ + য উৎ + যোগ = উদ্যোগ ।
ত্ + ব = দৃ + ব উৎ +বন্ধন = উদ্বন্ধন।
ত্ + র = দৃ + র তৎ + রূপ = তদ্রূপ
এরূপ -দিগ্বিজয়, উদ্যম, উদ্গার, উদ্গিরণ, উদ্ভব, বাগ্জাল, সদ্গুরু, বাগদেবী ইত্যাদি।
২. ঙ, ঞ, ণ, ন, ম পরে থাকলে পূর্ববর্তী অঘোষ অল্পপ্রাণ স্পর্শধ্বনি সেই বর্গীয় ঘোষ স্পর্শধ্বনি কিংবা নাসিক্যধ্বনি হয়। যথা :
ক্ + ন = গ + ন দিক্ + নির্ণয় = দিগ্নির্ণয় বা দিনিৰ্ণয়
ত্ + ম = দ/ন+ ম তৎ + মধ্যে = তদ্মধ্যে বা তন্মধ্যে ।
লক্ষণীয় : এরূপ ক্ষেত্রে সাধারণত নাসিক্য ব্যঞ্জনই বেশি প্রচলিত। যেমন – বাক্ + ময় = বাঙ্ময়, তৎ + ময় = তন্ময়, মৃৎ + ময় মৃন্ময়, জগৎ + নাথ = জগন্নাথ ইত্যাদি। এরূপ উন্নয়ন, উন্নীত, চিন্ময় ইত্যাদি = ম্ এর পর যে কোনো বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ ধ্বনিটি সেই বর্গের নাসিক্য ধ্বনি হয়। যেমন—
ম্ + ক্ = ঙ + ক শম্ + কা =শঙ্কা ।
ম্ + চ্ = ঞ + চ্ সম্ + চয় = সঞ্চয়।
ম্ + ত্ নৃ + ত্ সম্ + তাপ=সন্তাপ ৷
এরূপ – কিম্ভূত, সন্দর্শন, কিন্নর, সম্মান, সন্ধান, সন্ন্যাস ইত্যাদি ।
দ্রষ্টব্য : আধুনিক বাংলায় ম্-এর পর কণ্ঠ্য-বর্গীয় ধ্বনি থাকলে ম্ স্থানে প্রায়ই ঙ না হয়ে অনুস্বার (ং) হয় । যেমন— সম্ + গত = সংগত, অহম্ + কার = অহংকার, সম্ + খ্যা সংখ্যা। = এরূপ – সংকীর্ণ, সংগীত, সংগঠন, সংঘাত ইত্যাদি।
৪. ম্-এর পর অন্তঃস্থ ধ্বনি য, র, ল, ব, কিংবা শ, ষ, স, হ থাকলে, ম্ স্থলে অনুস্বার (ং) হয়। যেমন—
সম্ + যম = সংযম,
সম্ + লাপ = সংলাপ
সম্ + বাদ = সংবাদ,
সম্ + শয়= সংশয়
সম্+ রক্ষণ = সংরক্ষণ,
সম্ + সার= সংসার
সম্ + হার = সংহার ।
এরূপ—বারংবার, কিংবা, সংবরণ, সংযোগ, সংযোজন, সংশোধন, সর্বংসহা, স্বয়ংবরা। ব্যতিক্রম : সম্রাট (সম্ + রাট)।
৫. চ্ ও জ্-এর পরে নাসিক্য ধ্বনি তালব্য হয়। যেমন -
চ্ + ন = চ্ শোঞশা যাচ্ + না = যাচ্ঞা, রাজ্ + নী =রাজ্ঞী।
জ্ + ন = জ্ + ঞ, যজ্ + ন = যজ্ঞ,
৬. দৃ ও ধূ এর পরে ক, চ, ট, ত, প, খ, ছ, ঠ, থ, ফ, থাকলে দ্ ও ধূ স্থলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। যেমন-
দৃ>ত্ তদ্ + কাল = তৎকাল
ধৃ>ত্ ক্ষুধ + পিপাসা =ক্ষুৎপিপাসা।
এরূপ – হৃৎকম্প, তৎপর, তত্ত্ব ইত্যাদি।
৭. দ্ কিংবা ধূ-এর পরে স্ থাকলে, দ্ ও ধূ স্থলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়। যেমন- বিপদ্ + সংকুল = বিপৎসংকুল। এরূপ – তৎসম ।
৮. ষ্-এর পরে ত্ বা থ্ থাকলে, যথাক্রমে ত্ ও থ্ স্থানে ট ও ঠ হয়। যেমন -
কৃষ+ তি = কৃষ্টি,
ষষ্ + থ = ষষ্ঠ
৯. বিশেষ নিয়মে সাধিত কতগুলো সন্ধি
সম্ + কার = সংস্কার,
পরি + কার = পরিষ্কার।
উৎ + স্থান = উত্থান
উৎ + স্থাপন = উত্থাপন,
সম্ + কৃত সংস্কৃত,
এরূপ - সংস্কৃতি, পরিষ্কৃত ইত্যাদি।
১০. কতগুলো সন্ধি নিপাতনে সিদ্ধ হয়
আ+ চর্য = আশ্চর্য,
গো + পদ = গোষ্পদ,
বন্ + পতি = বনস্পতি
বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি,
তৎ + কর = তস্কর,
পর্ + পর = পরস্পর,
মনস্ + ঈষা = মনীষা,
ষট্ + দশ = ষোড়শ
এক্ + দশ =একাদশ,
পতৎ + অঞ্জলি = পতঞ্জলি ইত্যাদি।
বিসর্গ সন্ধি-
সংস্কৃত সন্ধির নিয়মে পদের অন্তস্থিত র্ ও স্ অনেক ক্ষেত্রে অঘোষ উষ্মধ্বনি অর্থাৎ হ ধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয় এবং তা বিসর্গ(ঃ) রূপে লেখা হয়। র্ ও স্ বিসর্গ ব্যঞ্জনধ্বনিমালার অন্তর্গত। সে কারণে বিসর্গ সন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বস্তুত বিসর্গ র্ এবং স্-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। বিসর্গকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে : ১. র্ - জাত বিসর্গ ও ২. স্− জাত বিসর্গ ।
১. র্ -জাত বিসর্গ : র স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে বলে র - জাত বিসর্গ । যেমন : অন্তর- অন্তঃ, প্রাতর- প্রাতঃ, পুনর – পুনঃ ইত্যাদি। ২. স্-জাত বিসর্গ : স্ স্থানে যে বিসর্গ হয় তাকে বলে স্-জাত বিসর্গ। যেমন : নমস্ নমঃ, পুরস্ - পুরঃ, শিরস্ – শিরঃ ইত্যাদি।
বিসর্গের সাথে অর্থাৎ র্ ও স্-এর সাথে স্বরধ্বনির কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। বিসর্গ সন্ধি দুইভাবে সাধিত হয় : ১. বিসর্গ + স্বর এবং ২. বিসর্গ + ব্যঞ্জন।
১. বিসর্গ ও স্বরের সন্ধি
অ-ধ্বনির পরস্থিত (অঘোষ উষ্মধ্বনি) বিসর্গের পর অ ধ্বনি থাকলে অ + ঃ + অ – এ তিনে মিলে ও-কার হয়। যেমন— ততঃ + অধিক = ততোধিক ।
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনের সন্ধি
১. অ-কারের পরস্থিত স্-জাত বিসর্গের পর ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি, নাসিক্যধ্বনি কিংবা অন্তস্থ য, অন্তস্থ ব, র, ল, হ থাকলে অ-কার ও স্-জাত বিসর্গ উভয় স্থলে ও-কার হয়। যেমন – তিরঃ + ধান = তিরোধান, মনঃ + রম মনোরম, মনঃ + হর মনোহর, তপঃ + বন তপোবন ইত্যাদি। = =
২. অ-কারের পরস্থিত র্-জাত বিসর্গের পর উপর্যুক্ত ধ্বনিসমূহের কোনোটি থাকলে বিসর্গ স্থানে ‘র’ হয়। যেমন— অন্তঃ + গত = অন্তর্গত, অন্তঃ + ধান অন্তর্ধান, পুনঃ+ আয় = পুনরায়, পুনঃ + উক্ত = পুনরুক্ত, = অহঃ + অহ = অহরহ।
এরূপ – পুনর্জন্ম, পুনর্বার, প্রাতরুত্থান, অন্তর্ভুক্ত, পুনরপি, অন্তবর্তী ইত্যাদি।
৩. অ ও আ ভিন্ন অন্য স্বরের পরে বিসর্গ থাকলে এবং তার সঙ্গে অ, আ, বর্গীয় ঘোষ অল্পপ্রাণ ও ঘোষ মহাপ্রাণ নাসিক্যধ্বনি কিংবা য, র, ল, ব, হ-এর সন্ধি হলে বিসর্গ স্থানে ‘র’ হয়। যেমন-
নিঃ + আকার = নিরাকার, আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ, দুঃ + যোগ = দুর্যোগ ইত্যাদি।
এরূপ - নিরাকরণ, জ্যোতির্ময়, প্রাদুর্ভাব, নির্জন, বহির্গত, দুর্লোভ, দুরন্ত ইত্যাদি। ব্যতিক্রম : ই কিংবা উ ধ্বনির পরের বিসর্গের সঙ্গে 'র' এর সন্ধি হলে বিসর্গের লোপ হয় ও বিসর্গের পূর্ববর্তী হ্রস্ব স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন – নিঃ + রব = নীরব, নিঃ + রস = নীরস ইত্যাদি।
৪. বিসর্গের পর অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা মহাপ্রাণ তালব্য ব্যঞ্জন থাকলে বিসর্গের স্থলে তালব্য শিশ ধ্বনি হয়, অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা অঘোষ মহাপ্রাণ মূর্ধন্য ব্যঞ্জন থাকলে বিসর্গ স্থলে মূর্ধন্য শিশ ধ্বনি হয়, অঘোষ অল্পপ্রাণ কিংবা অঘোষ মহাপ্রাণ দন্ত্য ব্যঞ্জনের স্থলে দন্ত্য শিশ ধ্বনি হয়। যেমন-
ঃ + চ / ছ = শ + চ / ছ নিঃ + চয় = নিশ্চয়, শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ।
ঃ + ট / ঠ = ষ + ট / ঠ ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার, নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর।
ঃ + ত / থ = স + ত / থ দুঃ + তর দুস্তর, দুঃ + থ = দুস্থ। =
৫. অঘোষ অল্পপ্রাণ ও অঘোষ মহাপ্রাণ কণ্ঠ্য কিংবা ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন (ক, খ, প, ফ) পরে থাকলে অ বা আ ধ্বনির পরস্থিত বিসর্গ স্থলে অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি (স্) হয় এবং অ বা আ ব্যতীত অন্য স্বরধ্বনির পরস্থিত বিসর্গ স্থলে অঘোষ মূর্ধন্য শিশ্ ধ্বনি (ষ) হয়। যেমন-
অ এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = স্ + ক নমঃ + কার = নমস্কার।
অ এর পরে বিসর্গ ঃ + খ = স্ + খ পদঃ + খলন পদস্থলন। =
ই এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = ষ + ক নিঃ + কর = নিষ্কর।
উ এর পরে বিসর্গ ঃ + ক = ষ + ক দুঃ + কর = দুষ্কর ।
এরূপ পুরস্কার, মনস্কামনা, তিরস্কার, চতুষ্পদ, নিষ্ফল, নিষ্পাপ, দুষ্প্রাপ্য, বহিষ্কৃত, দুষ্কৃতি, - আবিষ্কার, চতুষ্কোণ, বাচস্পতি, ভাস্কর ইত্যাদি।
৬. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ হয় না। যেমন— প্রাতঃ + কাল = প্রাতঃকাল, মনঃ + কষ্ট · মনঃকষ্ট, শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া। =
৭. যুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনি স্ত, স্থ কিংবা স্প পরে থাকলে পূর্ববর্তী বিসর্গ অবিকৃত থাকে অথবা লোপ পায়। যেমন— নিঃ + স্তব্ধ নিঃস্তব্ধ কিংবা নিস্তব্ধ। দুঃ+স্থ দুঃস্থ কিংবা দুস্থ। নিঃ + স্পন্দ নিঃস্পন্দ কিংবা = = নিস্পন্দ ।
কয়েকটি বিশেষ বিসর্গ সন্ধির উদাহরণ
বাচঃ + পতি = বাচস্পতি, ভাঃ + কর = ভাস্কর, অহঃ + নিশা= অহর্নিশ, অহঃ + অহ = অহরহ ইত্যাদি।
নিপাতের সিদ্ধ সন্ধি -
যেসব স্বরসন্ধি নিয়ম মানে না, নিয়ম ভেঙে সন্ধি হয় তাদের নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। যেমন, ‘কুল+অটা” সন্ধি করে হওয়ার কথা ‘কুলাটা’ (অ+অ = আ)। কিন্তু সন্ধি হওয়ার পর তা হয়ে গেছে ‘কুলটা”। তাই এটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন-
নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি
কুল+অটা = কুলটা
(কুলাটা নয়
প্র+ঊঢ় = প্রৌঢ় (প্রোঢ়
নয়)
মার্ত- + অন্ত = মার্তন্ড
গো+অক্ষ = গবাক্ষ
(গবক্ষ নয়)
অন্য+অন্য = অন্যান্য
(অন্যোন্য নয়)
শুদ্ধ+ওদন = শুদ্ধোদন
(মাৰ্তান্ড নয় )
(শুদ্ধোদন নয়)
নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি-
নিয়মহীনভাবে স্বরধ্বনি আর স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি বলে।
যেমন: অন্য+অন্য= অন্যান্য, আইন+অনুসারে= আইনানুসারে।
নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি-
নিয়মহীনভাবে ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি বলে।
যেমন: এক+দশ= একাদশ, বন্+পতি= বনস্পতি।
ভাষার মুল উপাদান হচ্ছে ধ্বনি । মানুষের বাক -প্রত্যঙ্গ অর্থাৎ কণ্ঠনালী, মুখবিরর, জিহ্বা ,আল- জিহ্বা, কোমল তালু, দাঁত মাড়ি, চোয়াল, ঠোঁট, নাক,ফুস্ফুস ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত আওয়াজকে ধ্বনি বলা হয়।
বাংলা ব্যাকরণের শব্দ বা পদের আলোচনাকে শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব বলে। এক বা একাধিক ধ্বনির অর্থবোধক সম্মিলনে শব্দ তৈরি হয়, শব্দের ক্ষুদ্রাংশকে বলা হয় রূপ। রূপ গঠন করে শব্দ। তাই শব্দতত্ত্বকে রূপতত্ত্ব বলা হয়। শব্দ, শব্দের শ্রেণিবিভাগ, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ, দ্বিরুক্ত শব্দ, বচন, পুরুষ বা পক্ষ, প্রত্যয়, উপসর্গ, অনুসর্গ, পদ ও পদের প্রকারভেদ, সমাস, কারক ইত্যাদি শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।
পদ প্রধানত দুই প্রকার – নামপদ ও ক্রিয়াপদ।
নামপদ আবার চার প্রকার । যেমন – বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম ও অব্যয়। তাহলে পদ হল মোট পাঁচ প্রকার।
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে , এগুলোকে পদাশ্রিত অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে । বচন ভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকেও বিভিন্নতা প্রযুক্ত হয় ।যেমন-
একবচনেঃ টা,টি খানা খানি,গাছি ইত্যাদি নির্দেশক হয় । যেমন-টাকাটা,বাড়িটা,কাপড়খানা,বইখানি ইত্যাদি।
বহুবচনেঃ গুলি,গুলো গুলা প্রভৃতি নির্দেশক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন-মানুষগুলি ,লোকগুলো ইত্যাদি ।
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
ক) এক' শব্দের সঙ্গে টা টি টু যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায় । যেমন- একটি দেশ ,সে যেমনই হোক দেখতে ;এক যে ছিল রাজা।কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা,টি যুক্ত নির্দিষ্টতা বোঝায় ।যেমন- তিনটি বছর ,দশটি বছর ইত্যাদি ।
খ) নিরর্থক ভাবেও নির্দেশক টা টি এর ব্যবহার লক্ষণীয় ।যেমন- সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি ।
গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা টি যুক্ত হলে তা সুনিরররদিষ্ট হয়ে যায় । যেমন - ওটি যেন কার তৈরি ?
বলক-
অনেক সময় আমরা আমাদের বক্তব্যের গুরুত্বকে বাড়ানোর জন্য - অথবা বক্তব্যকে জোরালো করার জন্য কিছু বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ (শব্দাংশ) পদের সঙ্গে যুক্ত করি । এই বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছকে বলক বলে।
যেমন – আমি বইটি এখন পড়ব। আবার আমি বইটি এখনই পড়ব। দ্বিতীয় বাক্যে ‘এখনই' পদের
মাধ্যমে বক্তব্য জোরালো হয়েছে। তাই 'এখনই' পদের শেষাংশের 'ই' হলো বলকের উদাহরণ।
লগ্নক - শব্দ পদে পরিণত হওয়ার পর আরও অতিরিক্ত যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ যুক্ত হয় তাদের লগ্নক বলে।
লগ্নক দুই প্রকার – ১) সলগ্নক ২) অলগ্নক
বাক্যে যেসব পদে লগ্নক থাকে সেগুলোকে সলগ্নক পদ
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে, এগুলোকে পদাশ্রিত অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। বাংলায় নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক প্রত্যয় ইংরেজি Definite Article The'-এর স্থানীয়। বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকেরও বিভিন্নতা প্ৰযুক্ত হয় ৷
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
১.(ক) ‘এক’ শব্দের সঙ্গে টা, টি, যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- একটি দেশ, সে যেমনই হোক দেখতে। কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- তিনটি টাকা, দশটি বছর।
(খ) নিরর্থকভাবেও নির্দেশক টা, টি-র ব্যবহার লক্ষণীয়। যেমন- সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি। ন্যাকামিটা এখন রাখ ।
(গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা, টি যুক্ত হলে তা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন – ওটি যেন কার তৈরি? এটা নয় ওটা আন । সেইটেই ছিল আমার প্রিয় কলম ।
২. ‘গোটা’ বচনবাচক শব্দটির আগে বসে এবং খানা, খানি পরে বসে। এগুলো নির্দেশক ও অনির্দেশক দুই অর্থেই প্রযোজ্য। ‘গোটা’ শব্দ আগে বসে এবং সংশ্লিষ্ট পদটি নির্দিষ্টতা না বুঝিয়ে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন- গোটা দেশই ছারখার হয়ে গেছে। গোটাদুই কমলালেবু আছে (অনির্দিষ্ট)। দুখানা কম্বল চেয়েছিলাম (নির্দিষ্ট)। গোটাসাতেক আম এনো। একখানা বই কিনে নিও (অনির্দিষ্ট)।
কিন্তু কবিতায় বিশেষ অর্থে ‘খানি’ নির্দিষ্টার্থে ব্যবহৃত হয়। যথা—‘আমি অভাগা এনেছি বহিয়া নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি ।
৩.টাক, টুক, টুকু, টো ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন – পোয়াটাক দুধ দাও (অনির্দিষ্টতা)। সবটুকু ওষুধই খেয়ে ফেলো (নির্দিষ্টতা)।
৪.বিশেষ অর্থে, নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ : তা, পাটি ইত্যাদি। যেমন-
তা : দশ তা কাগজ দাও ।
পার্টি : আমার একপাটি জুতো ছিঁড়ে গেছে।
একবচনাত্মক – টা, টি, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন- টাকাটা, বাড়িটা, - কাপড়খানা, বইখানি, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি ইত্যাদি।
বহুবচনাত্মক-
গুলি, গুলা, গুলো, গুলিন প্রভৃতি নিদের্শক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন – মানুষগুলি,লোকগুলো, আমগুলো, পটলগুলিন ইত্যাদি।
বিশেষ্য পদ
কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে।
বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি,বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে ।
সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য : যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগোলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থ বিশেষের নাম বিজ্ঞাপিত হয়, তাকে সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য বলে। যথা-
(ক) ব্যক্তির নাম : নজরুল, ওমর, আনিস, মাইকেল
(খ) ভৌগোলিক স্থানের : ঢাকা, দিল্লি, লন্ডন, মক্কা
(গ) ভৌগোলিক সংজ্ঞা (নদী, পর্বত, সমুদ্র ইত্যাদি) মেঘনা, হিমালয়, আরব সাগর
(ঘ) গ্রন্থের নাম :‘গীতাঞ্জলি’, ‘অগ্নিবীণা’, ‘দেশে বিদেশে’, ‘বিশ্বনবি
জাতিবাচক বিশেষ্য : যে পদ দ্বারা কোনো একজাতীয় প্রাণী বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায়, তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন— মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ।
বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য : যে পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায়, তাকে বস্তুবাচক বা দ্রব্যবাচক বিশেষ্য বলে। এই জাতীয় বস্তুর সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। যথা— বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, চাল, চিনি, লবণ, পানি।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য :
যে পদে বেশকিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টি বোঝায়, তা–ই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যথা— সভা, জনতা, সমিতি, পঞ্চায়েত, মাহফিল, ঝাঁক, বহর, দল।
ভাববাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য পদে কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশিত হয়, তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যথা— গমন (যাওয়ার ভাব বা কাজ), দর্শন (দেখার কাজ), ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), দেখা, শোনা।
গুণবাচক বিশেষ্য :
যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ বা গুণের নাম বোঝায়, তা–ই গুণবাচক বিশেষ্য । যথা—মধুর মিষ্টত্বের গুণ— মধুরতা, তরল দ্রব্যের গুণ—তারল্য, তিক্ত দ্রব্যের দোষ বা গুণ— তিক্ততা, তরুণের গুণ—তারুণ্য ইত্যাদি। তদ্রুপ : সৌরভ, স্বাস্থ্য, যৌবন, সুখ, দুঃখ।
বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।
চলন্ত গাড়ি : বিশেষ্যের বিশেষণ ।
করুণাময় তুমি: সর্বনামের বিশেষণ
দ্রুত চল :ক্রিয়া বিশেষণ ৷
বিশেষণ দুই ভাগে বিভক্ত। যথা—১. নাম বিশেষণ ও ২. ভাব বিশেষণ।
নাম বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে। যথা-
বিশেষ্যের বিশেষণ : সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে ?
সর্বনামের বিশেষণ : সে রূপবান ও গুণবানরূপবাচক ; নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ
পরিমাণবাচক : বিঘাটেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ, এক কেজি চাল
দু কিলোমিটার রাস্তা।
দুই বা তার বেশি সমাসবদ্ধ পদ বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে বিশেষণের কাজ করলে তাকে বহুপদী বিশেষণ বলে। উদাহরণ: পিছনে-ফেলে-আসা দিন। মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো ছেলে।
ভাব বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষিত করে তা-ই ভাব বিশেষণ । ভাব বিশেষণ চার প্রকার : ১. ক্রিয়া বিশেষণ ২. বিশেষণের বিশেষণ বা বিশেষণীয় বিশেষণ ৩. অব্যয়ের বিশেষণ ৪. বাক্যের বিশেষণ।
ক্রিয়া বিশেষণ : যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
ক্রিয়া সংগঠনের ভাব : ধীরে ধীরে বায়ু বয় ।
ক্রিয়া সংগঠনের কাল : পরে একবার এসো।
বিশেষণীয় বিশেষণ : যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে, তাকে বিশেষণীয় বিশেষণ বলে। যথা-
ক. নাম বিশেষণের বিশেষণ : সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত ।
খ. ক্রিয়া-বিশেষণের বিশেষণ : রকেট অতি দ্রুত চলে।
অব্যয়ের বিশেষণ : যে ভাব-বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যথা— ধিক্ তারে, শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।
বাক্যের বিশেষণ : কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করতে পারে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন-
দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন ।
একপদময় বিশেষণ পদে একটীর অধিক শব্দ থাকে না; যথা- 'বড়, ভাল, ছোট, মন্দ, সুন্দর, মুক্ত, অলৌকিক, চতি, এক, পাঁচ, এ, এই, ঐ, সে ” ইত্যাদি । (সমাসে ক্বচিৎ বিশেষণের অর্থ বদলায় যথা--- বড়-মানুষ, ভাল মানুষ, মুক্ত-পুরুষ 1 )
বহুপদময় বা বাক্যময় বিশেষণ- যার-পর-নাই পী বৎপরোনাস্তি পরিশ্রম সব-পেরেছি-র দেশ সাত-রাজার-বন নাকি কুরিয় পাওয়া ছেলে; জো হুকুম; আপ-কাওয়াস্তে পড়ে-পাওয়া পাঁচ-ক্রোশের প তিরিশ-দিনের দিন যাচ্ছেতাই (=অপকৃষ্ট, নিকৃষ্ট < যাহা-ইচ্ছা-তাই); আলানে'-পর-ভালানে' ছেলে ; আপন কাজে-আপনিই ব্যস্ত মানুষ "; ইত্যাদি।
সর্বনাম পদ
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
সর্বনাম সাধারণত ইতোপূর্বে ব্যবহৃত বিশেষ্যের প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দ। যেমন— হস্তী প্রাণিজগতের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তার শরীরটি যেন বিরাট এক মাংসের স্তূপ।
দ্বিতীয় বাক্যে ‘তার' শব্দটি প্রথম বাক্যের 'হস্তী' বিশেষ্য পদটির প্রতিনিধি স্থানীয় শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই, ‘তার' শব্দটি সর্বনাম পদ। বিশেষ্য পদ অনুক্ত থাকলেও ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ্য পদের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন—
ক. যারা দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারে, তারাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ।
খ. ধান ভানতে যারা শিবের গীত গায়, তারা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তাহারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ও, ওরা ইত্যাদি।
যেসব pronoun কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর পরিবর্তে বসে সেই ব্যক্তি ববা বস্তুকে নির্দেশ করে তাদেরকে নির্দেশক সর্বনাম (Demonstrative Pronoun) বলে। যেমন- এটা, ওটা, এগুলো ইত্যাদি।
সাপেক্ষ সর্বনাম (Relative Pronoun)
যে সকল সর্বনাম দ্বারা একটি বাক্যের সাপেক্ষে অন্য বাক্যকে যুক্ত করা হয়, তাদেরকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলা হয়।
অনিশ্চয়বাচক যৌগিক সর্বনাম ( Indefinite Compound Pronoun)
যখন একাধিক শব্দ একত্রিত হয়ে একটি সর্বনাম তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক সর্বনাম বলে। যেমন- অন্য-কিছু, অন্য-কেউ, আর-কিছু, আর-কেউ, কেউ-না-কেউ, কেউ-বা, যা-কিছু, যা-তা, যে-কেউ, যে-কোন, যে-সে।
ক্রিয়াপদ
পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া বলে। অথবা ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হলো ক্রিয়া।ক্রিয়াপদের আরেকটি নাম হলো আখ্যাত বা আখ্যাতিক পদ।
[ক্রিয়ামূল তথা ধাতুর সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী কালসূচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করতে হয়। [৩]সংক্ষেপে ধাতু+বিভক্তি = ক্রিয়াপদ
যেমন: √পড়্+এ=পড়ে
সমাপিকা ক্রিয়া সম্পাদনা যে ক্রিয়াপদ বাক্যকে পরিপূর্ণ করে এবং বাক্যের অর্থকে সুস্পষ্ট করে তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। আমি বাড়ি যাব। আমরা সন্ধ্যায় পড়তে বসব।
অসমাপিকা ক্রিয়া
সম্পাদনা
যে ক্রিয়াপদ দ্বারা বাক্যের পরিসমাপ্তি ঘটে না, বক্তার কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
আমরা হাত-মুখ ধুয়ে…
প্রভাতে সূর্য উঠলে…
অসমাপিকা ক্রিয়া ৩ প্রকার ১.ভূত অসমাপিকা ক্রিয়া ২.ভাবী অসমাপিকা ক্রিয়া ৩.শর্ত অসমাপিকা ক্রিয়া
অকর্মক
সম্পাদনা
যে বাক্যে একটিও কর্ম থাকে না তাকে অকর্মক বলে। যেমন:
সে হাসছে ।
রমা নাচছে ।
এখানে 'হাসছে' ও 'নাচছে' ক্রিয়ার কর্ম নেই , আবার এদের ক্রিয়া ধারণের ক্ষমতাও নেই ,তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া।
সকর্মক সম্পাদনা
যে বাক্যে একটি কর্ম থাকে তাকে সকর্মক বলে।যেমন:
আমি ভাত খাচ্ছি।
সে বই পড়ছে।
এখানে কী খাচ্ছি আর কী পড়ছে' তা বলা রয়েছে। কাজেই বাক্য দুটিতে খাচ্ছি এবং পড়ছে সকর্মক ক্রিয়া।
দ্বিকর্মক
সম্পাদনা
যে বাক্যে দুটি কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মক বলা হয়।
এক্ষেত্রে, ববস্তুবাচক কর্মপদটি মুখ্যকর্ম, আর ব্যক্তিবাচক কর্মপদটি গৌণ কর্ম।
শিক্ষক ছাত্রদের(গৌণ কর্ম) বাংলা(মুখ্যকর্ম) পড়াচ্ছেন।
বাবা আমাকে(গৌণ কর্ম) একটি কলম(মুখ্যকর্ম) কিনে দিয়েছেন
প্রযোজক ক্রিয়া
সম্পাদনা
যে ক্রিয়া অন্যের দ্বারা চালিত হয় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।যেমন
মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
সাপুড়ে সাপ খেলাচ্ছে।
এখানে "মা" এবং "সাপুড়ে" প্রযোজক কর্তা, "শিশু" ও "সাপ" প্রযোজ্য কর্তা। "চাঁদ দেখাচ্ছেন" ও "খেলাচ্ছে" প্রযোজক ক্রিয়া।
যুক্ত ক্রিয়া - বিশেষ্য ,বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে কর্,দি,হ্,পা,কাট্,মার্,ফেল্ ইত্যাদি মৌলিকধাতু নিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠন করে তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে । যেমন- উত্তর দিল , সাঁতার কাটে
যৌগিক ক্রিয়া - একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ও সমাপিকা ক্রিয়া নিয়ে গঠিত ক্রিয়াকে যৌগিক ক্রিয়া বলে । যেমন- সে বসিয়া পড়িল ।
মিশ্র ক্রিয়া
বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, হ্, দে, পা, যা কাট্, গা, ছাড়, ধর্, মার্, প্রভৃতি ধাতু যোগ হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে কোন বিশেষ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে মিশ্র ক্রিয়া বলে।
যেমন-
বিশেষ্যের পরে : আমরা তাজমহল দর্শন করলাম। গোল্লায় যাও। বিশেষেণের পরে : তোমাকে দেখে বিশেষ প্রীত হলাম। ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের পরে করে বৃষ্টি পড়ছে। : মাথা ঝিম ঝিম করছে। ঝম ঝম
ক্রিয়া বিশেষণ
যে শব্দ ক্রিয়াকে বিশেষিত করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। নিচের বাক্য তিনটির নিম্নরেখ শব্দগুলাে ক্রিয়া বিশেষণের উদাহরণ:
ছেলেটি দ্রুত দৌড়ায়।
লোকটি ধীরে হাঁটে।
মেয়েটি গুনগুনিয়ে গান করছে।
অনেক সময়ে বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের সঙ্গে ‘এ’, ‘তে’ ইত্যাদি বিভক্তি এবং ‘ভাবে’, ‘বশত’, ‘মতাে ইত্যাদি শব্দাংশ যুক্ত হয়ে ক্রিয়াবিশেষণ তৈরি হয়। যেমন – ততক্ষণে, দ্রুতগতিতে, শান্তভাবে, ভ্রান্তিবশত, আচ্ছামতাে ইত্যাদি।
ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: কোনাে ক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়, ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ তা নির্দেশ করে। যেমন –
টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে।
ঠিকভাবে চললে কেউ কিছু বলবে না।
কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: এই ধরনের ক্রিয়াবিশেষণ ক্রিয়া সম্পাদনের কাল নির্দেশ করে। যেমন –
আজকাল ফলের চেয়ে ফুলের দাম বেশি।
যথাসময়ে সে হাজির হয়।
স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: ক্রিয়ার স্থান নির্দেশ করে স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ। যেমন –
মিছিলটি সামনে এগিয়ে যায়।
তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নেতিবাচক ক্রিয়াবিশেষণ: না, নি ইত্যাদি দিয়ে ক্রিয়ার নেতিবাচক অবস্থা বােঝায়। এগুলাে সাধারণত ক্রিয়ার পরে বসে। যেমন –
সে এখন যাবে না।
তিনি বেড়াতে যাননি।
এমন কথা আমার জানা নেই।
পদাণু ক্রিয়াবিশেষণ: বাক্যের মধ্যে বিশেষ কোনাে ভূমিকা পালন না করলেও ‘কি’, ‘যে’, বা’,না’, ‘তাে’ প্রভৃতি পদাণু ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে কাজ করে। যেমন –
কি: আমি কি যাব?
যে : খুব যে বলেছিলেন আসিবেন!
বা: কখনাে বা দেখা হবে।
না: একটু ঘুরে আসুন না, ভালাে লাগবে।
তাে: মরি তাে মরব।
গঠন বিবেচেনায় ক্রিয়াবিশেষণকে একপদী ও বহুপদী – এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
একপদী ক্রিয়াবিশেষণ: আপ্তে, জোরে, চেঁচিয়ে, সহজে, ভালােভাবে ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদ রূপে, আবার কখনো শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে।
অনুসর্গগুলো কখনো প্রাতিপদিকের পরে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো বা ‘কে’ এবং ‘র’ বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে বসে। যেমন-
বাংলা ভাষায় বহু অনুসর্গ আছে। যেমন—
প্রতি, বিনা, বিহনে, সহ, ওপর, অবধি, হেতু, মধ্যে, মাঝে, পরে, ভিন্ন, বই, ব্যতীত, জন্যে, জন্য, পর্যন্ত অপেক্ষা, সহকারে, তরে, পানে, নামে, মতো, নিকট, অধিক, পক্ষে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক, সঙ্গে, হইতে, হতে, থেকে, চেয়ে, পাছে, ভিতর, ভেতর ইত্যাদি ।
এদের মধ্যে দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক, হইতে (হতে), চেয়ে, অপেক্ষা, মধ্যে প্রভৃতি কয়েকটি অনুসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়। কারক প্রকরণে এদের উদাহরণ সন্নিবিষ্ট হয়েছে।
অনুসর্গের প্রয়োগ
১।বিনা/বিনে : কর্তৃ কারকের সঙ্গে – তুমি বিনা (বিনে) আমার কে আছে ?
বিনি : করণ কারকের সঙ্গে – বিনি সুতায় গাঁথা মালা ।
বিহনে : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
২.সহ : সহগামিতা অর্থে – তিনি পুত্রসহ উপস্থিত হলেন।
সহিত : সমসূত্রে অর্থে – শত্রুর সহিত সন্ধি চাই না।
সনে : বিরুদ্ধগামিতা অর্থে – ‘দংশনক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।’
সঙ্গে তুলনায় – মায়ের সঙ্গে এ মেয়ের তুলনা হয় না ।
৩. অবধি : পর্যন্ত অর্থে – সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করব।
৪.পরে : স্বল্প বিরতি অর্থে — এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না ।
পর : দীর্ঘ বিরতি অর্থে শরতের পরে আসে বসন্ত ৷
৫. পানে : প্রতি, দিকে অর্থে – ঐ তো ঘর পানে ছুটেছেন
‘ শুধু তোমার মুখের পানে চাহি বাহির হনু।'
৬.মতো ন্যায় অর্থে – বেকুবের মতো কাজ করো না।
তরে মত অর্থে - এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম ।
৭. পক্ষে সক্ষমতা অর্থে – রাজার পক্ষে সব কিছুই সম্ভব।
সহায় অর্থে –আসামির পক্ষে উকিল কে?
৮. মাঝে মধ্যে অর্থে – ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি'।
একদেশিক অর্থে এ দেশের মাঝে একদিন সব ছিল।
ক্ষণকাল অর্থে – নিমেষ মাঝেই সব শেষ ।
মাঝারে : ব্যাপ্তি অর্থে – ‘আছ তুমি প্রভু, জগৎ মাঝারে।
৯.কাছে নিকটে অর্থে – আমার কাছে আর কে আসবে?
কর্মকারকে ‘কে’ বোঝাতে – ‘রাখাল শুধায় আসি ব্রাহ্মণের কাছে।'
১০.প্রতি প্রত্যেক অর্থে – মণপ্রতি পাঁচ টাকা লাভ দেব।
দিকে বা ওপর অর্থে – ‘নিদারুণ তিনি অতি অতি, নাহি দয়া তব প্রতি।'
১১. হেতু : নিমিত্ত অর্থে –‘কী হেতু এসেছ তুমি, কহ বিস্তারিয়া । '
জন্যে নিমিত্ত অর্থে – ‘এ ধন-সম্পদ তোমার জন্যে। '
সহকারে : সঙ্গে অর্থে – আগ্রহ সহকারে কহিলেন।
বশত : কারণে অর্থে – দুর্ভাগ্যবশত সভায় উপস্থিত হতে পারিনি।
সাধারণ অনুসর্গ: এধরনের অনুসর্গ পদ ক্রিয়াপদ ব্যতীত অন্য পদগুলো থেকে উৎপন্ন হয়।যেমন: উপরে, কাছে, জন্য, দ্বারা, বনাম।
ক্রিয়াজাত অনুসর্গ: এধরনের অনুসর্গ পদ শুধুমাত্র ক্রিয়াপদ থেকেই উৎপন্ন হয়।যেমন: করে, থেকে, দিয়ে, ধরে, বলে।
যোজক
যে শব্দ একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্য বা বাক্যাংশের কিংবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যোজক বলে। যেমন– আমি গান গাইব আর তুমি নাচবে।
অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজক শব্দ পাঁচ প্রকার।
আবেগ
যেসব শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় আবেগ শব্দ। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহূত হয়।
মানুষের বিচিত্র আবেগের প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা যায়।
১.সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ ২. প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ ৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ ৪. ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ ৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ ৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ ৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ ৮. অলঙ্কারিক আবেগ শব্দ
যোজক
যে শব্দ একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সঙ্গে অন্য একটি বাক্য বা বাক্যাংশের কিংবা বাক্যস্থিত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যোজক বলে। যেমন– আমি গান গাইব আর তুমি নাচবে।
অর্থ এবং সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যোজক শব্দ পাঁচ প্রকার।
সাধারণ যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে সংযুক্ত করা যায় তাকে সাধারণ যোজক বলে। যেমন– আমি ও আমার বাবা বাজারে এসেছি।
বৈকল্পিক যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে বিকল্প বোঝায় তাকে বৈকল্পিক যোজক বলে। যেমন– তুমি বা তোমার বন্ধু যে কেউ এলেই হবে।
বিরোধমূলক যোজক : এ ধরনের যোজক দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টি দ্বারা প্রথমটির বিরোধ নির্দেশ করে। যেমন– আমি চিঠি দিয়েছি কিন্তু উত্তর পাইনি।
সাপেক্ষ যোজক : পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজকগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন– যদি টাকা দাও তবে কাজ হবে।
আবেগ
যেসব শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় আবেগ শব্দ। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহূত হয়।
মানুষের বিচিত্র আবেগের প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা যায়।
১.সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ ২. প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ ৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ ৪. ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ ৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ ৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ ৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ ৮. অলঙ্কারিক আবেগ শব্দ
সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ : যে শব্দের সাহায্যে অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- বেশ, তুমি যা বলছ, তা-ই হবে।
প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ প্রশংসার মনোভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- বাঃ! চমৎকার একটা গল্প লিখেছ!
বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ ঘৃণা, অবজ্ঞা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে বিরক্তিসূচক শব্দ বলে।
যেমন- ছি! ছি! এটা তুমি কী বললে!
ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ আতঙ্ক, যন্ত্রণা ও ভয় প্রকাশে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- আঃ! কী বিপদ!
বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ বিস্মিত বা আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে বলা হয় বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ। যেমন- আরে! তুমি আবার কখন এলে!
করুণাসূচক আবেগ : যেসব শব্দ করুণা, সহানুভূতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- হায়! হায়! এ অনাথ শিশুদের এখন কে দেখবে!
সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ সম্বোধন বা আহ্বান করার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- হে বন্ধু, তোমাকে অভিনন্দন।
আলঙ্কারিক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ বাক্যের অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে কোমলতা, মাধুর্য ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য এবং সংশন, অনুরোধ, মিনতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের জন্য অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহূত হয়, সেগুলোকে আলঙ্কারিক আবেগ শব্দ বলে। যেমন- যাক গে যাক! ওসব ভেবে লাভ নেই।
অব্যয় পদ
ন ব্যয় = অব্যয়। যার ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়। অব্যয় শব্দের সাথে
কোনো বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না ।
যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের, বাক্যাংশের বা বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বদ্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে ।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে— বাংলা অব্যয় শব্দ, তৎসম অব্যয় শব্দ এবং বিদেশি অব্যয় শব্দ ।
বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
তৎসম অব্যয় শব্দ : যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি। ‘এবং’ ও ‘সুতরাং’ তৎসম শব্দ হলেও বাংলায় এগুলোর অর্থ পরিবর্তিত হয়েছে। সংস্কৃতে ‘এবং’ শব্দের অর্থ এমন, আর ‘সুতরাং’ অর্থ অত্যন্ত, অবশ্য। কিন্তু এবং = ও (বাংলা), সুতরাং = অতএব (বাংলা)।
৩. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি ।
পদান্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।
যেমন - কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।
ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়।
অনন্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে।
যেমন– বাঃ! কী সুন্দর দৃশ্য! হায়। আমার কপালে কি এই ছিল? মা, আমাকে আশীর্বাদ করো।
এখানে বা: হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।
বাক্যালঙ্কার অব্যয় :-
যে অব্যয় বাক্যের মধ্যে বসে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাকে বাক্যালঙ্কার অব্যয় বলে।
যেমন - এ গাড়ি তো গাড়ি নয়। দেখে মনে হয় যেন উরজাহাজ। 'তো' 'যেন' এগুলি বাক্যালঙ্কার অব্যয়। কারণ এগুলি বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
ভাবপ্রকাশক অব্যয় :-
যে অব্যয় বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাব প্রকাশক অব্যয় বলে।
যেমন - মরি মরি! একি লজ্জা! ধন্য ধন্য। বাংলাদেশ।
এখানে মরি মরি, ধন্য ধন্য বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছে। তাই এগুলি ভাব প্রকাশক অব্যয়।
সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় :-
যে অব্যয় পদের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে।
যেমন - হ্যাঁ, আমি তো যাবই। না, কথাটা সত্যি নয়।
এখানে হ্যাঁ সম্মতিসূচক অব্যয় এবং না অসম্মতিসূচক অব্যয়
উপমাবাচক অব্যয় :-
যে সব অব্যয়ের দ্বারা উপমা বা তুলনাকে বোঝায় তাকে, উপমাবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - চাঁদের মতো সুন্দর। মিছরির ন্যায় মিষ্টি। তুলোর মতো নরম।
অনুকার অব্যয় :-
যে সব শব্দ ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় তাকে, ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকার অব্যয় বলে।
যেমন - ঝমঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে। শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইছে। হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।
বাক্যান্বয়ী অব্যয় :-
যে অব্যয় বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ স্থাপন করে তাদের বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।
সংযোজক অব্যয় :-
যে অব্যয় পদ বাক্যের সঙ্গে বাক্যের বা পদের সঙ্গে পদের সংযোগ সাধন করে, তাকেই সংযোজক অব্যয় বলে।
যেমন - আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।
বিয়োজক অব্যয় :-
বিকল্প বোঝাতে বাক্যের মধ্যে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকেই বিয়োজক অব্যয় বলে।
যেমন - হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।
সংকোচক অব্যয় :-
যে অব্যয় একটি বিষয়কে সংকুচিত করে কিন্তু অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তাকে সংকোচক অব্যয় বলে।
যেমন - এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
হেতুবাচক অব্যয় :-
কারণ বোঝাতে যে অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তাঁর কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।
সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় :-
যে অব্যয়ের দ্বারা সিদ্ধান্ত বোঝায় তাকে সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে।
যেমন - মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। শ্যাম আসবে বলে রাম বসেছিল।
নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় :-
এমন কতগুলো অব্যয় আছে যারা একে অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত একটি বসলে অপরটি বসবেই, একে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।
যেমন - বটে কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।
কাল : ক্রিয়া সংঘটনের সময়কে কাল বলে।
১. আমরা বই পড়ি। ‘পড়া’ ক্রিয়াটি এখন অর্থাৎ বর্তমানে সংঘটিত হচ্ছে।
২. কাল তুমি শহরে গিয়েছিলে। ‘যাওয়া’ ক্রিয়াটি পূর্বে অর্থাৎ অতীতে সম্পন্ন হয়েছে।
৩. আগামীকাল স্কুল বন্ধ থাকবে। ‘বন্ধ থাকা' কাজটি পরে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে। সুতরাং, ক্রিয়া, বর্তমান, অতীত বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হওয়ার সময় নির্দেশই ক্রিয়ার কাল। এ হিসেবে ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার : ১. বর্তমান কাল, ২. অতীত কাল এবং ৩. ভবিষ্যৎ কাল।
বর্তমান কাল :-
যে ক্রিয়া এখন সম্পন্ন হয় বা হচ্ছে বুঝায়, তাকে বর্তমান কাল বলে। যেমন:
আমি পড়ি।
সে যায়।
কাকলি দৌড়ায়।
নিত্য বা সাধারণ বর্তমান :-
সাধারণভাবে যে ক্রিয়া বর্তমানে ঘটে, বা নিত্যই ঘটে, তাকে বলা হয় নিত্য-বর্তমান।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর সঙ্গে ই, অ, এন, ইস্, এ ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন :
সে হাসে। আমি পড়ি। সূর্য ওঠে। মানুষ মরে। বাতাস বয়।
ঘটমান বর্তমান :-
বর্তমানে যে ক্রিয়ার কাজ আরম্ভ হয়েও শেষ হয়নি, অর্থাৎ যে-ক্রিয়ার কাজ এখনও চলছে, তাকে বলা হয় ঘটমান বর্তমান।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে ইতেছে’ (ছে), ইতেছ (ছ), ইতেছি (ছি) প্রভৃতি ক্রিয়া-বিভক্তি বসে। সাধুভাষায় ইতেছে, ইতেছ, ইতেছি এবং চলিতভাষায় ছে, ছ, ছি প্রভৃতি ক্রিয়া-বিভক্তি বসে। যদিও বর্তমানে চলিতভাষা প্রাধান্য পেয়েছে, তবুও সাধুভাষায় ক্রিয়া-বিভক্তির রূপগুলি জানা প্রয়োজন।
বন্ধনীর মধ্যে চলিতভাষার ক্রিয়ারুপ দেখানো হয়েছে। যেমন :
সে হাসিতেছে (হাসছে)।
তুমি কাঁদিতেছ, (কাঁদছ)।
আমি পড়িতেছি (পড়ছি)।
সূর্য উঠিতেছে (উঠছে) ইত্যাদি।
পুরাঘটিত বর্তমান :-
কিছুক্ষণ পূর্বে যে ক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে, অথচ যার ফল এখনও বর্তমান, তার কালকে বলা হয় পুরাঘটিত বর্তমান।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে ইয়াছে (এছে), ইয়াছ (আছ), ইয়াছি (এছি) প্রভৃতি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়।
যেমন :
সে হাসিয়াছে (হেসেছে)।
তুমি কাঁদিয়াছ (কেঁদেছ)।
আমি পড়িয়াছি (পড়েছি) ইত্যাদি।
ক্রিয়া আগেই সম্পন্ন হয়েছে, তার কালকে অতীত কাল বলে। যেমন:
আমি তাকে দেখেছিলাম।
গতকাল ঢাকা গিয়েছিলাম।
মা রান্না করছিলেন।
অতীত কালের প্রকারভেদ :-
অতীত কালকে চারভাগে ভাগ করা যায়।
যেমন -
১.নিত্য-অতীত;
২. ঘটমান অতীত;
৩. পুরাঘটিত অতীত এবং
৪. নিত্যবৃত্ত-অতীত।
নিত্য বা সাধারণ অতীত :-
সাধারণভাবে যে-ক্রিয়ার কাজ পূর্বে অর্থাৎ, অতীতে সম্পূর্ণ হয়েছে তার কালকে বলা হয় নিত্য-অতীত। এতে নির্দিষ্ট কোনো সময়ের উল্লেখ থাকে না। তবে বাক্য থেকে বুঝা যায় যে, এই শ্রেণির কাজ খুব বেশি পূর্বে নিষ্পন্ন হয়নি।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে-ইলাম (লাম), ইলে (লে), ল প্রভৃতি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন :
হেনা গান গাহিল (গাইল)।
আমি একটি গল্প লিখিলাম (লিখলাম)।
বাবা বাজার হইতে (থেকে) আসিলেন (এলেন)।
নিত্যবৃত্ত অতীত :
পূর্বে যে ক্রিয়ার কাজ কিছুকাল ধরে চলত বা নিয়মিত ভাবে যে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হত, তার কালকে বলা হয় নিত্যবৃত্ত অতীত।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে-ইত (-ত), ইতাম (-তাম), ইতে (-তে) ইত্যাদি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ
প্রত্যহ সকালে হেনা সঙ্গীতচর্চা করিত (রোজ সকালে হেনা গানের রেওয়াজ করত)।
আমি যখন ঘুম হইতে উঠিতাম (আমি যখন ঘুম থেকে উঠতাম)।
বাবা তখন প্রাতর্জ সারিয়া বাড়িতে ফিরিতেন।
ঘটমান অতীত কাকে বলে :-
পূর্বে যে-ক্রিয়ার কাজ হচ্ছিল এবং তখনও যা সম্পূর্ণ হয়নি, তার কালকে বলা হয় ঘটমান অতীত।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে- ইতেছিলাম (ছিলাম), -ইতেছিলে (ছিলে). ইতেছিল (ছিল) ইত্যাদি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন :
হেনা গান গাহিতেছিল (গাইছিল, গাচ্ছিল)।
আমি একটি গল্প লিখিতেছিলাম (লিখছিলাম)।
বাবা বাজার হইতে (থেকে) আসিতেছিলেন (আসছিলেন)।
পুরাঘটিত-অতীত :
অনেক পূর্বেই যে ক্রিয়ার কাজ ঘটেছিল, তাকে বলা হয় পুরাঘটিত-অতীত।
এই ঝাল বুঝাতে ধাতুর শেষে ইয়াছিল (এছিল), ইয়াছিলাম (এছিলাম), ইয়াছিলে (-এছিলে) ইত্যাদি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন :
হেনা গান গাহিয়াছিল (গেয়েছিল)।
আমি একটি গল্প লিখিয়াছিলাম (লিখেছিলাম)।
তখন বাবা বাজার থেকে আসিয়াছিলেন (এসেছিলেন)।
ভবিষ্যৎ কাল কাকে বলে :-
যে ক্রিয়া আগামীতে বা ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে এমন বোঝায়, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন:
বৃষ্টি আসবে।
সীমা কাল গান গাইবে।
পার্থ নাচবে।
সাধারণ ভবিষ্যৎ :-
পরে অর্থাৎ ভবিষ্যতে যে ক্রিয়ার কাজ অনুষ্ঠিত হবে, তার কালকে বলা হয় সাধারণ ভবিষ্যৎ।
এই কাল বুঝাতে ধাতুর শেষে হবে -ইব (-ব), (-বে) ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ
কাল পরীক্ষা হইবে (হবে)।
আমি তোমার গান শুনিব (শুনব)।
বাবা বেড়াইতে যাইবেন (বেড়াতে যাবেন)।
ঘটমান ভবিষ্যৎ :-
পরে যে ক্রিয়া ঘটতে থাকবে, তার কালকে বলা হয় ঘটমান-ভবিষ্যৎ।
এই কাল বুঝাতে মূল ধাতুর শেষে-ইতে (-তে) ক্রিয়া-বিভক্তি এবং তার পরে আছ (থাক্) ধাতুর সাথে -ইব (-ব), ইবে (-বে), ইবি (-বি) ইত্যাদি ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমনঃ
সে তখন হাঁটিতে থাকিবে (হাঁটতে থাকবে)।
আমি যখন লিখিতে থাকিব (লিখতে থাকব)।
পাশের বাড়িতে তখন কাসরঘণ্টা বাজিতে থাকিবে (বাজতে থাকবে)।
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ :-
পূর্বে যে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়ে থাকবে, তার কাল হয় পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ। যেমন :
আপনি সেদিন আমাকে ভুল বুঝিয়া থাকিবেন (বুঝে থাকবেন)। সেই হয়তো লিখিয়া থাকিবে (লিখে থাকবে) ইত্যাদি।
ক্রিয়ার ভাবের সংজ্ঞা : যা দ্বারা ক্রিয়াপদের বর্ণিত কার্য ঘটার ধরন, প্রকার বা রীতিবোধ প্রকাশ পায়, তাকে ক্রিয়ার প্রকার বা ভাব বা ধরন বলে।
অথবা, যা দ্বারা কোনো কাজ সংঘটিত হওয়ার ভাব অর্থাৎ রীতি প্রকাশ পায় তাকে ক্রিয়ার ভাব বা প্রকার বলে।
ক্রিয়ার ভাবের প্রকারভেদ : ক্রিয়ার প্রকার বা ভাব চার ভাগে বিভক্ত। যথা–
(১) নির্দেশক ভাব
(২) অনুজ্ঞা ভাব
(৩) শর্তবাচক ভাব
(৪) আকাঙ্ক্ষাবাচক ভাব
নির্দেশক বা অবধারক ভাব : সাধারণভাবে কোনো কিছু নির্দেশ করলে তখন তাকে ক্রিয়াপদের নির্দেশক ভাব বলে। যেমন– “অর্থ, হায়রে পাতকী অর্থ, তুই জগতের সকল অনর্থের মূল।”
যারা দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে তারা মুসলমান।
অনুজ্ঞা বা নিয়োজক ভাব : যে বাক্যে আদেশ, নিষেধ, অনুরোধ, উপদেশ, আশীর্বাদ, প্রার্থনা, কামনা ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া পদের অনুজ্ঞা বা নিয়োজক ভাব বলে। যেমন– এখন পড়। সদা সত্য কথা বলবে। গোলমাল করো না। সুখে থাক।
শর্তবাচক বা সাপেক্ষ ভাব : কোনো বাক্যে একটি ক্রিয়া শর্তের ওপর নির্ভর করে সম্পাদিত হলে তাকে ক্রিয়াপদের শর্তবাচক ভাব বলে। যেমন– প্রভু, এমন শক্তি দাও যাতে জাতির কল্যাণ সাধন করতে পারি। পরিশ্রম করলে তোমরা অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে।
শব্দ :
অর্থ হলো শব্দের প্রাণ। এক বা তার অধিক ধ্বনির সমন্বয়ে যদি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ পায় তবে তাকে শব্দ বলে।
শব্দের উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়: ক্+অ+ল+অ+ম্ = ধ্বনি। এ ধ্বনি পাঁচটির মিলিত রূপ হলো 'কলম'। 'কলম' এমন একটি বস্তুকে বোঝাচ্ছে, যা দিয়ে লেখা যায়। 'কলম'- 'ক', 'ল', 'ম' ধ্বনিসমষ্টির মিলিত রূপ, যা অর্থপূর্ণ। সুতরাং 'কলম' একটি শব্দ।
এ রকম : আমি, বাজার, যাই ইত্যাদিও শব্দ। এগুলোর আলাদা আলাদা অর্থ আছে। কিন্তু এ রকম আলাদা আলাদা শব্দ মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারে না। তাই অর্থপূর্ণ শব্দ জুড়ে জুড়ে মানুষ তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে থাকে।
যেমন - "আমি বাজারে যাই।" এটি একটি বাক্য। এখানে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়েছে
অন্য একটি উদাহরণ হিসেবে বললে বাক্যের মধ্যে কতকগুলি শব্দ থাকে। যেমন - 'গাছে অনেক ফুল ফুটেছে'; এখানে- গাছে , অনেক, ফুল ও ফুটেছে , এখানে এই চারটি শব্দ।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ হতে পারে।
১. গঠনমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) মৌলিক ও (খ) সাধিত
২. অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) যৌগিক, (খ) রূঢ়ি এবং (গ) যোগরূঢ়
৩. উৎসমূলক শ্রেণিবিভাগ : (ক) তৎসম, (খ) অর্ধ-তৎসম (গ) তদ্ভব (ঘ) দেশি ও (ঙ) বিদেশি ।
প্রবীণ
জেঠামি
সরোজ
মিতালি
মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দ বিশ্লেষণ করা যায় না বা ভেঙে আলাদা করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন – গোলাপ, নাক, লাল, তিন ।
সাধিত শব্দ : যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা হলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। উদাহরণ : চাঁদমুখ (চাঁদের মতো মুখ), নীলাকাশ (নীল যে আকাশ), ডুবুরি (ডুর্+উরি), চলন্ত (চল্ + অন্ত), প্রশাসন (প্র+শাসন), গরমিল (গর+মিল) ইত্যাদি ।
যৌগিক শব্দ : যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই রকম, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন- গায়ক = গৈ + ণক (অক) – অর্থ : গান করে যে । - কর্তব্য = কৃ + তব্য – অর্থ : যা করা উচিত । বাবুয়ানা = বাবু + আনা – অর্থ : বাবুর ভাব। মধুর = মধু + র -অর্থ : মধুর মতো মিষ্টি গুণযুক্ত দৌহিত্র = দুহিতা+ষ্ণ্য –অর্থ : কন্যার পুত্র, নাতি । চিকামারা = চিকা+মারা – অর্থ : দেওয়ালের লিখন ।
প্রবীণ
জেঠামি
সরোজ
মিতালি
রূঢ়ি শব্দ : যে শব্দ প্রত্যয় বা উপসর্গযোগে মূল শব্দের অর্থের অনুগামী না হয়ে অন্য কোনো বিশিষ্ট অর্থ জ্ঞাপন করে, তাকে রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন—হস্তী=হস্ত + ইন, অর্থ-হস্ত আছে যার; কিন্তু হস্তী বলতে একটি পশুকে বোঝায়। গবেষণা (গো+এষণা) অর্থ— গরু খোঁজা। বর্তমান অর্থ ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা।
এ রকম-
বাঁশি বাঁশ দিয়ে তৈরি যে কোনো বস্তু নয়, শব্দটি সুরের বিশেষ বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ অর্থে প্রযুক্ত হয় ।
তৈল শুধু তিলজাত স্নেহ পদার্থ নয়, শব্দটি যে কোনো উদ্ভিজ্জ পদার্থজাত স্নেহ পদার্থকে বোঝায়। যেমন- বাদাম-তেল।
প্রবীণ শব্দটির অর্থ হওয়া উচিত ছিল প্রকৃষ্ট রূপে বীণা বাজাতে পারেন যিনি। কিন্তু শব্দটি ‘অভিজ্ঞতাসম্পন্ন -বয়স্ক ব্যক্তি' অর্থে ব্যবহৃত হয় ।
সন্দেশ – শব্দ ও প্রত্যয়গত অর্থে ‘সংবাদ’। কিন্তু রূঢ়ি অর্থে ‘মিষ্টান্ন বিশেষ'।
যোগরুঢ় শব্দ : সমাস নিষ্পন্ন যে সকল শব্দ সম্পূর্ণভাবে সমস্যমান পদসমূহের অনুগামী না হয়ে কোনো বিশিষ্ট অর্থ গ্রহণ করে, তাদের যোগরুঢ় শব্দ বলে। যেমন-
পকজ পঙ্কে জন্মে যা (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)। শৈবাল, শালুক, পদ্মফুল প্রভৃতি নানাবিধ উদ্ভিদ পঙ্কে জন্মে থাকে। কিন্তু ‘পঙ্কজ' শব্দটি একমাত্র ‘পদ্মফুল’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই পঙ্কজ একটি যোগরুঢ় শব্দ । রাজপুত – ‘রাজার পুত্র' অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দ হিসেবে অর্থ হয়েছে ‘জাতিবিশেষ’।
মহাযাত্রা – মহাসমারোহে যাত্রা অর্থ পরিত্যাগ করে যোগরূঢ় শব্দরূপে অর্থ ‘মৃত্যু”।
জলধি – ‘জল ধারণ করে এমন' অর্থ পরিত্যাগ করে একমাত্র ‘সমুদ্র’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়।
তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলায় এসেছে এবং যাদের রূপ অপরিবর্তিত রয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ [তত্ (তার)+ সম (সমান)]=তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃত। উদাহরণ : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য ইত্যাদি।
তদ্ভব শব্দ : যেসব শব্দের মূল সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যায়, কিন্তু ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন ধারায় প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, সেসব শব্দকে বলা হয় তদ্ভব শব্দ। তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, ‘তৎ’ (তার) থেকে ‘ভব' (উৎপন্ন)। যেমন – · সংস্কৃত-হস্ত, প্রাকৃত-হ, তদ্ভব—হাত। সংস্কৃত-চর্মকার, প্রাকৃত-চম্মআর, তদ্ভব-চামার ইত্যাদি। এই তদ্ভব শব্দগুলোকে খাঁটি বাংলা শব্দও বলা হয় ।
অর্ধ-তৎসম শব্দ : বাংলা ভাষায় কিছু সংস্কৃত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত আকারে ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে বলে অর্ধ-তৎসম শব্দ। তৎসম মানে সংস্কৃত। আর অর্ধ তৎসম মানে আধা সংস্কৃত। উদাহরণ : জ্যোছনা, ছেরাদ্দ, গিন্নী, বোষ্টম, কুচ্ছিত— এ শব্দগুলো যথাক্রমে সংস্কৃত জ্যোৎস্না, শ্রাদ্ধ, গৃহিণী, বৈষ্ণব, কুৎসিত শব্দ থেকে আগত
দেশি শব্দ : বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের (যেমন : কোল, মুণ্ডা প্রভৃতি) ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু কিছু উপাদান বাংলায় রক্ষিত রয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়। অনেক সময় এসব শব্দের মূল নির্ধারণ করা যায় না; কিন্তু কোন ভাষা থেকে এসেছে তার হদিস মেলে। যেমন-কুড়ি (বিশ) – কোলভাষা, পেট (উদর)—তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)—মুণ্ডারী ভাষা। এরূপ-কুলা, গঞ্জ, চোঙ্গা, টোপর, ডাব, ডাগর, ঢেঁকি ইত্যাদি আরও বহু দেশি শব্দ বাংলায় ব্যবহৃত হয়।
বিদেশি শব্দ : রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। এসব বিদেশি শব্দের মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সে কালের সমাজ জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণরূপে বিদেশি শব্দ এ দেশের ভাষায় গৃহীত হয়েছে। এছাড়া পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, , তুর্কি এসব ভাষারও কিছু শব্দ একইভাবে বাংলা ভাষায় এসে গেছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, মায়ানমার (বার্মা), মালয়, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশেরও কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত রয়েছে।
আরবি
ফরাসি
তুর্কি
ফারসি
পাঞ্জাবি
ফরাসি
গ্রিক
স্পেনিশ
মিশ্র শব্দ : কোনো কোনো সময় দেশি ও বিদেশি শব্দের মিলনে শব্দদ্বৈত সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন রাজা- বাদশা (তৎসম+ফারসি), হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি), হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ফারসি), হেড-পণ্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম), ডাক্তার-খানা (ইংরেজি+ফারসি), পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা), চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি) ইত্যাদি। -
বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলো অন্য শব্দের আগে বসে। এর প্রভাবে শব্দটির কয়েক ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন-
১. নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়।
২. শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয় ।
৩. শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে।
৪. শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে। এবং
৫. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।
ভাষায় ব্যবহৃত এসব অব্যয়সূচক শব্দাংশেরই নাম উপসর্গ। যেমন ‘কাজ' একটি শব্দ । এর আগে ‘অ’ - অব্যয়টি যুক্ত হলে হয় ‘অকাজ’ যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। -
‘পূর্ণ’ (ভরা) শব্দের আগে ‘পরি’ যোগ করায় ‘পরিপূর্ণ' হলো। এটি পূর্ণ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ (অর্থে ও আকৃতিতে)। ‘হার’ শব্দের পূর্বে ‘আ’ যুক্ত করে ‘আহার’ (খাওয়া), ‘প্র’ যুক্ত করে ‘প্রহার’ (মারা), 'বি' যুক্ত করে ‘বিহার' (ভ্রমণ), 'পরি' যোগ করে ‘পরিহার' (ত্যাগ), ‘উপ’ যোগ করে ‘উপহার’ (পুরস্কার), ‘সম’ যোগ করে ‘সংহার’ (বিনাশ) ইত্যাদি বিভিন্ন অর্থে বিভিন্ন শব্দ তৈরি হয়েছে।
এ উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হলে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার উপসর্গ আছে : বাংলা, তৎসম (সংস্কৃত) এবং বিদেশি উপসর্গ।
তৎসম (সংস্কৃত) উপসর্গ
বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ হুবহু এসে গেছে। সেই সঙ্গে সংস্কৃত উপসর্গও তৎসম শব্দের আগে বসে শব্দের নতুন রূপে অর্থের সংকোচন সম্প্রসারণ করে থাকে।
তৎসম উপসর্গ বিশটি : প্র, পরা, অপ, সম, নি, অনু, অব, নির, দূর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ।
বাংলা উপসর্গ যেমন বাংলা শব্দের আগে বসে, তেমনি তৎসম উপসর্গ তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের আগে বসে। বাংলা উপসর্গের মধ্যে আ, সু, বি, নি- এ চারটি উপসর্গ তৎসম শব্দেও পাওয়া যায়। বাংলা ও সংস্কৃত উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য এই যে, যে শব্দটির সঙ্গে উপসর্গ যুক্ত হয়, সে শব্দটি বাংলা হলে উপসর্গটি বাংলা, আর সে শব্দটি তৎসম হলে সে উপসর্গটিও তৎসম হয়। যেমন –আকাশ, সুনজর, বিনামা, নিলাজ বাংলা শব্দ । অতএব উপসর্গ আ, সু, বি, নি-ও বাংলা। আর আকণ্ঠ, সুতীক্ষ্ণ, বিপক্ষ ও নিদাঘ তৎসম শব্দ। কাজেই এসব শব্দের উপসর্গ আ, সু, বি, নি–ও তৎসম উপসর্গ নিচে বিশটি তৎসম উপসর্গের উদাহরণ দেওয়া হলো-
বাংলা উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ মোট একুশটি : অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আড়, আন, আব, ইতি, ঊন (ঊনা), কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, স, সা, সু, হা।
নিচে এদের প্রয়োগ দেখানো হলো।
জ্ঞাতব্য : বাংলা উপসর্গ সাধারণত বাংলা শব্দের পূর্বেই যুক্ত হয়ে থাকে।
বাংলা উপসর্গযুক্ত শব্দের বাক্যে প্রয়োগ : ‘আমি অবেলাতে দিলাম পাড়ি অথৈ সায়রে।' অঘারাম বাস করে অজ পাড়াগাঁয়ে। ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাড়া। আকাঠার নায়ে দিলাম কাঁঠালের গলুই। ‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান, চোখে আসে জল ভরে'। ইতিহাস কথা কয়। উনাভাতে দুনা বল। নিনাইয়ার শতেক নাও। ভর দুপুরে কোথায় যাও? এতদিন কোথায় নিখোঁজ হয়েছিলে?
বিদেশি উপসর্গ
আরবি, ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি এসব ভাষার বহু শব্দ দীর্ঘকাল ধরে বাংলা ভাষায় প্রচলিত রয়েছে। এর কতগুলো খাঁটি উচ্চারণে আবার কতগুলো বিকৃত উচ্চারণে বাংলায় ব্যবহৃত হয়। এ সঙ্গে কতগুলো বিদেশি উপসর্গও বাংলায় চালু রয়েছে। দীর্ঘকাল ব্যবহারে এগুলো বাংলা ভাষায় বেমালুম মিশে গিয়েছে। বেমালুম শব্দটিতে ‘মালুম' আরবি শব্দ আর ‘বে' ফারসি উপসর্গ। এরূপ- বেহায়া, বেনজির, বেশরম, বেকার ইত্যাদি । নিচে কয়েকটি বিদেশি উপসর্গের উদাহরণ দেয়া হলো।
ক. ফারসি উপসর্গ
ঘ. উর্দু-হিন্দি উপসর্গ
হর : প্রত্যেক অর্থে – হররোজ, হরমাহিনা, হরকিসিম, হরহামেশা
বাক্যে বিদেশি উপসর্গের উদাহরণ-
হিসেবে গরমিল থাকলে খাসমহল লাটে উঠবে। বহাল তবিয়তে দস্তখত করে ফিরোজ হেড অফিসে আসা যাওয়া কর।
ধাতু : ক্রিয়ার মূল অংশকে ধাতু বলে। বাংলা ভাষায় বা ব্যাকরণে অনেক ক্রিয়াপদ আছে। সেই সব ক্রিয়াপদের প্রধান অংশকে ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।
প্রকৃতি : যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।
প্রত্যয় : শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে।
ক্রিয়ামূল বলতে ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য বা মূল অংশের অন্তর্নিহিত ভাবটির দ্যোতনা [টীকা ১] করে[১] অথবা বিশ্লেষণ করা যায় না এ রকম যে ক্ষুদ্রতম ধ্বনিসমষ্টি ক্রিয়ার বস্তু বা গুণ বা অবস্থানকে বুঝায়। ক্রিয়ামূলকে ধাতুও বলে। ক্রিয়ামূল বা ধাতু নির্দেশ করতে মূল শব্দের পূর্বে "√" করণী চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
সম্পাদনা
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্, √চল, √দেখ্, √খেল,√পড়, √খা।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক) বাংলা ধাতু (খ) সংস্কৃত ধাতু এবং (গ) বিদেশি ধাতু
বাংলা ধাতু কাকে বলে :-
যেসব ধাতু সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তাকে বাংলা ধাতু বলে।যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় আসেনি সেগুলো হলো বাংলা ধাতু।
যেমন -
আঁক্ + আ = আঁকা - কী সব আঁকাআঁকি করছ?
দেখ্ + আ = দেখা - জাদুঘর আমার কয়েকবার দেখা।
কক্ + অ = কর - তুমি কী কর?
হাস + ই = হাসি - তোমার হাসিটি খুব সুন্দর
. সংস্কৃত ধাতু কাকে বলে :-
তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতুকে সংস্কৃত খাতু বলে।
অথবা আমরা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে।
যেমন -
অঙ্ক + অন = অঙ্কন : ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় কিছু প্রথম হয়েছে।
দৃশ + য = দৃশ্য : দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না।
কৃ + তব্য = কর্তব্য : ছাত্রদের কর্তব্য লেখাপড়া করা।
হস্ + য = হাস্য: অকারণ হাস্য-পরিহাস ত্যাগ কর
বিদেশাগত ধাতু কাকে বলে :-
বিদেশি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বাংলা ভাষায় প্রয়োগ হয় , তাকে বিদেশাগত ধাতু বা বিদেশি ধাতু বলে।
প্রধানত হিন্দি এবং আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।
যেমন -
খাট্ + বে = খাটবে - যত বেশি খাটবে ততই সুফল পাবে।
বিগড় + আনো = বিগড়ানো - তোমার বিগড়ানো ছেলেকে ভালো করার সাধ্য আমার নেই।
টান্ + আ = টানা - আমাকে নিয়ে টানাটানি করো না, আমি যাব না।
জম্ + আট = জমাট - অন্ধকার বেশ জমাট বেঁধেছে।
সাধিত ধাতু কাকে বলে :-
মৌলিক ধাতু বা নাম শব্দের পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়ে থাকে, তাকেই সাধিত ধাতু বলে।
যেমন - দেখ্ + আ = দেখা, পড়+আ = পড়া, বল+আ = বলা।
সাধিত ধাতুর সঙ্গে কাল ও পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। (এখানে দেখ্+আ+বর্তমান কালের সাধারণ নামপুরুষের ক্রিয়া বিভক্তি 'য়' দেখায়)। এরূপ শোনায়, বসায় ইত্যাদি।
সাধিত ধাতুর কয় প্রকার ও কি কি :-
সাধিত ধাতু তিন প্রকার। যথা:
ক. প্রযোজক ধাতু,
খ. নাম ধাতু এবং
গ. কর্মবাচ্যের ধাতু।
অব্যয়
সম্বোধন পদ
সর্বনাম
ক্রিয়া
নাম ধাতু কাকে বলে :-
বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে নাম ধাতু বলে।
যেমন -
ঘুম্ + আ = ঘুমা : বাবা ঘুমাচ্ছেন।
ধমক্ + আ = ধমকা : আমাকে যতই ধমকাও, আমি কাজ করব না।
হাত্ + আ = হাতা : অন্যের পকেট হাতানো আমার স্বভাব নয়।
মৌলিক ধাতুর পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু বলে।
যেমন -
পড়্ + আ = পড়া : শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
কর্ + আ = করা : সে নিজে করে না, অন্যকে দিয়ে করায়।
নাচ্ + আ = নাচা : 'ওরে ভোঁদড় ফিরে চা, খুকুর নাচন দেখে যা।
কর্মবাচ্যের ধাতু কাকে বলে :-
বাক্যে কর্তার চেয়ে কর্মের সাথে যখন ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রধান হয়ে ওঠে, তখন সে ক্রিয়াকে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া বলে। কর্মবাচ্যের ক্রিয়ার মূলকে কর্মবাচ্যের ধাতু বলে।
মৌলিক ধাতুর সাথে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তা কর্মবাচ্যের ধাতু। যেমন :
কর্ + আ = করা : আমি তোমাকে অঙ্কটি করতে বলেছি।
হার্ + আ = হারা : বইটি হারিয়ে ফেলেছি।
খা + ওয়া = খাওয়া : তোমার খাওয়া হলে আমাকে বলো।
প্রতিপাদিক হলো বিভক্তিহীন নাম-প্রকৃতি বা সাধিত শব্দ এবং বিভক্তিহীন তবে প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়া-প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে প্রত্যয়ের যোগে যে শব্দ ও ক্রিয়ামূল গঠিত হয় তার নাম প্রাতিপাদিক
নাম-প্রাতিপাদিক
সম্পাদনা
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়হীন কিংবা বিভক্তিহীন অথচ প্রত্যয়যুক্ত নাম-প্রকৃতিকে নাম প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: দোকান + দার = দোকানদার + কে = দোকানদারকে
ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক
সম্পাদনা
বিভক্তহীন ও প্রত্যয়যুক্ত ধাতু-প্রকৃতিকে ক্রিয়া-প্রাতিপাদিক বলে। উদাহরণ: কর্ + অ = করা + কে = করাকে
মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু
সম্পাদনা
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে। উদাহরণ: √কর্, √চল, √দেখ্, √খেল,√পড়, √খা।
উৎস বিবেচনায় মৌলিক ধাতুগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়: (ক) বাংলা ধাতু (খ) সংস্কৃত ধাতু এবং (গ) বিদেশি ধাতু
প্রকৃতি : যে শব্দকে বা কোনো শব্দের যে অংশকে আর কোনো ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা যায় না, তাকে প্রকৃতি বলে।
প্রকৃতি দুই প্রকার : নাম প্রকৃতি ও ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু।
নাম প্রকৃতি : হাতল, ফুলেল, মুখর— এ শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই – হাত + ল = হাতল (বাঁট), -
ফুল + এল = ফুলেল (ফুলজাত) এবং মুখ + র = মুখর (বাচাল)। এখানে হাত, ফুল ও মুখ শব্দগুলোকে বলা হয় প্রকৃতি বা মূল অংশ। এগুলোর নাম প্রকৃতি।
ক্রিয়া প্রকৃতি : আবার চলন্ত, জমা ও লিখিত— এ শব্দগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই √চল্+অন্ত= চলন্ত (চলমান), √জম্ + আ [ = জমা (সঞ্চিত) এবং √লিখ্ + ইত লিখিত (যা লেখা হয়েছে)। এখানে চল্, জম্ ও লিখ্ = এ তিনটি ক্রিয়ামূল বা ক্রিয়ার মূল অংশ। এগুলোকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা ধাতু
প্রত্যয় : শব্দ গঠনের উদ্দেশ্যে নাম প্রকৃতির এবং ক্রিয়া প্রকৃতির পরে যে শব্দাংশ যুক্ত হয় তাকে প্রত্যয় বলে। কয়েকটি শব্দের প্রকৃতি ও প্রত্যয় বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো ।
বাংলা শব্দ গঠনে দুই প্রকার প্রত্যয় পাওয়া যায় : ১. তদ্ধিত প্রত্যয় ও ২. কৃৎ প্রত্যয় ।
তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দমূল বা নাম প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন-হাতল, ফুলেল ও মুখর শব্দের যথাক্রমে ল, এল এবং র তদ্ধিত প্রত্যয় ।
ক) বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়
১. আ-প্রত্যয়
(ক) অবজ্ঞার্থে : চোর + আ চোরা, কেষ্ট + আ = কেষ্টা।
(খ) বৃহদার্থে : ডিঙি + আ= ডিঙা (সপ্তডিঙা মধুকর)
(গ) সদৃশ অর্থে : বাঘ+আ=বাঘা, হাত + আ=হাতা। এরূপ : কাল - কালা (চিকন কালা), কান–কানা ।
(ঘ) ‘তাতে আছে’ বা ‘তার আছে' অর্থে : জল + আ=জলা, গোদ + আ=গোদা। এরূপ : রোগ -রোগা, : চাল- চালা, লুন-লুনা>লোনা ।
(ঙ) সমষ্টি অর্থে : বিশ –বিশা, বাইশ-বাইশা (মাসের বাইশা> বাইশে।
(চ) স্বার্থে : জট+আ=জটা, চোখ-চোখা, চাক—চাকা ।
(ছ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে : হাজির - হাজিরা, চাষ-চাষা।
(জ) জাত ও আগত অর্থে : মহিষ ভইস-ভয়সা (ঘি), দখিন-দখিনা> দখনে (হাওয়া)।
২. আই-প্রত্যয়
(ক) ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে : বড়+আই=বড়াই, চড়া +আই=চড়াই।
(খ) আদরার্থে : কানু+আই=কানাই, নিম+আই=নিমাই।
(গ) স্ত্রী বা পুরুষবাচক শব্দের বিপরীত বোঝাতে : বোন+আই= বোনাই, ননদ-নন্দাই, জেঠা-জেঠাই (মা) (ঙ) জাত অর্থে : ঢাকা+আই=ঢাকাই (জামদানি), পাবনা-পাবনাই (শাড়ি)।
(ঘ) সমগুণবাচক বিশেষ্য গঠনে : মিঠা +আই=মিঠাই।
(ঙ) বিশেষণ গঠনে : চোর চোরাই (মাল), মোগল-মোগলাই (পরোটা)।
৩. আমি/আম/আমো / মি 2 -প্রত্যয়
(ক) ভাব অর্থে : ইতর+আমি =ইতরামি, পাগল+ আমি = পাগলামি, চোর+আমি =চোরামি, বাঁদর+আমি =বাঁদরামি, ফাজিল +আমো=ফাজলামো । (খ) বৃত্তি (জীবিকা) অর্থে : ঠক+আমো=ঠকামো (ঠকের বৃত্তি বা ভাব), , ঘর+আমি=ঘরামি ।
(গ) নিন্দা জ্ঞাপন : জেঠা+আমি-জেঠামি, ছেলে+আমি=ছেলেমি।
৪. ই/ঈ-প্রত্যয়
(ক) ভাব অর্থে : বাহাদুর + ই = বাহাদুরি, উমেদার-উমেদারি।
(খ) বৃত্তি বা ব্যবসায় অর্থে : ডাক্তার-ডাক্তারি, মোক্তার-মোক্তারি, পোদ্দার-পোদ্দারি, ব্যাপার- ব্যাপারি, চাষ-চাষি ।
(গ) মালিক অর্থে : জমিদার-জমিদারি, দোকান-দোকানি।
(ঘ) জাত, আগত বা সম্বন্ধ বোঝাতে : ভাগলপুর-ভাগলপুরি, মাদ্রাজ -মাদ্রাজি, রেশম-রেশমি,
৫. ইয়া> এ-প্রত্যয়
সরকার—সরকারি (সম্বন্ধ বাচক)।
(ক) তৎকালীনতা বোঝাতে : সেকাল + এ-সেকেলে, একাল+এ=একেলে, ভাদর +ইয়া = ভাদরিয়া> ভাদুরে (কইমাছ)।
(খ) উপকরণ বোঝাতে : পাথর - পাথরিয়া পাথুরে, মাটি –মেটে, বালি- বেলে।
(গ) উপজীবিকা অর্থে : জাল-জালিয়া জেলে, মোট-মুটে।
(ঘ) নৈপুণ্য বোঝাতে : খুন-খুনিয়া খুনে, দেমাক-দেমাকে, না (নৌকা) – নাইয়া নেয়ে ৷
(ঙ) অব্যয়জাত বিশেষণ গঠনে : টনটন— টনটনে (জ্ঞান), কনকন – কনকনে (শীত), গনগন –গনগনে (আগুন), চকচক— চকচকে (জুতা)।
৬. উয়া> ও-প্রত্যয়
(ক) রোগগ্রস্ত অর্থে : জ্বর + উয়া = জ্বরুয়া জ্বরো। বাত+উয়া=বাতুয়া> বেতো (ঘোড়া)।
(খ) যুক্ত অর্থে : টাক – টেকো ।
(গ) সেই উপকরণে নির্মিত অর্থে : খড়খড়ো (খড়োঘর)।
(ঘ) জাত অর্থে : ধান–ধেনো ।
(ঙ) সংশ্লিষ্ট অর্থে : মাঠ-মেঠো, গাঁ-গাঁইয়া গেঁয়ো ।:
(চ) উপজীবিকা অর্থে : মাছ-মাছুয়া> মেছো ।
(ছ) বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দেঁতো (হাসি), ছাঁদ-ছেঁদো (কথা), তেল-তেলো> তেলা (মাথা), কুঁজ- কুঁজো (লোক) ।
৭. উ-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ঢাল +উ = ঢালু, কল+উ= =কলু।
৮. উক-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : লাজ-লাজুক, মিশ-মিশুক, মিথ্যা-মিথ্যুক ।
১. আরি/আরী/আরু-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : ভিখ-ভিখারি, শাঁখ-শাখারি, বোমা-বোমারু
১০. আলি/আলো/আলি/আলী>এল-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে : দাঁত-দাঁতাল, লাঠি-লাঠিয়াল> লেঠেল, তেজ-তেজাল, ধার-ধারাল, শাঁস-শাঁসাল, জমক-জমকালো, দুধ দুধাল > দুধেল, হিম-হিমেল, চতুর চতুরালি, ঘটক — ঘটকালি, সিঁদ-সিঁদেল, গাঁজা-গেঁজেল।
১১. উরিয়া>উড়িয়া/উড়ে/রে-প্রত্যয় : হাট-হাটুরিয়া> হাটুরে, সাপ সাপুড়িয়া সাপুড়ে, কাঠ-কাঠুরে।
১২. উড়-প্রত্যয় : অর্থহীনভাবে : লেজ-লেজুড় ।
১৩. উয়া/ওয়া>ও-প্রত্যয় : সম্পর্কিত অর্থে : ঘর+ওয়া = ঘরোয়া, জল+ উয়া=জলুয়া>জলো (দুধ)। ১৪. আটিয়া / টে—প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে : তামা-তামাটিয়া> তামাটে, ঝগড়া-ঝগড়াটে, ভাড়া— ভাড়াটে, রোগা-রোগাটে ।
১৫. অট>ট-প্রত্যয় : স্বার্থে : ভরা ভরাট, জমা-জমাট।
১৬. লা-প্রত্যয় : (ক) বিশেষণ গঠনে : মেঘ-মেঘলা
(ক) স্বার্থে : এক-একলা, আধ-আধলা ।
সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়
ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন্, র, ল প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় । এখানে কতগুলো সংস্কৃত ' তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ দেয়া হলো ।
কয়েকটি সাধারণ সূত্র
১. যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ)-প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যথা— নগর+ষ্ণ=নাগর, মধুর +ষ্ণ= =মাধুর্য।
বৃদ্ধি : (১) অ-স্থানে আ, (২) ই, ঈ-স্থানে ঐ, (৩) উ, ঊ-স্থানে ঔ এবং (৪) ঋ-স্থানে আর হওয়াকে বৃদ্ধি বলে।
২.যে শব্দের সঙ্গে ষ্ণ (অ) প্রত্যয় যুক্ত হয়, তার প্রাতিপদিকের অন্ত্যস্বরের উ-কারও ও-কারে পরিণত হয়। ও +অ সন্ধিতে ‘অব’ হয়। যথা—গুরু+ষ্ণ=গৌরব, লঘু+ষ্ণ =লাঘব, শিশু +ষ্ণ=শৈশব, মধু +ষ্ণ=মাধব, মনু + ষ্ণ=মানব।
৩. দুটি শব্দের দ্বারা গঠিত সমাসবদ্ধ শব্দের অথবা উপসর্গযুক্ত শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়ে উপসর্গসহ শব্দের বা শব্দ দুটির মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যথা—
পরলোক + ষ্ণিক =পারলৌকিক।
সুভগ+ষ্ণ্য=সৌভাগ্য।
পঞ্চভূত+ষ্ণিক=পাঞ্চভৌতিক ।
সর্বভূমি+ ষ্ণ=সার্বভৌম ।
ব্যতিক্রম : ‘বর্ষ’ শব্দ পরপদ হলে পূর্বপদের সংখ্যাবাচক শব্দের মূল স্বরের বৃদ্ধি হয় না। যথা—দ্বিবর্ষ + ষ্ণিক= দ্বিবার্ষিক। সংখ্যাবাচক শব্দ না থাকলেও নিয়মমতো মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়। যেমন –বর্ষ + ষ্ণিক=বার্ষিক।
৪. ‘য’ প্রত্যয় যুক্ত হলে প্রাতিপদিকের অন্তে স্থিত অ, আ, ই এবং ঈ-এর লোপ হয়। যথা – সম্+য =সাম্য, কবি +য =কাব্য, মধুর + য =মাধুর্য, প্রাচী+য=প্রাচ্য।
ব্যতিক্রম : সভা+য=সভ্য (‘সাভ্য' নয়)
বিশেষ নিয়মে : পর-পরকীয়, স্ব-স্বকীয়, রাজা-রাজকীয় ।
১০. বতুপ্ (বৎ) এবং মতুপ্ (মৎ)-প্রত্যয় [প্রথমার এক বচনে যথাক্রমে ‘বান্ এবং ‘মান্’ হয়] : বিশেষণ গঠনে : গুণ+বতুপ্=গুণবান, দয়া+বতুপ্ = দয়াবান ৷ শ্রী+মতুপ্=শ্রীমান, বুদ্ধি+মতুপ্=বুদ্ধিমান
১১. বিন (বী) প্রত্যয় : আছে অর্থে বিশেষণ গঠনে মেধা+বিন্=মেধাবী, মায়া+বিন্ = মায়াবী, তেজঃ+বিন্= তেজস্বী, যশঃ +বিন্=যশস্বী।
১২. র-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে
মধু+র=মধুর, মুখ+র=মুখর।
১৩. ল-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে
শীত +ল = শীতল, বস +ল= বৎসল।
১৪. ফ (অ) প্রত্যয়
(ক) অপত্য অর্থে: মনু+ষ্ণ =মানব, যদু +ষ্ণ=যাদব।
(খ) উপাসক অর্থে: শিব+ ষ্ণ= শৈব, জিন+ষ্ণ=জৈন। এরূপ : শক্তি-শাক্ত, বুদ্ধ-বৌদ্ধ,
গ) ভাব অর্থে : শিশু +ষ্ণ = শৈশব, গুরু+ষ্ণ =গৌরব, কিশোর+ষ্ণ=কৈশোর।
ঘ) সম্পর্ক বোঝাতে : পৃথিবী+ ষ্ণ = পার্থিব, দেব+ষ্ণ=দৈব, চিত্র (একটি নক্ষত্রের নাম)+ ষ্ণ=চৈত্র।
বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়
১. ওয়ালা > আলা (হিন্দি) : বাড়ি-বাড়িওয়ালা (মালিক অর্থে), দিল্লি-দিল্লিওয়ালা (অধিবাসী অর্থে), মাছ-মাছওয়ালা (বৃত্তি অর্থে), দুধ-দুধওয়ালা (বৃত্তি অর্থে)।
ওয়ান>আন (হিন্দি) : গাড়ি-গাড়োয়ান, দার -দারোয়ান ৷
৩. আনা>আনি (হিন্দি) : মুনশি-মুনশিয়ানা, বিবি-বিবিআনা, হিন্দু-হিন্দুয়ানি
8. সা (হিন্দি) : পানি-পানসা> পানসে, এক–একসা, কাল (কাল) – কালসা> কালসে।
৫.গর> কর (ফারসি) : কারিগর, বাজিকর, সওদাগর ।
৬. দার (ফারসি) : তাঁবেদার, খবরদার, বুটিদার, দেনাদার, চৌকিদার, পাহারাদার
৭.বাজ (দক্ষ অর্থে –ফারসি) : কলমবাজ, ধড়িবাজ, ধোঁকাবাজ, গলাবাজ+ই=গলাবাজি (বিশেষ্য)।
৮.বন্দি (বন্দ্-ফারসি) : জবানবন্দি, সারিবন্দি, নজরবন্দি, কোমরবন্দ।
৯. সই : মতো অর্থে : জুতসই, মানানসই, চলনসই, টেকসই। ১০. পনা : মতো অর্থে : গিন্নীপনা, বেহায়াপনা
দ্রষ্টব্য : ‘টিপসই’ ও ‘নামসই’ শব্দ দুটোর ‘সই’ প্রত্যয় নয়। এটি ‘সহি’ (অর্থ-স্বাক্ষর) শব্দ থেকে উৎপন্ন । (গ) সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়
ষ্ণ, ষ্ণি, ষ্ণ্য, ষ্ণিক, ইত, ইমন, ইল, ইষ্ট, ঈন, তর, তম, তা, ত্ব, নীন, নীয়, বতুপ্, বিন্, র, ল প্রভৃতি সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যে সমস্ত শব্দ গঠিত হয়, সেগুলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় । এখানে কতগুলো সংস্কৃত ' তদ্ধিত প্রত্যয়ের উদাহরণ দেয়া হলো ।
কৃৎ প্রত্যয় : ধাতু বা ক্রিয়া প্রকৃতির সাথে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়, তাকে বলে কৃৎ প্রত্যয় উদাহরণে চলন্ত, জমা ও লিখিত শব্দের যথাক্রমে অন্ত, আ এবং ইত কৃৎ প্রত্যয়।
তদ্ধিত প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় তদ্ধিতান্ত শব্দ এবং কৃৎ প্রত্যয় সাধিত শব্দকে বলা হয় কৃদন্ত শব্দ যেমন— হাতল, ফুলেল ও মুখর তদ্ধিতান্ত শব্দ এবং চলন্ত, জমা ও লিখিত কৃদন্ত শব্দ ।
তোমরা লক্ষ করেছ যে, ক্রিয়ামূলকে বলা হয় ধাতু, আর ধাতুর সঙ্গে পুরুষ ও কালবাচক বিভক্তি যোগ করে গঠন করা হয় ক্রিয়াপদ। ধাতুর সঙ্গে যখন কোনো ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ তৈরি হয়, তখন (১) ক্রিয়ামূল বা ধাতুকে বলা হয় ক্রিয়া প্রকৃতি বা প্রকৃতি; আর (২) ক্রিয়া প্রকৃতির সঙ্গে যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যুক্ত হয়, তাকে বলে কৃৎ-প্রত্যয়। যেমন- চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি)+ অন (কৃৎ-প্রত্যয়)= চলন (বিশেষ্য পদ) । চল্ (ক্রিয়া প্রকৃতি) + অন্ত (কৃৎ-প্রত্যয়)=চলন্ত (বিশেষণ পদ ৷
‘প্রকৃতি' কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে √ চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এ প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলে ‘প্রকৃতি' শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। যেমন -√পড়+ উয়া =পড়ুয়া। √নাচ্+উনে = নাচুনে ।
কৃৎ-প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। যেমন – ওপরের উদাহরণে ‘পড়ুয়া' ও ‘নাচুনে’ কৃদন্ত পদ
তৎসম বা সংস্কৃত প্রকৃতির সঙ্গেও অনুরূপভাবে কৃৎ-প্রত্যয় যোগে কৃদন্ত পদ সাধিত হয়। যেমন √গম্+অন=গমন, √কৃ+তব্য=কর্তব্য । কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃৎ-প্রত্যয় যোগ করলে কৃৎ-প্রকৃতির আদিস্বর পরিবর্তিত হয়। এ পরিবর্তনকে বলা হয় গুণ ও বৃদ্ধি ।
১. গুণ : (ক) ই, ঈ-স্থলে এ, (খ) উ, ঊ-স্থলে ও এবং (গ) ঋ-স্থলে অর্ হয়। যেমন - √চিন্+আ=চেনা (ই স্থলে এ হলো); (নী+আ=নেওয়া (ঈ স্থলে এ); ' √ধু+আ =ধোয়া (উ স্থলে ও) ; কৃ+তা = করতা> কর্তা (ঋ স্থলে অর্) ।
২. বৃদ্ধি : (ক) অ-স্থলে আ, (খ) ই ও ঈ-স্থলে ঐ, (গ) উ ও ঊ স্থলে ঔ এবং (ঘ) ঋ-স্থলে আর্ হয়। যেমন – পচ্ + অ (ণক) - পাচক (পচ-এর অ স্থলে ‘আ’); শিশু+ অ(ষ্ণ) = শৈশব (ই স্থলে ঐ); যুব+ - = অন= যৌবন (উ স্থলে ঔ); কৃ+ঘ্যণ= কার্য (ঋ স্থলে আর্)।
বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়
কৃৎ-প্রত্যয়যোগে শব্দ গঠন : বাংলা
১. (০) শূন্য-প্রত্যয় : কোনো প্রকার প্রত্যয়-চিহ্ন ব্যতিরেকেই কিছু ক্রিয়া-প্রকৃতি বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ রূপে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। এরূপ স্থলে (০) শূন্য প্রত্যয় ধরা হয়। যেমন এ মোকদ্দমায় তোমার জিত্ হবে না, হার্–ই হবে। গ্রামে খুব ধব্ পাকড় চলছে।
২. অ-প্রত্যয় : কেবল ভাববাচ্যে অ-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন - √ধর্+ অ=ধর, √মার +অ=মার। আধুনিক বাংলায় অ-প্রত্যয় সর্বত্র উচ্চারিত হয় না। যেমন – √হার্ + অ=হার, √জিত্ + অ = জিত।কোনো কোনো সময় অ-প্রত্যয়যুক্ত কৃদন্ত শব্দের দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন (আসন্ন সম্ভাব্যতা অর্থে দ্বিত্বপ্রাপ্ত) √কাঁদ্ + অ কাঁদকাঁদ (চেহারা)। এরূপ - √পড়+অ=পড়পড়, √মর্+অ=মরমর (অবস্থা) ইত্যাদি। কখনো কখনো দ্বিত্বপ্রাপ্ত কৃদন্ত পদে উ-প্রত্যয় হয়। যেমন – √ডু+উ= ডুবুডুবু। √উড়+উ = উড়ুউডু।
৩।অনু-প্রত্যয় : ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠনে ‘অন’ প্রত্যয়ের ব্যবহার হয়। যেমন – √কাঁদ্ + অন= কাঁদন (কান্নার ভাব)। এরূপ – নাচন, বাড়ন, ঝুলন, দোলন ৷
বিশেষ নিয়ম
(ক) আ-কারান্ত ধাতুর সঙ্গে অন্ স্থলে ‘ওন’ হয়। যেমন -√খা+অন=খাওন, √ছা+অন=ছাওন, √দে+অন=দেওন । (খ) আ-কারান্ত প্রযোজক (ণিজন্ত ধাতুর পরে ‘আন’ প্রত্যয় যুক্ত হলে ‘আনো’ হয়। যেমন √জানা+আন= - জানানো। এরূপ –শোনানো, ভাসানো।
৪. অনা-প্রত্যয় : √দুল্+ অনা= দুলনা> দোলনা। √খেল্+ অনা=খেলনা।
৫. অনি (বিকল্পে) উনি-প্রত্যয় : √চির্+অনি=চিরনি>চিরুনি। বাঁধ + অনি =বাঁধনি বাঁধুনি। √আঁট+অনি=আঁটনি> আঁটুনি ।
৬. অন্ত-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ‘অন্ত’ প্রত্যয় হয়। যেমন - √উড়+অন্ত =উড়ন্ত, √ডুর্+অন্ত=ডুবন্ত।
৭. অক-প্রত্যয় : √মুড়+অক=মোড়ক। √ঝল্+অক=ঝলক।
৮. আ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘আ’ প্রত্যয় হয়। যেমন √পড়+আ=পড়া (পড়া বই)। এরূপ রাঁধ (বিশেষ্য), রাঁধা (বিশেষণ), কেনা, বেচা, ফোটা ইত্যাদি ৷ ৯. আই-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আই প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন- চড়ু+আই = চড়াই সিল+আই=সিলাই> সেলাই
১০. আও-প্রত্যয় : ভাববাচক বিশেষ্য গঠনে ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- √পাকড়+আও= পাকড়াও, √চড় +আও=চড়াও।
১১. আন (আনো) প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন/আনো' প্ৰত্যয় হয় । যেমন – √চাল্ =আন =চালান/চালানো। √মান্+ আন = মানান/মানানো।
১২. আনি -প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে প্রযুক্ত হয়। যেমন √জান্ + আনি=জানানি, √শুন্+আনি=শুনানি, - √উড় + আনি=উড়ানি, √উড়+উনি=উড়ুনি।
১৩. আরি বা আরী বিকল্পে রি/উরি-প্রত্যয় : যেমন – / ডুর্+আরি / উরি-ডুবুরী। এরূপ –ধুনারী, পূজারী ইত্যাদি
১৪. আল-প্রত্যয় : √মাত্+আল = মাতাল, মিশ্+আল =মিশাল।
১৫. ই-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘ই’ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যথা- 1 -Vভাজ্+ই = ভাজি, √বেড়+ই= বেড়ি।
১৬. ইয়া > ইয়ে-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ইয়া/ ইয়ে প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন - √মর্ +ইয়া=মরিয়া (মরতে প্রস্তুত), √বল্ + ইয়ে=বলিয়ে (বাকপটু)। এরূপ – নাচিয়ে, গাইয়ে, লিখিয়ে, বাজিয়ে, কইয়ে ইত্যাদি।
১৭. উ-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘উ’ প্রত্যয়ের প্রয়োগ হয়। যথা – √ডাক্ + উ= ডাকু, ঝাড় + উ= ঝাড়ু, √উড়+উ= উড়ু (দ্বিত্ব উড়ুউড়ু)
১৮. ‘উয়া’ বিকল্পে 'ও' · প্রত্যয় : বিশেষ্য বিশেষণ গঠনে ‘উয়া’ এবং ‘ও’ প্রত্যয় হয়। যথা – √পড় + - উয়া= পড়ুয়া > পড়ো, √উড়+ উয়া= উড়ুয়া > উড়ো, √উড়+ও +উড়ো (চিঠি)। ১৯. তা-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ‘তা’ প্রত্যয় হয়। যেমন – √ফির্+তা = ফিরতা> ফেরতা, √পড় + তা= পড়তা, √বহ্+ তা = বহতা ।
২০. তি-প্রত্যয় : বিশেষ্য ও বিশেষণ গঠনে ‘তি' প্রত্যয় হয়। যেমন √ঘাট্+তি=ঘাটতি, √বাড়+তি=বাড়তি। এরূপ – কাটতি, উঠতি ইত্যাদি।
২১. না-প্রত্যয় : বিশেষ্য গঠনে ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয় যেমন √রাধ+না=রাধনা> রান্না। এরূপ-ঝরনা ইত্যাদি।
কৃৎ-প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠন : সংস্কৃত
১. অনট্—প্রত্যয় : (‘ট' ইৎ (বিলুপ্ত) হয়, ‘অন’ থাকে) : √নী+অন= √নী+অন>নে+অন (গুণসূত্রে) = নয়ন, √শু+ অনট্= √শু+অন (গুণ ও সন্ধির ফলে) = শ্রবণ। এরূপ – স্থান, ভোজন, নর্তন, দর্শন ইত্যাদি।
২. ক্ত-প্রত্যয় ('ক্' ইৎ 'ত' থাকে) : √জ্ঞা+ক্ত (জ্ঞা+ত) = জ্ঞাত, √খ্যা+ক্ত=খ্যাত।
বিশেষ নিয়ম
(ক) ক্ত-প্রত্যয় যুক্ত হলে নিম্নলিখিত ধাতুর অন্ত্যস্বর ‘ই’ কার হয়। যেমন √পঠ+ক্ত=(পঠ+ই+ত) পঠিত। এরূপ –লিখিত, বিদিত, বেষ্টিত, চলিত, পতিত, লুণ্ঠিত, ক্ষুধিত, শিক্ষিত ইত্যাদি । =
(খ) ক্ত প্রত্যয় যুক্ত হলে, ধাতুর অন্তস্থিত ‘চ’ ও ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন- √সিচ্+ক্ত=(সিক্+ত) সিক্ত। এরূপ-√মুচ্+ক্ত=মুক্ত, Vভুজ্+ক্ত=ভুক্ত।
(গ) এ ছাড়া ক্ত প্রত্যয় পরে থাকলে ধাতুর মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন হয়। এখানে এরূপ কয়েকটি প্রকৃতি— প্রত্যয়ের উদাহরণ দেওয়া হলো। যেমন- √গম্ +ক্ত গত, √গ্ৰন্থ +ক্ত গ্রথিত, √চুর্+ক্ত চূর্ণ, = = √ছিদ্+ক্ত=ছিন্ন, √জন্+ক্ত=জাত, √দা+ক্ত=দত্ত, √দহ্+ক্ত=দগ্ধ, √বচ্+ক্ত=উক্ত, √বপ্+ক্ত=উপ্ত, √মুহ্+ক্ত=মুগ্ধ, √ষুধ+ক্ত=যুদ্ধ, √ল+ক্ত=লব্ধ, √স্বপ্+ক্ত=সুপ্ত, √সৃ+ক্ত=সৃষ্ট, √হন্+ক্ত= হত ইত্যাদি। ৩. ক্তি-প্রত্যয় (‘ক' ইৎ ‘তি' থাকে) : √গম্+ ক্তি=√গম্+তি=গতি (এখানে ‘ম’ লোপ হয়েছে)।
:
বিশেষ নিয়ম
(ক) ক্তি-প্রত্যয় যোগ করলে কোনো কোনো ধাতুর অন্ত ব্যঞ্জনের লোপ হয়। যথা- √মন্+ক্তি=মতি, √রম্+ক্তি=রতি
(খ) কোনো কোনো ধাতুর উপধা অ-কারের বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ আ-কার হয়। যেমন √শ্রম্+ক্তি=শ্রান্তি (সন্ধিসূত্রে মন), √শম্+ক্তি=শান্তি ।
(গ) ‘চ’ এবং ‘জ’ স্থলে ‘ক’ হয়। যেমন -√বচ্+ক্তি=উক্তি, √মুচ্+ক্তি=মুক্তি, √ভজ্+ক্তি=ভক্তি। √কাঁদ্ + না কাঁদনা > কান্না,
(ঘ) নিপাতনে সিদ্ধ : √গৈ+ক্তি=গীতি, √সিধ+ক্তি=সিদ্ধি, √বুধ+ক্তি=বুদ্ধি, √শক্+ক্তি=শক্তি। ৪. তব্য ও অনীয় প্রত্যয় : কর্ম ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে (ক) তব্য ও (খ) অনীয় প্রত্যয় হয় ।
(ক) তব্য : √কৃ+তব্য=কর্তব্য, √দা+তব্য=দাতব্য, পিঠ+ত = পঠিতব্য। +তব্য=' (খ) অনীয় : √কৃ+অনীয়=করণীয়, রক্ষ্+অনীয় = রক্ষণীয়। এরূপ-দর্শনীয়, পানীয়, শ্রবণীয়, পালনীয় ইত্যাদি।
৫. তৃচ্-প্রত্যয় (‘চ' ইৎ ‘তৃ’ থাকে) : প্রথমা একবচনে ‘তৃ’ স্থলে ‘তা’ হয় । যেমন- √দা+তৃচ্=√দা+তৃ=√দা+তা= দাতা √মা+তৃচ্=মাতা, √ক্রী+তৃচ্= =ক্রেতা। বিশেষ নিয়মে : √ষুধ +তৃচ=Vযুধ+তা=যোদ্ধা।
৬. ণক—প্রত্যয় (‘ণ' ইৎ ‘অক' থাকে) : (পর্+ণক=√পত্+অক=পাঠক। মূল স্বরের বৃদ্ধি হয়ে ‘অ’ স্থানে ‘আ’ হয়েছে। যেমন-√নী=ণক=(নৈ+অক-প্রথম স্বরের বৃদ্ধি) নায়ক, /গৈ+ণক=গায়ক, √লিখ্+ণক= লেখক ইত্যাদি ।
বিশেষ নিয়ম
(ক) ণক-প্রত্যয় পরে থাকলে ণিজন্ত ধাতুর ‘ই’ কারের লোপ হয়। যেমন – i+ণক=পূজক। এরূপ- জনক, চালক, স্তাবক।
(খ) আ-কারান্ত ধাতুর পরে ণক প্রত্যয় হলে ধাতুর শেষে ‘য়’ আসে। যথা-√দা+ণক=দায়ক, বি- √ধা+ণক=বিধায়ক
৭. ঘাণ-প্রত্যয় [ঘ,ণ–ইৎ, য (য-ফলা) থাকে] : কর্ম ও ভাববাচ্যে ঘ্য হয়। যথা- √কৃ+ঘ্য=কাৰ্য্য কাৰ্য, √ধৃ+ঘ্য=ধার্য। এরূপ -পরিহার্য, বাচ্য, ভোজ্য, যোগ্য, হাস্য ইত্যাদি ।
(দ্রষ্টব্য : আধুনিক বাংলা বানানে রেফ+য+য=র্য্য হয় না, র্য হয়।)
৮. য-প্রত্যয় : কর্ম ও ভাববাচ্যে যোগ্যতা ও ঔচিত্য অর্থে ‘য’ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। ‘য’ যুক্ত হলে আ-কারান্ত ধাতুর আ-কার স্থলে এ-কারান্ত হয় এবং ‘য’ ‘য়’ হয়। যেমন - √দা +য=দা>দে+যয় দেয়।
√হা+য=হেয় ৷
এরূপ –বিধেয়, অজেয়, পরিমেয়, অনুমেয় ইত্যাদি।
বিশেষ নিয়ম : ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর ‘য’ প্রত্যয় স্থলে য-ফলা হয়। যথা-√গম্+য=গম্য, √লভ্+য=লভ্য। ১. ণিন—প্রত্যয় (ণ ইৎ, ইণ থাকে, ইন্ ‘ঈ'-কার হয়) : √গ্রহ + ণিন=গ্রাহী, √পা+ণিন=পায়ী। এরূপ- কারী, দ্রোহী, সত্যবাদী, ভাবী, স্থায়ী, গামী। কিন্তু ‘ণিন' যুক্ত হলে ‘হন’ ধাতুর স্থলে ‘ঘাত' হয়। যথা - -√হণ্+ণিন=আত্মঘাতী। আত্ম-V
১০. ইন্ প্রত্যয় (ইন্)=ঈ-কার হয়) : √শ্রম্+ইন্=শ্রমী ।
১১. অল্-প্রত্যয় (ল ইৎ, অ থাকে) : (জি+অল্-জয়, √ক্ষি+অল্ = ক্ষয়। এরূপ-ভয়, নিচয়, বিনয়, ভেদ, বিলয়। ব্যতিক্রম : √হণ্+অ=বধ ৷
কৃদন্ত বিশেষণ গঠনে কতিপয় কৃৎ-প্রত্যয়
১. ইষ্ণু-প্রত্যয় : √চল্+ইষ্ণু = চলিষ্ণু। এরূপ ক্ষয়িষ্ণু, বর্ধিষ্ণু।
২. বর-প্রত্যয় : √ঈশ্+বর=ঈশ্বর, Vভাস্+বর =ভাস্বর। এরূপ-নশ্বর, স্থাবর।
৩. র-প্রত্যয় : √হিন+স্+র=হিংস্র, Vনম্+র=নম্র।
৪. উক/উক-প্রত্যয় : √ভু+উক=(ভৌ+উক) =ভাবুক, জাগ্+উক=(জাগর+উক) জাগরূক
৫. শানচ্-প্রত্যয় (‘শ’ ও ‘চ’ ইৎ, ‘আন’ বিকল্পে 'মান' থাকে) : √দীপ্+ শানচ্=দীপ্যমান। এরূপ - √চল্+শানচ্=চলমান, √বৃধ+শানচ্=বর্ধমান ৬. ঘঞ-প্রত্যয় [(কৃদন্ত বিশেষ্য গঠনে), ঘৃ এবং ঞ ইৎ, ‘অ’ থাকে] : √বস্+ঘঞ্=বাস, √যুজ্+ঘঞ= :
যোগ, √ক্রুধ+ঘঞ=ক্রোধ, , √খুদ্+ঘঞ=খেদ, , √ভিদ্+ঘঞ=ভেদ।
বিশেষ নিয়ম : √ত্য+ঘঞ=ত্যাগ, √পচ্ +য=পাক, /শুচ্+ঘঞ=শোক
কিন্তু, নিন্দি+ত +অন=নন্দন। এক্ষেত্রে আ যোগে ‘নন্দনা’ হয় না।
সমাস মানে সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। যেমন : দেশের সেবা = দেশসেবা, বই ও পুস্তক = বইপুস্তক, নেই পরোয়া যার বেপরোয়া। বাক্যে শব্দের ব্যবহার সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে সমাসের = সৃষ্টি। সমাস দ্বারা দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়। এটি শব্দ তৈরি ও প্রয়োগের একটি বিশেষ রীতি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। তবে খাঁটি বাংলা সমাসের দৃষ্টান্তও প্রচুর পাওয়া যায়। সেগুলোতে সংস্কৃতের নিয়ম খাটে না।
সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটির নাম সমস্ত পদ।
সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদটির অন্তর্গত পদগুলোকে সমস্যমান পদ বলে। সমাসযুক্ত পদের প্রথম অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় পূর্বপদ এবং পরবর্তী অংশ (শব্দ)-কে বলা হয় উত্তরপদ বা পরপদ ।
সমস্ত পদকে ভেঙে যে বাক্যাংশ করা হয়, তার নাম সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। উদাহরণ-বিলাত – ফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন। এখানে বিলাত-ফেরত, রাজকুমার ও সিংহাসন এ তিনটিই - সমাসবদ্ধ পদ। এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া ও রকম বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার,সিংহ চিহ্নিত আসন এগুলো হচ্ছে ব্যাসবাক্য। এসব ব্যাসবাক্যে 'বিলাত’, ফেরত’, ‘রাজা, ‘কুমার,’ ‘সিংহ’, ‘আসন' হচ্ছে এক একটি সমস্যমান পদ। আর বিলাত-ফেরত, রাজকুমার এবং সিংহাসন সমস্ত পদ। বিলাত, রাজা ও সিংহ হচ্ছে পূর্বপদ এবং ফেরত, কুমার ও আসন হচ্ছে পরপদ। -
সমাস প্রধানত ছয় প্রকার : দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু ও অব্যয়ীভাব সমাস ।
[ দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কেও তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেছেন। এদিক থেকে সমাস মূলত চারটি : দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব। কিন্তু সাধারণভাবে ছয়টি সমাসেরই আলোচনা করা গেল। এছাড়া, প্রাদি, নিত্য, অলুক ইত্যাদি কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। সংক্ষেপে সেগুলোরও আলোচনা করা হয়েছে। ]
দ্বন্দ্ব সমাস
যে দ্বন্দ্ব সমাসে কোনো সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে।
বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ, রস, গন্ধ ও স্পর্শ= রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ
কর্মধারয় সমাস
যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন নীল যে পদ্ম নীলপদ্ম। শান্ত অথচ = শিষ্ট শান্তশিষ্ট। কাঁচা অথচ মিঠা = কাঁচামিঠা।
কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়।
১. দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে। যেমন যে চালাক সেই চতুর = চালাক-চতুর। -
২. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে। যেমন – যিনি জজ তিনিই সাহেব = জজ সাহেব।
৩. কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন – আগে ধোয়া পরে মোছা= ধোয়ামোছা ।
৪. পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন – সুন্দরী যেল তা = সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি ।
৫. বিশেষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে,‘মহৎ’ ও ‘মহান’ স্থানে ‘মহা’ হয়। যেমন – মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান, মহান যে নবি = মহানবি ।
৬. পূর্বপদে ‘কু’ বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে ‘কু’ স্থানে ‘কৎ’ হয়। যেমন - কু যে অর্থ = কদর্থ, কু যে আচার কদাচার। =
৭. পরপদে ‘রাজা’ শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে 'রাজ' হয়। যেমন - মহান যে রাজা = মহারাজ।
৮. বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন –সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ, অধম যে নর নরাধম ।=
সাধারণ কর্মধারয়
উপমিত কর্মধারয়
উপমান কর্মধারয়
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
সাধারণ কর্মধারয় সমাস :
অ) বিশেষ্য+ বিশেষ্য :--
এখানে দুটি বিশেষ্য পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে |
যেমন:--
জ্ঞাতি যিনি শত্রুও তিনি = জ্ঞাতিশত্রু
যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ
যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি
আ) বিশেষণ + বিশেষণ :--
এই সমাসে দুটি বিশেষণ ই একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে |
যেমন--
কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )
ই) বিশেষণ + বিশেষ্য ::-
এখানে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ পূর্বপদ - পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে |
যেমন:-
সাধারণ যে জন = জনসাধারণ
পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি
প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় - যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন, সাহিত্য বিষয়ক সভা = সাহিত্যসভা, স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ = স্মৃতিসৌধ, ব্রাহ্মণ ধর্মীয় প্রধান পুরোহিত = ব্রাহ্মণ পুরোহিত, জগতের রক্ষাকারী ঈশ্বর = জগদীশ্বর ।
উপমিত কর্মধারয় : সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে (এ ক্ষেত্রে সাধারণ গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়) এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে। যেমন – মুখ চন্দ্রের ন্যায় = চন্দ্রমুখ। পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ।
রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যমান পদে 'রূপ' অথবা ‘ই’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়। যেমন- ক্রোধ রূপ অনল =ক্রোধানল, বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি= মনমাঝি
আরও কয়েক ধরনের কর্মধারয় সমাস রয়েছে। কখনো কখনো সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে। যেমন অব্যয় : কুকর্ম, যথাযোগ্য। সর্বনাম : - সেকাল, একাল। সংখ্যাবাচক শব্দ : একজন, দোতলা। উপসর্গ : বিকাল, সকাল, বিদেশ, বেসুর ।
উপমান কর্মধারয় : উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোনো বস্তুর তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে। যেমন - ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ = ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলো সাধারণ ধর্ম। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যথা- তুষারের ন্যায় শুভ্র = তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাঙা = অরুণরাঙা।
সাধারণ কর্মধারয়
উপমিত কর্মধারয়
উপমান কর্মধারয়
মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
৩. তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনো বিভক্তি থাকতে পারে; আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ হয়। যেমন বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘কে’ লোপ - পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ ।
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা : দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন ।
ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী। এরকম : গা-ঢাকা, রথদেখা, বীজবোনা, ভাতরাঁধা, ছেলে-ভুলানো (ছড়া), নভেল-পড়া ইত্যাদি ।
তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা : মন দিয়ে গড়া = মনগড়া, শ্রম দ্বারা লব্ধ শ্রমলব্ধ, মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা ।ঊন, হীন, শূন্য প্রভৃতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা : এক দ্বারা উন বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন, জ্ঞান দ্বারা শূন্য = জ্ঞানশূন্য, পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচ কম । = একোন,
উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা : স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত স্বর্ণমণ্ডিত। এরূপ-হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, রত্নশোভিত ইত্যাদি। =
চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে । যথা— গুরুকে ভক্তি গুরুভক্তি, আরামের জন্য কেদারা= আরামকেদারা, = বসতের নিমিত্ত বাড়ি= বসতবাড়ি, বিয়ের জন্য পাগলা বিয়েপাগলা ইত্যাদি। এরূপ-ছাত্রাবাস, = ডাকমাশুল, চোষকাগজ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, হজ্বযাত্রা, মালগুদাম, রান্নাঘর, মাপকাঠি, বালিকা বিদ্যালয়, পাগলাগারদ ইত্যাদি।
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা খাঁচা থেকে ছাড়া = খাঁচাছাড়া, বিলাত থেকে ফেরত = - বিলাতফেরত ইত্যাদি।
সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন : স্কুল থেকে পালানো স্কুলপালানো, জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত ইত্যাদি। এ রকম জেলখালাস, বোঁটাখসা, আগাগোড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত ইত্যাদি। কোনো কোনো সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘এর’ ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। =
যথা— পরাণের চেয়ে প্রিয় পরাণপ্রিয় ৷ = ৫. যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে যষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে যষ্ঠী তৎপুরুষ
সমাস বলে। যথা : চায়ের বাগান = চাবাগান, রাজার পুত্র = রাজপুত্র, খেয়ার ঘাট খেয়াঘাট। অনুরূপভাবে –ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি।
ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজা’ স্থলে ‘রাজ’, পিতা, মাতা, ভ্রাতা স্থলে যথাক্রমে ‘পিতৃ’, ‘মাতৃ’, ‘ভ্রাতৃ’ হয় ৷ যেমন গজনীর রাজা = গজনীরাজ, রাজার পুত্র রাজপুত্র, পিতার ধন = পিতৃধন, মাতার সেবা = = মাতৃসেবা, ভ্রাতার স্নেহ = ভ্রাতৃস্নেহ, পুত্রের বধূ=পুত্রবধূ ইত্যাদি।
পরপদে সহ, তুল্য, নিভ, প্রায়, সহ, প্রতিম – এসব শব্দ থাকলেও যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন - পত্নীর সহ =পত্নীসহ, কন্যার সহ কন্যাসহ, সহোদরের প্রতিম সহোদরপ্রতিম / সোদরপ্রতিম = ইত্যাদি ।
৩. কালের কোনো অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যথা- অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ = পূর্বাহ্ণ।
8. পরপদে রাজি, গ্রাম, বৃন্দ, গণ, যূথ প্রভৃতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে যষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা— ছাত্রের বৃন্দ =ছাত্রবৃন্দ, গুণের গ্রাম=গুণগ্রাম, হস্তীর যূথ হস্তীযূথ ইত্যাদি। =
৫. অর্ধ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন – পথের অর্ধ= অর্ধপথ, দিনের অর্ধ=অর্ধদিন।
৬. শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন – মৃগীর শিশু মৃগশিশু, = ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ ইত্যাদি।
৭. ব্যাসবাক্যে 'রাজা' শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে। যেমন
রাজা = রাজহাঁস।
পথের রাজা=রাজপথ, হাঁসের
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে ) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : গাছে পাকা = গাছপাকা, দিবায় নিদ্ৰা দিবানিদ্রা। এরূপ - বাকপটু, গোলাভরা, = তালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে। যেমন - পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব, পূর্বে অশ্ৰুত = অশ্রুতপূর্ব, পূর্বে অদৃষ্ট = অদৃষ্টপূর্ব।
উপপদ তৎপুরুষ সমাস :
উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে |
বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে, অন্য কোনো পদকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যথা— বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার = বহুব্রীহি। এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি' কোনোটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে।
বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা : আয়ত লোচন যার আয়তলোচনা (স্ত্রী), মহান আত্মা যার মহাত্মা, স্বচ্ছ সলিল যার স্বচ্ছসলিলা, নীল বসন যার = নীলবসনা, স্থির প্রতিজ্ঞা যার = স্থিরপ্রতিজ্ঞ, ধীর বুদ্ধি যার = ধীরবুদ্ধি।
‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ' ও 'সহিত' এর স্থলে ‘স’ হয়। যেমন : বান্ধবসহ বৰ্তমান সলজ্জ, সকল্যাণ ইত্যাদি। = সবান্ধব, সহ উদর যার সহোদর > সোদর। এরূপ– সজল, সফল, সদৰ্প,
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়। যেমন : নদী মাতা (মাতৃ) যার = নদীমাতৃক, বি (বিগত) হয়েছে পত্নী যার = বিপত্নীক। এরূপ -সত্ৰীক, অপুত্রক ইত্যাদি। বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদে ‘অক্ষি' শব্দের স্থলে ‘অক্ষ' এবং ‘নাভি' শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়। যেমন : কমলের
ন্যায় অক্ষি যার কমলাক্ষ, পদ্ম নাভিতে যার=পদ্মনাভ। এরূপ – ঊর্ণনাভ ৷
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘জায়া' শব্দ স্থানে ‘জানি' হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন : যুবতী জায়া যার = যুবজানি (যুবতী স্থলে ‘যুব’ এবং ‘জায়া' স্থলে জানি হয়েছে)। বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘চূড়া' শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’ এবং ‘কর্ম’ শব্দ সমস্ত পদে ‘কর্মা' হয়। যেমন : চন্দ্ৰ চূড়া যার = চন্দ্রচূড়, বিচিত্র কর্ম যার = বিচিত্রকর্মা।
বহুব্রীহি সমাসে ‘সমান' শব্দের স্থানে ‘স’ এবং ‘সহ’ হয়। যেমন : সমান কর্মী যে = সহকর্মী, সমান বৰ্ণ
যার = সমবর্ণ, সমান উদর যাদের = সহোদর।
বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়। যথা : সুগন্ধ যার = সুগন্ধি, পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার = পদ্মগন্ধি, মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার = মৎস্যগন্ধা।
বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ
বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার : সমানাধিকরণ, ব্যাধিকরণ, ব্যতিহার, নঞ, মধ্যপদলোপী, প্রত্যয়ান্ত সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি। অলুক
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন : হত হয়েছে শ্রী যার = হতশ্রী, খোশ মেজাজ যার খোশমেজাজ। এরকম : হৃতসর্বস্ব, উচ্চশির, পীতাম্বর, নীলকণ্ঠ, জবরদস্তি, = সুশীল, সুশ্রী, বদবত, কমবখ্ত ইত্যাদি ।
ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি । যথা : আশীতে (দাঁতে) বিষ যার = আশীবিষ, কথা সর্বস্ব যার = কথাসর্বস্ব।
পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন : দুই কান কাটা যার = দু কানকাটা, বোঁটা খসেছে যার = বোঁটাখসা। অনুরূপভাবে – ছা-পোষা, পা-চাটা, পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া, ধামাধরা ইত্যাদি।
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংশের কোনো অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন : বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর = বিড়ালচোখী, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি। এমনি ভাবে – গায়ে হলুদ, মেনিমুখো ইত্যদি। -
অলুক বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যথা : মাথায় পাগড়ি যার মাথায়পাগড়ি, গলায় গামছা যার= গলায়গামছা (লোকটি)। এরূপ হাতে-ছড়ি, কানে কলম, গায়ে-পড়া, হাতে-বেড়ি, মাথায় ছাতা, - মুখে-ভাত, কানে খাটো ইত্যাদি।
ব্যতিহার বহুব্রীহি
ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয় । যথা : হাতে হাতে যে যুদ্ধ = হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা কানাকানি। এমনি ভাবে – চুলাচুলি, = কাড়াকাড়ি, গালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি, হাসাহাসি, গুঁতাগুঁতি, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।
নঞ বহুব্রীহি
বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ বহুব্রীহি বলে । নঞ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন : ন (নাই) জ্ঞান যার = অজ্ঞান, বে (নাই) হেড যার = বেহেড, না (নাই) চারা (উপায়) যার নাচার। নি (নাই) ভুল যার = নির্ভুল, না = (নয়) জানা যা নাজানা, অজানা ইত্যাদি। এরকম-নাহক, নিরুপায়, নির্ঝঞ্ঝাট, অবুঝ, অকেজো, বে- = পরোয়া, বেহুঁশ, অনন্ত, বেতার ইত্যাদি।
সহার্থক বহুব্রীহি সমাস :
পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে, সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন:--
শ্রদ্ধার সহিত বর্তমান= সশ্রদ্ধ
প্রতিভার সহিত বর্তমান= সপ্রতিভ
বেগের সহিত বর্তমান = সবেগ
চকিতের সহিত বর্তমান= সচকিত
** পূর্বপদ যদি বিশেষণ হয় , তবে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয় না |
যে সমাসে সমস্যমান পদসমূহে পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় এবং উত্তর পদ বিশেষ্য থাকে তাকে দ্বিগু সমাস বলে। অথবা সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদে যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাস সর্বদা সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়।
লক্ষনীয়ঃ পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকলে, ওই শব্দ দিয়ে যদি সমাহার বা সমষ্টি না বোঝায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য না পায়, তবে তা দ্বিগু সমাস নয়। অর্থের দিক থেকে দ্বিগু সমাসে পরপদের অর্থই প্রধান।
সমাসবদ্ধ শব্দটির বিশেষণ হলে বা পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে তৃতীয় কোনো অর্থ প্রাধান্য পেলে তা হবে বহুব্রীহি সমাস। যেমনঃ তে (তিন) পায়া যায় = তেপায়া; দোনলা, ত্রিনয়ন
উভয় পদের অর্থ প্রদান হলে তা হবে দ্বন্দ্ব সমাস। যেমনঃ সাতপাঁচ।
সমষ্টি বা সমাহার না বুঝিয়ে পরপদের অর্থ প্রধান হলেন কর্মধারায় সমাস হয়। যেমনঃ চতুর্দোলা।
দ্বিগু সমাস নির্ণয়ের সহজ উপায়
দ্বিগু সমাসে সাধারণত প্রথম পদটি সংখ্যাবাচক হয় এবং পর পদটি হবে বিশেষ্য।
সমস্তপদটি দ্বারা সমষ্টি বা সমাহার বোঝায় এবং সমস্তপদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমনঃ তে (তিন) মাথার সমাহার = তেমাথা, নব (নয় ) রত্নের সমাহার = নবরত্ন ইত্যাদি।
দ্বিগু সমাস কখনো অ-কারান্ত হলে আ-কারান্ত হলে বা ই-কারান্ত হয়। যেমনঃ শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী। এ রুপ - ত্রিপদী, পঞ্চনদ (নদী নয়)।
অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে
পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে, তবে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে অব্যয়ের অর্থযোগে ব্যাসবাক্যটি রচিত হয়। যেমনঃ
জানু পর্যন্ত লম্বিত (পর্যন্ত শব্দের অব্যয় "আ") = আজানুলম্বিত (বাহু)
মরণ পর্যন্ত = আমরণ।
সামীপ্য, বিপ্সা (পুনঃ পুনঃ অর্থে), অভাব, পর্যন্ত, সাদৃশ্য, অনতিক্রম্যতা, পশ্চাৎ, যােগ্যতা ইত্যাদি অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। “অব্যয়” কথা থেকেই ‘অব্যয়ীভাব’ শব্দ এসেছে। ‘অব্যয়ীভাব’ মানে যা পূর্বে অব্যয় ছিল না, তার অব্যয় রূপ ধারণ।
নিত্যসমাস : যে সমাসে সমস্যমান পদগুলো নিত্য সমাসবদ্ধ থাকে, ব্যাসবাক্যের দরকার হয় না, তাকে নিত্যসমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন : অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, কেবল দর্শন দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ = গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল = বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ, তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।
অলোপ / অলুক সমাস
সমাসবদ্ধ পদ গঠনের পরও যে সমস্ত সমাসে , পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্নের কোনো লোপ ঘটে না, তাকে অলোপ বা অলুক সমাস বলে |
** 'লুক' কথার অর্থ হল 'লোপ' |
যেমন--
মনের মানুষ = মনের মানুষ ( বিভক্তির লোপ হয়নি ) |
উপপদ কাকে বলে?
কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী পদকে ব্যাকরণে উপপদ বলে। যেমন - জলচর পদের 'চর' (অর্থাৎ চরা) কৃদন্ত পদটির পূর্বপদ 'জল' পদটি হল উপপদ।
উদাহরণ--
পঙ্কে জন্মে যে =পঙ্কজ
মুখে থাকে যা =মুখস্থ
গণিত জানেন যিনি =গণিতজ্ঞ
দিবাকর = দিবা করে যে ।
জলচর = জলে চরে যে ।
সূত্রধর = সূত্র ধরে যে ।
খেচর = খ-তে(আকাশে) চরে যে ।
বিজ্ঞ = বিশেষভাবে জানেন যিনি ।
পাদপ = পা দিয়ে পান করে যে ।
শুভদা = শুভ দান করে যে ।
অভ্রভেদী = অভ্র ভেদ করে যে ।
পঙ্কজ = পঙ্কে জন্মে যা ।
ইন্দ্রজিৎ = ইন্দ্রকে জয় করিয়াছে যে ।
যাদুকর = যাদু করে যে ।
নীরদ = নীর দান করে যে ।
মধুকর = মধু করে যে ।
বসুন্ধরা = বসু(ধন) ধরে যে ।
গুপ্তচর = গুপ্তভাবে চরে যে ।
সারদা = সার দেন যে দেবী ।
নৃপ = নৃ(নরগনকে) পালন করেন যিনি ।
সহজ = সহ(সঙ্গে সঙ্গে) জন্মে যাহা ।
রসজ্ঞ = রস জানেন যিনি ।
একদেশদর্শী = এক দেশ দেখে যে ।
মনোমোহী = মনকে মহীত করে যে ।
গোপ = গোপালন করে যে ।
একান্নবর্তী = একান্নে বর্তন করে যে ।
মুখস্থ = মুখে থাকে যে ।
বরদ = বর দান করেন যিনি ।
পয়োধর = পয়ঃ ধারন করে যে ।
পত্রচর = পত্রে পত্রে চরে যে ।
রুচিকর = রুচি করে যে ।
সব্যসাচী = সব্য দারা সচন করেন যিনি ।
মলয়জ = মলয়ে জন্মে যে ।
বোলধরা = বোল ধরিয়াছে যে ।
কাঠঠোকরা = কাঠে ঠোকরায় যে ।
ডানপিতে = ডান্ডা পিটিয়া থাকে যে ।
মনোলোভা = মন লুব্ধ করে যে ।
পুঁথিপড়ো = পুঁথি পড়ে যে ।
দুনিয়াজোড়া = দুনিয়া জুড়ে থাকে যে ।
কুলমজানী = কুল মজায় যে নারী ।
পথিকৃৎ = পথ করেন যিনি ।
পেশকার = পেশ করে যে ।
গিরিশ = গিরিতে শয়ন করেন যিনি ।
ছেলেধরা = ছেলে ধরে যে ।
পকেটমার = পকেট মারে যে ।
বর্ণচোরা = বর্ণ চুরি করে যে ।
মিথ্যাবাদী = মিথ্যা বলে যে ।
বিহগ = বিহায়সে(আকাশে) গমন করে যে।
শত্রুঘ্ন = শত্রুকে বধ করে যে ।
দ্বিপ = দ্বি(দুইয়ের দ্বারা) পান করে যে ।
পারদর্শী = পার(সীমা) দর্শন করে যে ।
হৃদয়হরন = হৃদয় হরন করে যে ।
ভূমিষ্ঠ = ভূমিতে থাকে যে ।
পাসকরা = পাস করিয়াছে যে ।
প্রাদি সমাস : প্র, প্রতি, অনু প্রভৃতি অব্যয়ের সঙ্গে যদি কৃৎ প্রত্যয় সাধিত বিশেষ্যের সমাস হয়, তবে তাকে বলে প্রাদি সমাস। যথা : প্র (প্রকৃষ্ট ) যে বচন = প্রবচন। এরূপ –পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ =অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) ) প্রভাত, প্ৰ (প্ৰকৃষ্ট = রূপে) গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
বাক্যাশ্রয়ী সমাস
কোনো বাক্য বা বাক্যখণ্ড কে সুসংহতরূপে একটি শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য / বিশেষণের রূপ দিলে অথবা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে, একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশ পেলে , তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে |
উদাহরণ :---
গল্পকে বলা (কর্ম তৎপুরুষ), তার প্রতিযোগিতা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) = গল্পবলা-প্রতিযোগিতা
সবুজকে বাঁচাও (কর্ম তৎপুরুষ) , তার জন্য কমিটি (নিমিত্ত তৎপুরুষ) = সবুজ-বাঁচাও-কমিটি
দ্বিরুক্ত অর্থ দুবার উক্ত হয়েছে এমন। বাংলা ভাষায় কোনো কোনো শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ, একবার ব্যবহার করলে যে অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলো দুইবার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সম্প্রসারিত অর্থ প্রকাশ করে। এ ধরনের শব্দের পরপর দুইবার প্রয়োগেই দ্বিরুক্ত শব্দ গঠিত হয়। যেমন— ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে। ' অর্থাৎ ঠিক জ্বর নয়, জ্বরের ভাব অর্থে এই প্রয়োগ
ক) শব্দের দ্বিরুক্তি
১. একই শব্দ দুইবার ব্যবহার করা হয় এবং শব্দ দুটি অবিকৃত থাকে। যথা— ভালো ভালো ফল, ফোঁটা ফোঁটা পানি, বড় বড় বই ইত্যাদি।
২. একই শব্দের সঙ্গে সমার্থক আর একটি শব্দ যোগ করে ব্যবহৃত হয়। যথা— ধন-দৌলত, খেলা- ধুলা, লালন-পালন, বলা-কওয়া, খোঁজ-খবর ইত্যাদি। ৩. দ্বিরুক্ত শব্দ—জোড়ার দ্বিতীয় শব্দটির আংশিক পরিবর্তন হয়। যেমন— মিট-মাট, ফিট-ফাট, বকা-
ঝকা, তোড়জোড়, গল্প-সল্প, রকম-সকম ইত্যাদি ।
৪. সমার্থক বা বিপরীতার্থক শব্দ যোগে। যেমন— লেন-দেন, দেনা-পাওনা, টাকা-পয়সা, ধনী-গরিব,
আসা-যাওয়া ইত্যাদি।
পদের দ্বিরুক্তি
১. দুটি পদে একই বিভক্তি প্রয়োগ করা হয়, শব্দ দুটি ও বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন— ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য করতে লাগল। মনে মনে আমিও এ কথাই ভেবেছি।
২. দ্বিতীয় পদের আংশিক ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু পদ-বিভক্তি অবিকৃত থাকে। যেমন— চোর হাতে নাতে ধরা পড়েছে। আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে ।
পদের দ্বিরুক্তির প্রয়োগ
(ক) বিশেষ্য শব্দযুগলের বিশেষণরূপে ব্যবহার
১. আধিক্য বোঝাতে : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান ৷
২. সামান্য বোঝাতে :আমি আজ জ্বর জ্বর বোধ করছি।
৩. পরস্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে :তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। তুমি বাড়ি বাড়ি হেঁটে চাঁদা তুলেছ।
৪. ক্রিয়া বিশেষণ: ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।
৫. অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই ৷
৬. আগ্রহ বোঝাতে: ও দাদা দাদা বলে কাঁদছে।
(খ) বিশেষণ শব্দযুগলের বিশেষণ রূপে ব্যবহার
১. আধিক্য বোঝাতে: ভালো ভালো আম নিয়ে এসো। ছোট ছোট ডাল কেটে ফেল।
২. তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপি, নরম নরম হাত
৩. সামান্যতা বোঝাতে: উড়ু উড়ু ভাব; কালো কালো চেহারা ।
(গ) সর্বনাম শব্দ
বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে: কে কে এলো? কেউ কেউ বলে।
(ঘ) ক্রিয়াবাচক শব্দ
১. বিশেষণ রূপে : এদিকে রোগীর তো যায় যায় অবস্থা। তোমার নেই নেই ভাব গেল না ।
২. স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে: দেখতে দেখতে আকাশ কালো হয়ে এলো।
৩. ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যেও। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কীভাবে?
৪. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে: ডেকে ডেকে হয়রান হয়েছি।
(ঙ) অব্যয়ের দ্বিরুক্তি
১. ভাবের গভীরতা বোঝাতে : তার দুঃখ দেখে সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি কী করেছ?
২. পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল।
৩. অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে: ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে।
৪. বিশেষণ বোঝাতে পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটি মিটি ।
৫. ধ্বনিব্যঞ্জনা:ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।
যুগ্মরীতিতে দ্বিরুক্ত শব্দের গঠন
একই শব্দ ঈষৎ পরিবর্তন করে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠনের রীতিকে বলে যুগ্মরীতি। যুগ্মরীতিতে দ্বিরুক্ত গঠনের কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যেমন-
১. শব্দের আদি স্বরের পরিবর্তন করে: চুপচাপ, মিটমাট, জারিজুরি।
২. শব্দের অন্ত্যস্বরের পরিবর্তন করে: মারামারি, হাতাহাতি, সরাসরি, জেদাজেদি।
৩. দ্বিতীয়বার ব্যবহারের সময় ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনে : ছটফট, নিশপিশ, ভাতটাত ৷
৪. সমার্থক বা একার্থক সহচর শব্দ যোগে: চালচলন, রীতিনীতি, বনজঙ্গল, ভয়ডর।
৫. ভিন্নার্থক শব্দ যোগে: ডালভাত, তালাচাবি, পথঘাট, অলিগলি।
৬. বিপরীতার্থক শব্দ যোগে: ছোট-বড়, আসা–যাওয়া, জন্ম-মৃত্যু, আদান-প্রদান ৷
ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি
কোনো কিছুর স্বাভাবিক বা কাল্পনিক অনুকৃতিবিশিষ্ট শব্দের রূপকে ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। এ জাতীয় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দুইবার প্রয়োগের নাম ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি। ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি দ্বারা বহুত্ব, আধিক্য ইত্যাদি বোঝায়। ধ্বন্যাত্মক দ্বিরক্ত শব্দ কয়েকটি উপায়ে গঠিত হয়। যেমন-
১. মানুষের ধ্বনির অনুকার ভেউ ভেউ – মানুষের উচ্চস্বরে কান্নার ধ্বনি। এরূপ –ট্যা ট্যা, হি হি ইত্যাদি ।
২. জীবজন্তুর ধ্বনির অনুকার : ঘেউ ঘেউ (কুকুরের ধ্বনি)। এরূপ-মিউ মিউ (বিড়ালের ডাক), কুহু কুহু (কোকিলের ডাক), কা কা (কাকের ডাক) ইত্যাদি।
৩. বস্তুর ধ্বনির অনুকার : ঘচাঘচ (ধান কাটার শব্দ)। এরূপ-মড়মড় (গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ) ঝমঝম (বৃষ্টি পড়ার শব্দ), হু হু (বাতাস প্রবাহের শব্দ) ইত্যাদি।
৪. অনুভূতিজাত কাল্পনিক ধ্বনির অনুকার: ঝিকিমিকি (ঔজ্জ্বল্য)। এরূপ— ঠা ঠা (রোদের তীব্রতা), কুট কুট (শরীরে কামড় লাগার মতো অনুভূতি)। অনুরূপভাবে— মিন মিন, পিট পিট, ঝি ঝি ইত্যাদি।
ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি গঠন
১. একই (ধ্বন্যাত্মক) শব্দের অবিকৃত প্রয়োগ : ধক ধক, ঝন ঝন, পট পট।
২. প্রথম শব্দটির শেষে আ যোগ করে : গপাগপ, টপাটপ, পটাপট ।
৩. দ্বিতীয় শব্দটির শেষে ই যোগ করে: ধরাধরি, ঝমঝমি, ঝনঝনি ।
৪. যুগ্মরীতিতে গঠিত ধ্বন্যাত্মক শব্দ : কিচির মিচির (পাখি বা বানরের শব্দ), টাপুর টুপুর
(বৃষ্টি পতনের শব্দ), হাপুস হুপুস (গোগ্রাসে কিছু খাওয়ার শব্দ)।
৫. আনি-প্রত্যয় যোগেও বিশেষ্য দ্বিরুক্ত গঠিত হয় : পাখিটার ছটফটানি দেখলে কষ্ট হয়। তোমার বকবকানি আর ভালো লাগে না ।
বিভিন্ন পদরূপে ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্ত শব্দের ব্যবহার
১. বিশেষ্য: বৃষ্টির ঝমঝমানি আমাদের অস্থির করে তোলে।
২. বিশেষণ: ‘নামিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়। ’
৩. ক্রিয়া :কলকলিয়ে উঠল সেথায় নারীর প্রতিবাদ ।
৪. ক্রিয়া বিশেষণ : ‘চিকচিক করে বালি কোথা নাহি কাদা
পুরুষ একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ হলো ক্রিয়ার আশ্রয়। ব্যাকরণে এর সাথে স্ত্রী – পুরুষ লিঙ্গবেধে কোন সম্পর্ক নেই। ব্যাকরণের মতে, বিশ্বের সব ব্যক্তি বা বস্তু কোন না কোন ভাবে পুরুষ। যাকে আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, ব্যাকরণে তাকে পুরুষ বলে। সাধারণত বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনামগুলো দ্বারায় বিভিন্ন পুরুুষ বোঝায়। যেমন- আমি, তুমি, সে ইত্যাদি।
প্রথম / উত্তম পুরুষঃ ব্যক্তা নিজের নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহার করে অর্থাৎ, যে পদ দ্বারা উত্তম পুরুষ অর্থাৎ বক্তা নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, আমার ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে, তাকে প্রথম / উত্তম পুরুষ বলে।
অর্থাৎ, স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ। যেমন – আমি, আমরা, আমাদের, আমার।
দ্বিতীয় / মধ্যম পুরুষঃ বাক্যের বক্তা কর্তাকে সম্বোধন করতে যেসব সম্বোধনবাচক শব্দ ব্যবহার করে তাকে, দ্বিতীয় / মধ্যম পুরুষ বলে।
কাউকে কিছু বলবার সময় বক্তা সেই শ্রোতার পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহার করে তাকে মধ্যম পুরুষ বলে। এক কথায় বলা যায়, প্রত্যক্ষপরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাকে মধ্যম পুরুষ বলা হয়।
যেমন – তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমার, তোমাদের, আপনি, আপনারা, তুই, তোকে ইত্যাদি।
মধ্যম পুরুষকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো –
সাধারণ মধ্যম পুরুষ (যেমন- তুমি, তোমরা, তোমাদের, তোমাকে ইত্যাদি)
সম্মানসূচক মধ্যম পুরুষ (যেমন- আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনাদের)
অবজ্ঞাসূচক মধ্যম পুরুষ (যেমন- তুই, তোরা, তোকে)
তৃতীয় / নাম পুরুষঃ আমি বাচক ও তুমি বাচক পদ ব্যতীত অন্য সব বিশেষ্য পদ ও সর্বনাম পদকে তৃতীয় / নাম পুরুষ বলে। অর্থাৎ, অনুপস্থিত পরোক্ষভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ
যেমন – সে, তারা, তার, তিনি, তাহারা ইত্যাদি।
যে সকল শব্দ দ্বারা পুরুষ, স্ত্রী ও অচেতন বস্তুকে চিহ্নিত করা যায়, তাকে লিঙ্গ বলে। লিঙ্গ চার
প্রকার যথা-
1. পুংলিঙ্গ
2. স্ত্রীলিঙ্গ
3. ক্লীবলিঙ্গ
4. উভয় লিঙ্গ
লিঙ্গ প্রসঙ্গে আর একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে
হবে—কেবলমাত্র প্রাণীবাচক শব্দগুলি পুংলিঙ্গ অথবা
স্ত্রীলিঙ্গের পর্যায়ে পড়ে। অপ্রাণীবাচক শব্দ ক্লীবলিগের অন্তর্গত। সংস্কৃত ব্যাকরণে উভয় লিঙ্গ বলে কোন কিছু নেই; কিন্তু ইংরেজি ব্যাকরণে Common Gender অর্থাৎ উভয় লিঙ্গ আছে।
যেসব শব্দ পুরুষ জাতিকে বোঝায়, তাদের পুংলিঙ্গ বলে। যেমন—মানুষ, শিক্ষক, ছাত্র, গোয়ালা, সিংহ
ইত্যাদি।
যেসব শব্দ স্ত্রী জাতিকে বোঝায়, তাদের স্ত্রীলিঙ্গ
বলে। যেমন— মা, ছাত্রী, শিক্ষিকা, সিংহী, ইত্যাদি।
যেসব শব্দ দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কে বোঝানো হয়, তাদের উভয় লিঙ্গ বলে। যেমন- ডাক্তার, শিশু, বহু
কবি, শিল্পী ইত্যাদি।
এমন কিছু শব্দ আছে যাদের দ্বারা পুরুষ অথবা স্ত্রী না বুঝিয়ে অচেতন বস্তুকে বোঝায়, তাদের ক্লীবলিঙ্গ বলে। যেমন—গাছ, ফুল, জামা, বাড়ি, পর্বত, বৃক্ষ
ইত্যাদি।
বচন অর্থ সংখ্যার ধারণা । যা দ্বারা সংখ্যা বুঝায় , তাকে বচন বলে । বচন দু " প্রকার । যথা- একবচন (Singular Number) ও বহুবচন (Plural Number)।
একবচন:- যে বচন দ্বারা একটি মাত্র ব্যক্তি , প্রাণী বা বস্তুকে বুঝায় , তাকে একবচন বলে । যেমন — একটি গরু । একজন ছাত্র । একটি টাকা ।
( ক ) সাধারণত ' এক ’ শব্দ যােগে একবচন নির্দেশ করা হয় । তবে এর সাথে টি , টা , খানা , খানি , থান , গাছি ইত্যাদি প্রত্যয় যােগ করেও একবচন নির্দেশ করা হয় । যেমন একটি কলম । কলমটি । বইখানা । গামছাখানা । চুড়িগাছি ইত্যাদি । আবার শব্দের মূল রূপটি দ্বারাও একবচন বুঝায় । যেমন — গরু , মানুষ , ফল , ফুল ইত্যাদি ।
( খ ) এক বচনে বিভক্তি যােগেও এক বচন বুঝানাে হয় । যেমন – ভাইকে , পিতাকে , মাতাকে ইত্যাদি।
বহুবচন:- যে বচন দ্বারা একের অধিক ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায় , তাকে বহুবচন বলে । যেমন — দু'জন বালক , দশটি গরু , শিশুরা , ছাত্রগণ , বইগুলাে , বৃক্ষরাজি , শিক্ষকবৃন্দ , সম্পাদকমণ্ডলী ইত্যাদি ।
( ১ ) একবচন শব্দের সঙ্গে রা , এরা , গুলাে , গুলি , গণ , বৃন্দ , দিগকে , দেরকে ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত করলে বহুবচন বুঝায় । যেমন-
রা- ছাত্ররা , ধনীরা , গরীবেরা , পাখীরা ইত্যাদি ।
এরা- মানুষেরা , মায়েরা , ঝিয়েরা , বড়লােকেরা ইত্যাদি ।
গুলি- প্রাণীবাচক ও অপ্রাণীবাচক শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত হয় । যেমন- লােকগুলি , আমগুলি , টাকাগুলি ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য- ‘গুলাে' চলতি ভাষায় ব্যবহৃত হয় । যেমন- টাকাগুলাে দিয়ে দাও । মাছগুলাে নিয়ে এস । বইগুলাে আন।
গণ- শিশুগণ , জনগণ , দেবগণ , নর - নারীগণ ইত্যাদি ।
বৃন্দ- শিক্ষকবৃন্দ , ভক্তবৃন্দ , সুধীবৃন্দ , অতিথিবৃন্দ ইত্যাদি ।
মণ্ডলী- শিক্ষকমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী , অভিভাবকমণ্ডলী ইত্যাদি ।
বর্গ- ছাত্রবর্গ , পণ্ডিতবর্গ , প্রজাাবর্গ , রাজন্যবর্গ ইত্যাদি ।
কুল- পক্ষিকুল , মাতৃকুল , কবিকুল , কৃষককুল ইত্যাদি ।
সকল- মনুষ্য সকল , পর্বত সকল , লােক সকল ইত্যাদি ।
নিচয়- পৰ্বত নিচা কুসুম নিচয় , বৃক্ষ নিচয়া ইত্যাদি ।
সব- ভাইসব , পাখীসব , নথিস ইত্যাদি ।
সমূহ- বৃক্ষসমূহ , পর্বতসমূহ , নদীসমূহ , গ্রামসমূহ ইত্যাদি ।
মহল- ছাত্রমহল , রাজনৈতিকমহল , বুদ্ধিজীবীমহল , সাহিত্যিকমহল ইত্যাদি ।
মালা - পর্বতমালা , তরঙ্গমালা ইত্যাদি ।
রাজি - বৃক্ষরাজি , তারকারাজি ইত্যাদি ।
পুঞ্জ – মেঘপুঞ্জ , নক্ষত্রপুঞ্জ , দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি ।
গুচ্ছ - কবিতাগুচ্ছ , ফুলগুচ্ছ , গল্পগুচ্ছ ইত্যাদি ।
দাম - কেশদাম , শৈবালদাম ইত্যাদি ।
রাশি - বালুকারাশি , আবর্জনারাশি ইত্যাদি ।
বলী - পুস্তকাবলী , গুণাবলী , রত্নাবলী ইত্যাদি ।
বিঃ দ্রঃ – পাল ও যুথ কেবল জন্তুর বহুবচনে ব্যবহৃত হয় । যেমন- গরুরপাল , হস্তিযুথ ইত্যাদি ।
যেমন — রাখাল গরুরপাল নিয়ে যাচ্ছে । হস্তিযুথ ফসল নষ্ট করেছে ।
( ২ ) একবচন শব্দের পূর্বে বহুত্ববােধক শব্দ বসিয়ে বহুবচন করা যায় । যেমন — বহু লােক , অনেক ছাত্র , বিস্তর টাকা , নানা কথা , অসংখ্য বাড়ী , অজস্র মানুষ , ঢের খরচ ।
( ৩ ) শব্দের পূর্বে একই বিশেষণ দু'বার ব্যবহার করে বহুবচন করা হয় । যেমন - বড় বড় গাছ , কচি কচি পাতা , লাল লাল ফুল , সাদা সাদা মেঘ , উঁচু উঁচু পাহাড় , কাড়ি কাড়ি লাউ ।
( ৪ ) সংখ্যাবাচক বিশেষণ যােগ করেও বহুবচন গঠন করা যায় । যেমন — দশটি আম , পাঁচশত টাকা , এক হাজার লােক , পনর কেজি চাউল ।
( ৫ ) সর্বনাম পদ দু'বার ব্যবহার করে বহুবচন করা যায় । যেমন – কি কি বই , যে যে বালক , যেখানে যেখানে দরকার , সেই সেই দোকান ইত্যাদি ।
( ৬ ) বিশেষ্য পদ দু’বার ব্যবহার করেও বহুবচন গঠন করা হয় । যেমন- মাঠে মাঠে ধান , ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী , ঘরে ঘরে উৎসৰ , চুলে চুলে মারামারি ইত্যাদি ।
( ৭ ) ক্রিয়াপদের দু’বার প্রয়ােগেও বহুবচন হয় । যেমন— খেটে খেটে মরছি । বলে বলে হানা হলাম ।
( ৮ ) বিশেষ্য পদে একবচনে ব্যবহারেও অনেক সময় বহুবচন বুঝায় । যেমন — বাঘ বনে থাকে । ( একবচন ও বহুবচন দুই - ই বুঝাচ্ছে ) । মাছের বাজারে লােক জমেছে ( বহু লোক ) । বাগানে ফুল ফুটেছে ( বহু ফুল ) ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য– একই সাথে দু'বার বহুবচনবাচক প্রত্যায় বা শব্দের ব্যবহার অশুদ্ধ।যেমন
অশুদ্ধ — সব শিক্ষকেরাই উপস্থিত ছিলেন ।
শুদ্ধ — সব শিক্ষকই উপস্থিত ছিলেন ।
অশুদ্ধ - সব মানুষেরাই মরণশীল ।
শুদ্ধ — সব মানুষ মরণশীল , অথবা মানুষ মরণশীল , অথবা মানুষেরা মরণশীল ।
এইরূপে , এখানে যাবতীয় দ্রব্যসমূহ পাওয়া যায় । এই বাক্য অশুদ্ধ , কিন্তু এখানে যাবতীয় দ্রব্য পাওয়া যায় । এটা শুদ্ধ বাক্য । কেননা যাবতীয় ও সমূহ উভয়ই বহুবচনবাচক শব্দ । তদ্রুপ , অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তিগণ এ মত পােষণ করেন - এটা ভুল , কিন্তু অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তি এ মত পােষণ করেন- এটা শুদ্ধ ।
একবচন : যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী, বস্তু বা ব্যক্তির একটিমাত্র সংখ্যার ধারণা হয়, তাকে একবচন বলে।
যেমন – সে এলো। মেয়েটি স্কুলে যায়নি
বহুবচন : যে শব্দ দ্বারা কোনো প্রাণী, বস্তু বা ব্যক্তির একের অধিক অর্থাৎ বহু সংখ্যার ধারণা হয়, তাকে বহু বচন বলে। যেমন : তারা গেল। মেয়েরা এখনও আসেনি।
কেবলমাত্র বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের বচনভেদ হয়। কোনো কোনো সময় টা, টি, খানা, খানি ইত্যাদি যোগ করে বিশেষ্যের একবচন নির্দেশ করা হয়। যেমন – গরুটা, বাছুরটা, কলমটা, খাতাখানা, বইখানি ইত্যাদি ।
বাংলায় বহুবচন প্রকাশের জন্য রা, এরা, গুলা, গুলি, গুলো, দিগ, দের প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয় এবং সব, সকল, সমুদয়, কূল, বৃন্দ, বর্গ, নিচয়, রাজি, রাশি, পাল, দাম, নিকর, মালা, আবলি প্রভৃতি সমষ্টিবোধক শব্দ ব্যবহৃত হয়। সমষ্টিবোধক শব্দগুলোর বেশিরভাগই তৎসম বা সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত ৷
প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক এবং ইতর প্রাণিবাচক ও উন্নত প্রাণিবাচক শব্দভেদে বিভিন্ন ধরনের বহু বচনবোধক
প্রত্যয় ও সমষ্টিবোধক শব্দ যুক্ত হয়। যেমন-
(ক) রা–কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের সঙ্গে ‘রা’ বিভক্তির ব্যবহার পাওয়া যায়। যেমন- ছাত্ররা খেলা দেখতে গেছে। তারা সকলেই লেখাপড়া করে। শিক্ষকেরা জ্ঞান দান করেন।
যে ধরনের শব্দে ‘রা' যুক্ত, সে ধরনের শব্দের শেষে কোনো কোনো সময় ‘এরা' ব্যবহৃত হয়। যেমন মেয়েরা ঝিয়েরা একত্র হয়েছে। সময় সময় কবিতা বা অন্যান্য প্রয়োজনে অপ্রাণী ও ইতর প্রাণিবাচক শব্দেও রা, এরা যুক্ত হয়। যেমন – ‘পাখিরা আকাশে উড়ে দেখিয়া হিংসায় পিপীলিকারা বিধাতার কাছে পাখা চায়।” কাকেরা এক বিরাট সভা করল। -
(খ) গুলা, গুলি, গুলো প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে যুক্ত হয়। যেমন – অতগুলো কুমড়া দিয়ে কী হবে? আমগুলো টক। টাকাগুলো দিয়ে দাও। ময়ূরগুলো পুচ্ছ নাড়িয়ে নাচছে।
(ক) উন্নত প্রাণিবাচক মনুষ্য শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ
গণ :দেবগণ, নরগণ, জনগণ ইত্যাদি ।
বৃন্দ : সুধীবৃন্দ, ভক্তবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ ইত্যাদি ৷
মণ্ডলী: শিক্ষকমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ইত্যাদি।
বর্গ: পণ্ডিতবর্গ, মন্ত্রিবর্গ ইত্যাদি।
(খ) প্রাণিবাচক ও অপ্রাণিবাচক শব্দে বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ
কুল : কবিকুল, পক্ষিকুল, মাতৃকুল, বৃক্ষকুল ইত্যাদি।
সকল: পর্বতসকল, মনুষ্যসকল ইত্যাদি।
সব : ভাইসব, পাখিসব ইত্যাদি।
সমূহ: বৃক্ষসমূহ, মনুষ্যসমূহ ইত্যাদি।
(গ) অপ্রাণিবাচক শব্দে ব্যবহৃত বহুবচনবোধক শব্দ
আবলি, গুচ্ছ, দাম, নিকর, পুঞ্জ, মালা, রাজি, রাশি। যেমন-গ্রন্থাগারে রক্ষিত পুস্তকাবলি, কবিতাগুচ্ছ, কুসুমদাম, কমলনিকর, মেঘকুঞ্জ, পর্বতমালা, তারকারাজি, বালিরাশি, কুসুমনিচয় ইত্যাদি ।
দ্রষ্টব্য : পাল ও যূথ শব্দ দুটি কেবল জন্তুর বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যেমন - রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে ।
হস্তিযূথ মাঠের ফসল নষ্ট করছে।
সংখ্যাবাচক শব্দ
সংখ্যা মানে গণনা বা গণনা দ্বারা লব্ধ ধারণা। সংখ্যা গণনার মূল একক ‘এক’। কাজেই সংখ্যাবাচক শব্দে এক একাধিক, প্রথম, প্রাথমিক ইত্যাদির ধারণা করতে পারি। যেমন : এক টাকা, দশ টাকা। এক টাকাকে এক এক করে দশবার নিলে হয় দশ টাকা ।
সংখ্যাবাচক শব্দ চার প্রকার
১. অঙ্কবাচক,
২. পরিমাণ বা গণনাবাচক,
৩. ক্রম বা পূরণবাচক ও ৪. তারিখবাচক
১. অঙ্কবাচক সংখ্যা
‘তিন টাকা’ বলতে এক টাকার তিনটি একক বা এককের সমষ্টি বোঝায়। আমাদের একক হলো ‘এক’। সুতরাং এক + এক + এক = তিন। এভাবে আমরা এক থেকে একশ পর্যন্ত গণনা করতে পারি। এক থেকে একশ পর্যন্ত এভাবে গণনার পদ্ধতিকে
বলা হয় দশ গুণোত্তর পদ্ধতি।
এক থেকে দশ পর্যন্ত আমরা এভাবে লিখে থাকি : এক (১), দুই (২), তিন (৩), চার (৪), পাঁচ (৫), ছয় (৬), সাত (৭), আট (৮), নয় (৯), দশ (১০)। এখানে যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোকে বলে অঙ্ক। এক থেকে নয় পর্যন্ত অঙ্কে লিখিত। দশ লিখতে এক লিখে তার ডানে একটি শূন্য (১০) দিতে হয়। এই শূন্যের অর্থ বাম দিকে লিখিত পূর্ণ সংখ্যাটির দশগুণ। এটিই দশ গুণোত্তর প্রণালীর নিয়ম। এ ধরনের প্রতিটি ‘দশ’কে একক ধরে আমরা বিশ বা কুড়ি (২০), ত্রিশ (৩০), চল্লিশ (৪০), পঞ্চাশ (৫০), ষাট (৬০), সত্তর (৭০), আশি (৮০), নব্বই (৯০) পর্যন্ত গণনা করি। তারপরের দশকের একককে বলা হয় একশ (১০০)। এভাবে আমরা দশের গুণন ও এককের সংকলন করে বিভিন্ন সংখ্যা লিখে থাকি। যেমন : এক দশ + এক = এগার (১০+১=১১), এক দশ চার = চৌদ্দ (১০+৪=১৪) ইত্যাদি। এভাবে দশকের ঘরে দুই (২) হলে বলি দুই দশ = বিশ (১০+১০=২০) এবং দুই দশ এক একুশ (১০+১০+১=২১)। এরূপ – তিন দশ + এক = = একত্রিশ, চার দশ + এক = একচল্লিশ ইত্যাদি।
২. পরিমাণ বা গণনা বাচক সংখ্যা
একাধিকবার একই একক গণনা করলে যে সমষ্টি পাওয়া যায়, তা-ই পরিমাণ বা গণনাবাচক সংখ্যা। যেমন— সপ্তাহ বলতে আমরা সাত দিনের সমষ্টি বুঝিয়ে থাকি। সপ্ত (সাত) অহ (দিনক্ষণ) সপ্তাহ। এখানে দিন একটি একক। এরূপ—সাতটি দিন বা সাতটি একক মিলে হয়েছে সপ্তাহ । =
পূর্ণসংখ্যার গুণবাচক সংখ্যা : একগুণ এক। যেমন— একেক্কে এক (অর্থাৎ ১×১=১), এরকম—দুয়েক্কে দুই, = সাতেকে সাত ইত্যাদি। দুই গুণ= দ্বিগুণ বা দুগুণ। যেমন –দুই দু গুণে চার (২×২=৪)।
অনুরূপভাবে, পাঁচ দু গুণে দশ (৫×২=১০), সাত দু গুণে চৌদ্দ (৭x২=১৪)। তিন গুণ = তিরিক্কে। যেমন— তিন তিরিক্কে নয় (৩×৩=৯)।
চার গুণ = চার বা চৌকা। যেমন— তিন চারে বা চৌকা বার (৩X৪=১২) পাঁচ গুণ = পাঁচা। যেমন— পাঁচ পাঁচা পঁচিশ (৫X৫=২৫)।
ছয় গুণ = ছয়ে। যেমন— তিন ছয়ে আঠার (৩২৬=১৮)।
সাত গুণ = সাতা। যেমন— তিন সাতা একুশ (৩×৭=২১) আট গুণ = আটা। যেমন— তিন আটা (বা তে আটা) চব্বিশ (৩৮=২৪)।
নয় গুণ = নং বা নয়। যেমন— তিন নং (বা তিন নয়) সাতাশ (৩X৯=২৭)। দশ গুণ = দশং বা দশ। যেমন— তিন দশং (বা তিন দশে) ত্রিশ (৩x১০=৩০)।
বিশ গুণ = বিশং বা বিশ। যেমন – তিন বিশৎ (বা তিন বিশ) ষাট (৩X২০=৬০)। ত্রিশ গুণ = ত্রিশং বা ত্রিশ। যেমন— তিন ত্রিশং (বা তিন ত্রিশ) নব্বই (৩x৩০=৯০)।
এরূপ— চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই, বা শ'-এর পূরণবাচক সংখ্যা গণনা করা হয়।
পূর্ণসংখ্যার ন্যূনতা বা আধিক্য বাচক ‘সংখ্যা শব্দ'
(ক) ন্যূন
৩. ক্রমবাচক সংখ্যা : একই সারি, দল বা শ্রেণিতে অবস্থিত কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যার ক্রম বা পর্যায় বোঝাতে ক্রম বা পূরণবাচক সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। যেমন— দ্বিতীয় লোকটিকে ডাক। এখানে গণনায় একজনের পরের লোকটিকে বোঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় লোকটির আগের লোকটিকে বলা হয় 'প্রথম' এবং প্রথম লোকটির পরের লোকটিকে বলা হয় দ্বিতীয়। এরূপ— তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি ।
৪. তারিখবাচক শব্দ : বাংলা মাসের তারিখ বোঝাতে যে সংখ্যাবাচক শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে তারিখবাচক শব্দ
বলে।যেমন—পয়লা বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ ইত্যাদি। তারিখবাচক শব্দের প্রথম চারটি অর্থাৎ ১ থেকে ৪ পর্যন্ত হিন্দি নিয়মে সাধিত হয়। বাকি শব্দ বাংলার নিজস্ব ভঙ্গিতে গঠিত।
নিচে বাংলা অঙ্কবাচক, গণনাবাচক, পূরণবাচক ও তারিখবাচক সংখ্যাগুলো দেওয়া হলো
কর্তায় শূন্য
কর্মে ৭মী
কর্মে ২য়া
কর্মে শূন্য
কর্তায় শূন্য
কর্মে ৭মী
কর্মে ২য়া
কর্মে শূন্য
ব্যাকরণে, বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে ক্রিয়ার কর্তা বা কর্তৃকারক বলা হয়।ক্রিয়ার সঙ্গে 'কে' বা 'কারা' যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা কর্তৃকারককে নির্দেশ করে। একে "কর্তাকারক"ও বলা হয়
উদাহরণ: খোকা বই পড়ে। (কে বই পড়ে? খোকা - কর্তৃকারক)। মেয়েরা ফুল তোলে। (কে ফুল তোলে? মেয়েরা - কর্তৃকারক)।
কর্তৃকারকের বহুবিধ প্রকারভেদ বিদ্যমান।
কর্তায় শূন্য
কর্মে ৭মী
কর্মে ২য়া
কর্মে শূন্য
অভিধান অনুসারে বাচ্য কথাটির অর্থ হল ‘বাক্যে ক্রিয়ার সহিত প্রধানভাবে অন্বিত কর্তৃ প্রভৃতি পদ’। ক্রিয়ার যে রূপভেদের মাধ্যমে বোঝা যায় যে বাক্যের ক্রিয়াপদটি কর্তা, কর্ম নাকি ক্রিয়ার ভাবের অনুসারী তাকেই বাচ্য বলা হয়। অন্যভাবে বললে, ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের কর্তা, কর্ম অথবা ক্রিয়ার ভাবের প্রাধান্য সূচিত হওয়াকেই বলে বাচ্য।
সংস্কৃত ব্যাকরণে বাচ্য আট প্রকার। যথা- কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, করণবাচ্য, সম্প্রদানবাচ্য, অপাদানবাচ্য, অধিকরণবাচ্য, ভাববাচ্য এবং কর্মকর্তৃবাচ্য।
কিন্তু বাংলায় বাচ্য চার প্রকার-
১. কর্তৃবাচ্য [Active Voice]
২. কর্মবাচ্য [Passive Voice]
৩. ভাববাচ্য [Neuter Voice]
৪. কর্মকর্তৃবাচ্য[Quasi-Passive Voice]
কোলন ড্যাশ
বিস্ময়চিহ্ন
হাইফেন
উদ্ধৃতিচিহ্ন
গুরুত্বপূর্ণ ১২০টি বাংলা শব্দের শুদ্ধ বানান যা ঘুরেফিরে বিভিন্ন পরীক্ষায় আসে
মধ্যাহ্ন **
সায়াহ্ন **
অন্বেষণ
পূর্বাহ্ণ **
অপরাহ্ণ **
অভ্যন্তরীণ
নিরীক্ষণ
প্রণয়ন
প্রণিপাত
প্রবণ
কল্যাণ
নিক্কণ
মূর্ধন্য
বিপণি
বণ্টন
মনোহারিণী
রূপায়ণ
গণনা
সম্পূর্ণ
ব্যাকরণ
বক্ষমাণ
পরিবহণ
পূণ্য
অরণ্য
স্থাণু
চাণক্য
বাণী
লবণ
ধরন
শূন্য
পুরস্কার ***
পরিষ্কার ***
আবিষ্কার ***
কৃপণ
প্রেরণ
গ্রহণ
ধারণা
তৃণ
লক্ষণ
নিরূপণ
নির্নিমেষ
ক্রন্দন
সূদন
পুরনো
মাণিক্য
গণ
বণিক
গভর্নর
কর্নেল
প্রণয়
রোপণ
পরিমাণ **
ঘণ্টা
লণ্ঠন
প্রতিযোগী **
প্রতিযোগিতা **
সহযোগী
সহযোগিতা
দুর্দিন
দুর্নাম
দুরবস্থা
দুর্নীতি
দুর্ভোগ
দুর্যোগ
দূরীকরণ
অদূর
দূরত্ব
দূরবীক্ষণ
দূর
দূরবর্তী
দুর্বল
দুর্জয়
দুরারোগ্য
দুরাকাঙ্ক্ষা
দুরন্ত
কার্যাবলি
শর্তাবলি
ব্যাখ্যাবলি
নিয়মাবলি
তথ্যাবলি
রচনাবলি
তিরস্কার
তেজস্ক্রিয়
নমস্কার **
পুরস্কৃত
আইসক্রিম
স্টিমার
জানুয়ারি
ফেব্রুয়ারি
প্রাইমারি
মার্কশিট
গ্রেডশিট
আয়ুষ্কাল
আবিষ্কার ***
আয়ুষ্কর
শুষ্ক
বাধাগ্রস্ত
বিপদগ্রস্ত
ক্ষতিগ্রস্ত
হতাশাগ্রস্ত
অঞ্জলি *
গীতাঞ্জলি **
শ্রদ্ধাঞ্জলি **
সোনালি
রূপালি
বর্ণালি
হেঁয়ালি
খেয়ালি
মিতালি
জীবিত
জীবিকা
সজীব
নির্জীব
রাজীব
চাকরিজীবী **
পেশাজীবী **
আইনজীবী **
ক্ষীণজীবী **
অদ্ভুত
ভুতুড়ে
উদ্ভূত
ভূত
ভূতপূর্ব ***
বহির্ভূত ***
ভস্মীভূত
অভিভূত
দূরীভূত***
ব্যাকুল
নিরহংকার
বাক্য শুদ্ধিকরণঃ
আমরা যখন বাক্য লিখি তখন বাক্যের মধ্যে নানা রকমের ভুল হতে পারে। ভুল বাক্য মনের ভাব প্রকাশে সমর্থ হয় না। বাক্য লিখার সময় কিছু বিষয় সতর্ক থাকলে বাক্য শুদ্ধভাবে লিখা যায়।
যেসব বিষয়ে ভুল হতে পারেঃ
১. বাক্যে ব্যবহৃত পদের বানান ভুল হতে পারে।
২. বিশেষ উক্তি ব্যবহারে ভুল হতে পারে।
৩. যতি চিহ্নের ব্যবহার করায় ভুল হতে পারে।
৪. বাগধারার বিকৃত প্রয়োগে বাক্য ভুল হতে পারে।
৫. সাধু রীতি ও চলিত রীতির মিশ্রণে বাক্য ভুল হতে পারে।
৬. বাক্যে বহুবচন একাধিকবার ব্যবহার করায় ভুল জতে পারে।
৭. লিঙ্গ ঘটিত ভউল হতে পারে।
৮. পুরুষ বিন্যাস সঠিক না হওয়ায় ভুল হয়।
৯. ক্রিয়াপদ পুরুষ ও কাল অনুসারে না হলে।
১০. বিভক্তির সঠিক ব্যবহার না করায় বাক্য ভুল হতে পারে।
১১. অনুসর্গের সঠিক ব্যবহার না হলে।
১২. অব্যয় পদের যথার্থ প্রয়োগ ভুল হলে।
১৩. অসমাপিকা ক্রিয়ার অপপ্রয়োগে ভুল হয়।
১৪. পদ বিন্যাস সঠিক না হলে ভুল হয়।
১৫. পদের বাহুল্য প্রয়োগে ভুল হয়।
১৬. একই বাক্যে একাধিক বিষয়ের ভুল থাকতে পারে।
বাংলা ছন্দ:
বাংলা ছন্দ তিন প্রকার:
ক.অক্ষরবৃত্ত
খ.বর্নবৃত্ত
গ.স্বরবৃত্ত
ছন্দ – অন্য নাম – বৈশিষ্ঠ্য
অক্ষরবৃত্ত – কলামাত্রিক বা মিশ্রকলামাত্রিক বা যৌগিক ছন্দ – মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়।
ইহাতে সংযুক্ত বা অসংযুক্ত অক্ষর সমান ধরা হয়।
কেষ্টা=কে (১)+ষ্টা (১)=২ অক্ষর
বর্ণবৃত্ত – কলাবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দ – মূল পর্ব সাধারণত ৬ মাত্রার হয়।
ইহাতে সংযুক্ত অক্ষরকে দুই বর্ণ ধরা হয়।
কেষ্টা=কে(১)+ষ্টা(১+১)=৩ অক্ষর
স্বরবৃত্ত- দলবৃত্ত বা লৌকিক বা ছড়ার ছন্দ – মূল পর্ব মাত্রার সংখ্যা ৪।
ইহাতে কেবল স্বর গণনা করা হয়।
যথা-বাঘের=বা(১)+ঘের(১)=২ স্বর
বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর
১.বাংলা ছন্দ কত রকমের? (২৫ তম বিসিএস)
-তিন
২.যে ছন্দের মূল পর্বের মাত্রা সংখ্যা চার, তাকে বলা হয় – (১৭ তম বিসিএস)
-স্বরবৃত্ত
৩.লৌকিক ছন্দ কাকে বলে? (এলজিইডিতেত সহকারী প্রকৌশলী:০৫)
-স্বরবৃত্তকে
৪.ছেলে-ভুলানো ছড়াসহ সাধারণত কোন ছন্দে লেখা হয়? (তথ্য মন্ত্রণালয়ে অধীন প্রোকৌশলী:০৭)
-স্বরবৃত্ত
৫.বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদী এল বান শিব ঠাকুরের বিয়ে হলো তিন কন্যে দান – কোন ছন্দে রচিত হয়েছে?
-স্বরবৃত্ত
বিভিন্ন ছন্দের রূপ
পয়ার – প্রত্যেক চরণে ১৪ অক্ষর থাকে।
৮ ও ১৪ অক্ষরের পর যতি থাকে।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ – অন্য নাম – প্রবাহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
কবিতার চরণের শেষে মিল থাকে না।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ পয়ারেরই এক প্রকার ভেদ।
মাইকেল মধূসুদন দত্ত বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন।
মিত্রাক্ষর ছন্দ – কবিতার চরণের শেষে মিল থাকে।
অসম ছন্দ – ইহা মিত্রাক্ষর ছন্দ। কিন্তু প্রত্যেক চরণের অক্ষর সংখ্যা অসমান।
চরণের মধ্যে যতির স্থান ইচ্ছাধীন।
রবীন্দ্রনাথ বলাকায় এই ছন্দের প্রবর্তন করেন।
স্বরাক্ষরিক ছন্দ – প্রবর্তক: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত।
পাদপ
উদক
পর্ণী
অটবি
ক্ষরণ
জলপ্রপাত
অনুধ্যান
নিমজ্জন
বিপরীতার্থক শব্দঃ
যে শব্দ অন্য কোন শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বিপরীতার্থক শব্দ বলে।
যেমন—অর্থই অনর্থের মূল।
এখানে অনর্থ অর্থের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করেছে। বিপরীত শব্দ ব্যবহারের ফলে ভাষা সুন্দর ও গতিশীল হয়।
নিচে বিপরীত শব্দের কতিপয় উদাহরণ দেওয়া হলোঃ
# উগ্র-সৌম্য (ডাক বিভাগের পোস্টাল অপারেটর ২০১৬, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন স্কল/সমপর্যায়, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১০, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ১০, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ০৯)
# অর্বাচীন-প্রাচীন (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ২০১৬, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ২০১৫, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ০৭, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক ১১, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক (ইছামতি)’ ১০, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (বেলী) ০৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (শিউলী) ০৯)
# প্রাচী-প্রতীচী (৮ম বিজেএস (সহকারী জজ) ১৩)
# ‘নৈসর্গিক-কৃত্রিম (সাধারণ পুলের আওতায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার, উপসহকারী প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ২০১৬)
# ঔদ্ধত্য-বিনয় (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক ১৩, ৮ম বেসরকারী প্রভাষক নিবন্ধন প্রত্যয়ন পরীক্ষ ১২, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক ১১)
# ক্ষীয়মাণ-বর্ধমান (NSI সহকারী পরিচালক ২০১৫, ২৫তম বিসিএস, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (শাপলা))
# যে শব্দজোড় বিপরীতার্থক নয়: হৃষ্ট-পুষ্ট (৩৫তম বিসিএস)
# উত্তপ্ত শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ: শীতল (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসহকারী প্রকোশীলী ২০১৬)
# আবির্ভাব এর বিপরীত শব্দ-তিরোভাব (১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন স্কুল/সমপর্যায় ২০১৬)
# ‘অলীক’ এর বিপরীত শব্দ-বাস্তব (১৩তম প্রভাষক নিবন্ধন পরীক্ষা কলেজ/সমপর্যায় ২০১৬)
# জঙ্গম-স্থাবর (২৪তম বিসিএস, তথ্য মন্ত্রণালয়ের (গণযোগাযোগ প্রশিক্ষণ) সহকারী পরিচালক ০১, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ০৯)
# বিরক্ত-অনুরক্ত (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ২০১৫)
# গৃহী-সন্ন্যাসী (৩৩তম বিসিএস, খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-খাদ্য পরিদর্শক ১২)
# চঞ্চল-অবিচল (খাদ্য অধিদপ্তরের উপ-খাদ্য পরিদর্শক’১২)
# ঐচ্ছিক-আবশ্যিক (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার আপারেটর ’১১)
# মনীষা-নির্বোধ (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার আপারেটর ’১১)
# প্রসন্ন-বিষণ্ন (প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক (পদ্মা) ’১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (শাপলা) ০৯)
# অনাবিল-আবিল (অর্থ মন্ত্রনালয়ের অফিস সহকারী ১১)
# আকস্মিক-চিরন্তন (রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক ১১)
# ধীর-অধীর (অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী ২০১১)
# নিরাকার-সাকার (প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ২০১২)
# সঙ্কুচিত-প্রসারিত (চতুর্থ বিজেএস ২০০৯)
# শ্রীযুক্ত-শ্রীহীন (অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী ২০১১)
# হিত-অহিত (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনসার ও ভিডিপি অধি.সার্কেল অ্যাড.২০১০)
# নির্মল-পঙ্কিল (প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ২০১২)
# কুটিল-সরল (প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ২০১২)
# অমৃত-গরল(ATEO ২০০৯)
# উৎকর্ষ-অপকর্ষ (অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী ১১)
# হর্ষ-বিষাদ (পরিবার পরিকল্পনা অধি.২০১১)
# অতিকায়-ক্ষুদ্রকায় (তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন গণযোগাযোগ অধি. সহ. তথ্য অফিসার ২০১৩)
# ঝানু-অপটু (খাদ্য অধি. উপ-খাদ্য পরি.২০১২)
# সংশয়-প্রত্যয় (১১তম বিসিএস, পঞ্চম বিজেএস (সহকারী জজ)১০, সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ২০১২)
# পাশ্চাত্য-প্রাচ্য (৯নবম শিক্ষক নিবন্ধন ১৩)
# তাপ-শৈত্য (১৫তম বিসিএস; দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সহকারী পরিদর্শক ০৪)
# চিরন্তন-ক্ষণকালীন (প্রাক.প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক’১৩ সুরমা)
=============================
অশন – অনশন
প্রতিযোগী – সহযোগী
শ্বাস – প্রশ্বাস
সমক্ষ – পরোক্ষ
হর্ষ – বিষাদ
সন্ধি – বিগ্রহ
সার্থক – ব্যর্থ
সদাচার – কদাচার
সমতল – বন্ধুর
হ্রাস – বৃদ্ধি
অনুগ্রহ – নিগ্রহ
অনুলোম – প্রতিলোম
অনুজ – অগ্রজ
অপকার – উপকার
অমৃত – বিষ, গরল
অনুরক্ত – বিরক্ত
অনুরাগ – বিরাগ
অণু – বৃহৎ
অভিজ্ঞ – অনভিজ্ঞ
অন্ত্য – আদ্য
অর্থ – অনর্থ
অসীম – সসীম
অধম – উত্তম
অর্বাচীন – প্রাচীন
অবিরল – বিরল
অধমর্ণ – উত্তমর্ণ
অনুকূল – প্রতিকূল
আসক্ত – বিরক্ত
অর্জন – বর্জন
অর্পণ – গ্রহণ
অলীক – সত্য
অম্ল – মধুর
অগ্র – পশ্চাৎ
অতিকায় – ক্ষুদ্রকায়
আশু – বিলম্ব
আপত্তি – সম্মতি
আকর্ষণ – বিকর্ষণ
আবির্ভাব – তিরোভাব
আদ্য – অন্ত্য
অবনত – উন্নত
অগ্রগামী – পশ্চাৎগামী
আগমন – প্রত্যাগমন
আচার – অনাচার
আবিল – অনাবিল
আস্তিক – নাস্তিক
আঁঠি – শাঁস
ইহ – পরত্র
ঈষৎ – অধিক
উচ্চ – নীচ
উপরোধ – অনুরোধ
উক্ত – অনুক্ত
ঈদৃশ – তাদৃশ
উগ্র – সৌম্য
উৎকর্ষ – অপকর্ষ
উপসর্গ – অনুসর্গ
ঋজু – বক্র
আসামি – বাদী
আবদ্ধ – মুক্ত
উজান – ভাটি
উদ্ধত – বিনীত
ঐহিক – পারত্রিক
করাল – সৌম্য
একমত – দ্বিমত
কর্কশ – কোমল
ক্রোধ – প্রীতি
ক্ষীণ – পুষ্ট
ক্ষয়িষ্ণু – বর্ধিষ্ণু
ক্ষয় – বৃদ্ধি
ক্ষীয়মাণ – বর্ধমান
গরিষ্ঠ – লঘিষ্ঠ
গুপ্ত – ব্যপ্ত
খাতক – মহাজন
গ্রহীতা – দাতা
গৃহী – সন্ন্যাসী
চেতন – জড়
চোর – সাধু
গৌণ – মুখ্য
চয় – অপচয়
চড়াই – উৎরাই
ঘাত – প্রতিঘাত
গুরু – লঘু
জঙ্গম – স্থাবর
জড় – চেতন
তীব্র – লঘু
তামসিক – রাজসিক
তস্কর – সাধু
টাটকা – বাসি
ঝুনা – কাঁচা
জন্ম – মৃত্যু
তিরস্কার – পুরস্কার
দুঃখ – সুখ
দুর্বার – নির্বার
দূর – নিকট
ধূর্ত – সাধু
নীরস – সরস
নশ্বর – শাশ্বত
নিত্য – নৈমিত্তিক
নিরাকার – সাকার
ধবল – কৃষ্ণ
দুর্লভ – সুলভ
নিঃশ্বাস – প্রশ্বাস
নিরর্থক – সার্থক
নিরক্ষর – সাক্ষর
নিরত – বিরত
প্রাচ্য – প্রতীচ্য
বন্ধুর – মসৃণ
পরকীয় – স্বকীয়
বিনীত – গর্বিত
অল্প – বেশি
আয় – ব্যয়
কাঁচা – পাকা
চঞ্চল – স্থির
বাঁচা – মরা
তরুণ – বৃদ্ধ
সত্য – মিথ্যা
স্বাধীন – পরাধীন
নতুন – পুরাতন
ইচ্ছা – অনিচ্ছা
পুরুষ – নারী
শত্রু – মিত্র
দেনা – পাওনা
সুশ্রী – বিশ্রী
নরম – কঠিন
হার – জিত
*****************************
বাগধারা শব্দের অর্থ কথা বলার "বিশেষ ঢং বা রীতি " । এটা এক ধরনের গভীর ভাব ও অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ । বাগধারা বা বাগ্বিধি কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছের বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। সাধারণ অর্থের বাইরে যা বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশকরে থাকে তাঁকে বাগ্বিধি বা বাগ্ধারা বলে । যেমন- অরণ্যে রোদন- অর্থ : নিষ্ফল আবেদন = কৃপণের কাছে চাঁদ চাওয়া অরণ্যে রোদন মাত্র।
প্রবাদ-প্রবচন
পৃথিবীর সকল ভাষাতেই প্রবাদ বা প্রবচনের প্রচলন আছে। বাংলা ভাষাতেও প্রবচনের প্রয়োগ দেখা যায়। প্রবাদগুলিকে এক অর্থে নীতিকথা বা উপদেশও বলা যেতে পারে।
নিম্নে কিছুসংখ্যক প্রবাদ আলোচিত হলোঃ
* উলুবনে মুক্তা ছড়ানোঃ অস্থানে মূল্যবান দ্রব্য প্রদান। (৪২তম বিসিএস)
* সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙেঃ উভয়কুল রক্ষা। (১০ম বিসিএস)
* অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্টঃ বেশি লোক হলে কাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। (১০ম বিসিএস)
* শুণহীনের ব্যর্থ আস্ফালনঃ অসারের তর্জন-গর্জন সার। (১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন ২০১৯)
* মাছি মারা কেরানিঃ বিচারবোধহীন নকলনবিশ। (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রেগ্রামার)
* গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলঃ পাওয়ার আগে ভোগের আয়োজন। (উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ২০১৬)
* পর্বতের মূষিক প্রসবঃ বিপুল উদ্যোগে তুচ্ছ অর্জন। (সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা অফিসার ২০১০)
একাধিক পদ বা উপবাক্যকে একটি শব্দে প্রকাশ করা হলে, তাকে বাক্য সংক্ষেপণ বলে। এটি বাক্য সংকোচন বা এক কথায় প্রকাশেরই নামান্তর।
Read more